আগস্ট ১০, ২০২৪, ০২:০০ পিএম
এবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ছয়জন কংগ্রেস সদস্য।
গত ৭ আগস্ট মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও অর্থমন্ত্রী ইয়েরেনকে লেখা এক চিঠিতে এই আহ্বান জানান তারা। এ ছাড়া সরকারি চাকরিতে কোটা বৈষম্যের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার ঘটনা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ অন্যান্য ইস্যুতে গভীর উদ্বেগ জানান তারা।
সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদের ৬ সদস্য বলেন, “শেখ হাসিনা সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় তারা গভীর উদ্বেগ জানান। সরকারি চাকরিতে অন্যায্য কোটা বৈষম্যের প্রতিবাদে শুরু হওয়া শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমনে গত ১৫ জুলাই পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করে আওয়ামী লীগ। পরবর্তী সপ্তাহ জুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অসঙ্গতিপূর্ণ ও বেআইনি বলপ্রয়োগ করে। শিক্ষার্থীদের দমনে রাবার বুলেট, ছররা গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও তাজা গুলি নিক্ষেপ করে।”
ছয়জন আইনপ্রণেতা বলেন, “এসব ঘটনা বিস্তৃত পরিসরে ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের চালানো দমন-পীড়নেরই অংশ। নিজেদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় দলটির নেতাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হয়নি। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, তবু তাদের জবাবদিহির প্রয়োজনীয়তা রয়ে গেছে।”
এ-অবস্থায় ‘গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি হিউম্যান রাইটস অ্যাকাউন্টিবিলিটি অ্যাক্ট’-সহ প্রয়োগোপযোগী সব আইনের আওতায় ওবায়দুল কাদের ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানান কংগ্রেস সদস্যরা।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ১৫ জুলাই সহিংস দমন অভিযানের পর শেখ হাসিনা দেশব্যাপী কারফিউ জারি করেন। ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ একে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন বলে মনে করে। আন্দোলনে বেশির ভাগ সহিংসতার জন্য দায়ী দুই বাহিনী- পুলিশ ও বিজিবি। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এর দায়ভার আসাদুজ্জামান খান কামালের।
এর মধ্যেই আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা করতে ছাত্রলীগকে পাঠান। সেই সঙ্গে ‘দেখামাত্র গুলি’র নির্দেশ দেন তিনি। সহিংসতায় অন্তত ২০০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হন কয়েক হাজার। নিহতদের প্রকৃত সংখ্যা সম্ভবত আরও বেশি। এ ছাড়া ছাত্র আন্দোলনের নেতাসহ ১০ সহস্রাধিক লোককে পুলিশ আটক-গ্রেপ্তার করে; নানা অভিযোগে আসামি করে দুই লাখ লোককে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ভাষায়, এটি ছিল ‘উইচ হান্ট’। বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ আরেকবার বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন ও জোরপূর্বক গুমে জড়িয়ে পড়তে পারে বলে সতর্ক করে দেয় হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
কংগ্রেস সদস্যরা চিঠিতে জানান, শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু হলে ৪ আগস্ট আওয়ামী লীগ বিক্ষোভকারীদের ওপর নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন চালায়। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালাতে ওবায়দুল কাদের ও আসাদুজ্জামান খান কামাল আবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দেন। এর ফলে সৃষ্ট সহিংসতায় ওই দিন প্রায় ১০০ লোক নিহত হন। শেখ হাসিনা আবার দেশব্যাপী কারফিউ জারি করেন এবং বন্ধ করে দেওয়া হয় যোগাযোগ ব্যবস্থা। এতে বাংলাদেশি-আমেরিকানরা তাদের স্বজনদের সঙ্গে আরও একবার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে থাকা নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস জরুরি ভিত্তিতে বিশ্বনেতাদের প্রতি বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ‘অসম্মানজনক কাজে’ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে গেলেও ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কোনও পরিণামের সম্মুখীন হতে হয়নি।
এই আইনপ্রণেতারা বলেন, ‘র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপ বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধে সফলতা এনেছে। তবে, বর্তমান বাস্তবতায় এটাই যথেষ্ট নয়। ওবায়দুল কাদের ও আসাদুজ্জামানের ওপর সুনির্দিষ্টভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে প্রয়োগযোগ্য সব ক্ষমতা খাটিয়ে আওয়ামী লীগের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় শক্ত জবাব দেওয়ার আহ্বান জানাই আমরা। ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের আইনের আওতায় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।’
চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন লয়েড ডগেট, এডওয়ার্ড জে মার্কি, উইলিয়াম আর কিটিং, ক্রিস ভন হলেন, জেমস পি ম্যাকগভার্ন ও অল গ্রিন।