জুলাই ২৯, ২০২৪, ০৯:৪৫ পিএম
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট ১৪ দলের বৈঠকে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী দুই-একদিনের মধ্যেই সরকার বিষয়টি নিয়ে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
সোমবার (২৯ জুলাই) সরকারি বাসভবনে গণভবনে ১৪ দলের বৈঠক শেষে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু।
এর আগে ১৯ জুলাই রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ১৪ দলের সবশেষ বৈঠকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দেশে কারফিউ জারি ও সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১০ দিনের ব্যবধানে আজ আবার জোটের জরুরি বৈঠক আহুত হয়। সেখানেই জামায়াত নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হয়। যদিও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে বহু আগেই জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
গণভবনে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকের শুরুতে বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় যে নাশকতা, অগ্নি সংযোগের ঘটনা ও পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে, এর পেছনে জামায়াত-শিবির রয়েছে। বিষয়টি তার কাছে গোয়েন্দা প্রতিবেদন আছে। এক মাস ধরে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে জামায়াত-শিবিরের প্রশিক্ষিত লোকজনকে ঢাকায় জড়ো করা হয়। তারাই এসব অপকর্ম চালায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখতে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বৈঠকে এরপর শরিক দলের নেতারা একে একে বক্তব্য রাখেন। প্রথমেই ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, “এখনকার রাজনৈতিক অবস্থার বিশ্লেষণ দরকার আছে। জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের বিষয়টি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময়ই এসেছিল। তখন করা হয়নি। এখন বিবেচনায় নেওয়া যায়।”
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু সরাসরিই জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধের প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, “জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার এখনই সময়। তাদের নিষিদ্ধের পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে জনমত গঠনে রাজপথে মিছিল ও সমাবেশ করারও প্রস্তাব দেন।”
সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, “জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধের পাশাপাশি বিকল্প রাজনৈতিক শক্তিগুলোকেও এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।”
জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলামও জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের পক্ষে মত দেন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানমুখী করার ওপরেও জোর দেন তিনি। এ জন্য ধীরে ধীরে মাধ্যমিক স্কুলগুলো খুলে দিয়ে পরীক্ষা শুরুর কথা বলেন তিনি।
তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের জন্য মামলা করেছিলেন বলে উল্লেখ করেন। জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার জোরালো দাবি জানান তিনি।
শেষের দিকে ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুকে সভার সমাপনী টানার কথা বলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু তিনি বলেন, “বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ এবং তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারই করা উচিত।”
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী সভার সমাপনী টানতে গিয়ে বলেন, ১৪ দলের নেতাদের সুপারিশ থেকে এটা স্পষ্ট যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা ও দেশে শান্তি বজায় রাখার স্বার্থে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা দরকার। ১৪ দলের নেতাদের পরামর্শে এই সিদ্ধান্ত নিতে তিনি একমত।
প্রধানমন্ত্রী এটাও জানান যে, আগামী বুধবারের মধ্যেই প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করবে সরকার।