শান্তিপূর্ণ ভোট উঠিয়ে আনা কঠিন হবে : সিইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

জানুয়ারি ৬, ২০২৪, ০১:০৩ পিএম

শান্তিপূর্ণ ভোট উঠিয়ে আনা কঠিন হবে : সিইসি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্থানীয়ভাবেই কেবল নয়, আমরা আন্তর্জাতিকভাবে পর্যবেক্ষণ হোক সেটা চাই। - সিইসি।

দ্বাদশ ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার মাত্র ১৬ ঘণ্টা আগে শান্তিপূর্ণ ভোট আয়োজন সম্পন্ন করা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তাঁর মতে, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উঠিয়ে আনা কঠিন হবে। 

শনিবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ভোটের আগের দিন কমিশন কর্তৃক আয়োজিত মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে এমন সংশয় প্রকাশ করেন ভোট আয়োজনকারী সংস্থাটির প্রধান। 

মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার ইসি সচিব ও পররাষ্ট্র সচিব উপস্থিত ছিলেন। দেশি-বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকরা উপস্থিত ছিল। 

বেনাপোল এক্সপ্রেসের আগুনের প্রসঙ্গ টেনে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, “ট্রেনে আগুন দিয়েছে। ভোটকেন্দ্রেও আগুন দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। যারা হরতাল দিয়েছে তারাও বলেছিল তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করবে। আমরা বিশ্বাস করেছিলাম শান্তিপূর্ণভাবে ভোটারদের ভোটবিরোধী প্রচারণা চালাবে।আগুন দেখে আমরা দুঃখ ভারাক্রান্ত। কোনো দল যদি এটি করে থাকে এটি অমার্জনীয় অপরাধ বলে মনে করি।”

আগামীকালের ভোটে কমিশনের কতটা নিয়ন্ত্রণ থাকবে সেটা ভবিষ্যত বলবে বলে মনে করেন সিইসি। তিনি বলেন, “সর্বাত্মক চেষ্টা হচ্ছে। তবে কোনো একটা বিরোধী পক্ষ ভোট বর্জনের পাশাপাশি প্রতিহত করার চেষ্টা করছে। এতে নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে উঠিয়ে আনা কঠিন হবে। আশা করি ভোটাররা আসবে। আরও ৪৮ ঘণ্টা অপেক্ষা করুন, সেটা হয়তো দেখতে পারবেন।”

নির্বাচন কমিশন কি কোনো রাজনৈতিক দল- এমন প্রশ্ন তুলে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, “কমিশনের ওপর আস্থা থাকুক বা না থাকুক দলগুলোর মধ্যে আস্থা আসা উচিত। কোনো বিশেষজ্ঞ কি বলবেন যে, দশ বছর নির্বাচন বন্ধ করুন, দলগুলো সমঝোতায় আসলে ভোট করুন। তাহলে আমি নির্বাচন বন্ধ  করে দেব।”

মার্কিন ভিসানীতির প্রসঙ্গ নিয়ে জাপানি এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এটা কমিশনের দায়িত্ব নয়, কে অংশ নেবে। কমিশন সবাইকে আহ্বান জানাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য। নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য। তারা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) অবাধ, সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বিশ্বাস করে। যারা এক্ষেত্রে বাধা তাদের ওপর এই নীতি প্রয়োগ করবেন। আমরা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করছি না। আমরা জানি না, কারা আগুন দিচ্ছে, মানুষকে হত্যা করছে। আমরা আমাদের জায়গায় থেকে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের চেষ্টা করছি। আমরা এটা নিয়ে চিন্তিত নই। কারণ এটা আমাদের বিষয় নয়। ভিসা কী, পাসপোর্ট কী, অর্থনীতি কী তা আমি বুঝি না। এটা বোঝে পররাষ্ট্র দপ্তর।”

কমিশনের একজন কর্মকর্তাও ভোটগ্রহণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবেন না জানিয়ে তিনি বলেন, “সেই ভোটগ্রহণের মধ্যেই যদি কারচুপি হয়, কিছু দায়ভার আমাদের ওপর আসবে। কেন্দ্রে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী প্রিজাইডিং অফিসার। বারবার তার দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

গণমাধ্যমকর্মীদের দায়ভার নিতে হবে বলে জানান সিইসি। তিনি বলেন, “দায়ভার আপনাদেরও নিতে হবে। কেননা, ভোটকেন্দ্রে মিডিয়ার অবাধ অধিকার থাকবে। তাদেরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। স্বচ্ছতা তুলে ধরতে পারলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে যেতে পারে।”

দ্বাদশ ভোটে সিলেকশন হয়ে গেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “অনেকে সিলেকশন বলছেন, শুধু সিলেকশন নয় আরও কিছু বলছেন। আমি স্পষ্ট করে বলছি, আমাদের কাজ হচ্ছে নির্বাচন আয়োজন করা, রাজনৈতিক বিতর্কে সম্পৃক্ত হওয়া আমাদের কাজ না। এ সংকট রাজনৈতিক।”

গ্রহণযোগ্যতার সুস্পষ্ট কোনো মানদণ্ড নেই বলে মনে করেন কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, “কেউ বলবেন গ্রহণযোগ্য হয়েছে, কেউ বলবেন হয়নি। আপনারা (গণমাধ্যমকর্মী) দৃশ্যমান করে তোলার চেষ্টা করবেন। এতে দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য হবে। গণমাধ্যমের প্রকৃত চিত্র ওঠে আসলেও মানুষ প্রকৃত চিত্র বুঝতে পারবে।”

ভোটগ্রহণের সময় ভোটারদের নিরাপত্তায় আট লাখের বেশি আইন-শৃঙখলা বাহিনীর সদস্য  নিয়োজিত আছে জানিয়ে সিইসি বলেন, “বড় দল ভোট বিরোধী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। শান্তিপূর্ণ হলে আমরা কিছু মনে করবো না। ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য বলবে সেটা অপরাধ। এটাই আমাদের চ্যালেঞ্জ।”

এই নির্বাচনের পর বিরোধী দল কে হবে, সরকার কে হবে তা জানা; এই পরিস্থিতিতে আপনি বিব্রত কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, “এটা আমাদের বিষয় নয়। নির্বাচন হলে তারাই সংসদে সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা এজন্য মোটেই বিব্রত নই।”

সিইসি আরও বলেন, “আমি বলতে চাই আমরা বিশ্বাস করি গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক এবং স্বচ্ছতামূলক নির্বাচন হবে। স্থানীয়ভাবেই কেবল নয়, আমরা আন্তর্জাতিকভাবে পর্যবেক্ষণ হোক সেটা চাই।”

Link copied!