ছবি: সংগৃহীত
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেপথ্যে থেকে যে কয়জন কাজ করেছে তার মধ্যে নাসির উদ্দিন পাটোয়ারি অন্যতম। সীমান্ত হত্যা বন্ধের দাবিতে নিয়ে রাজুতে অবস্থান নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনায় আসেন সেই ২০২০ সালেই। বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টি মুখ্য সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তবে নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারীর ঢাকার আসন থেকে নির্বাচন করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এখনও সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি ঠিক কোন আসন থেকে নির্বাচন করবেন তিনি। ঢাকা ১৭ ও কিংবা ঢাকা ১৫ থেকে নির্বাচন করার পরিকল্পনা রয়েছে তার। তবে সবকিছু ঠিক থাকলে ঢাকা ১৫ থেকে নির্বাচন করতে পারেন তিনি। যেই আসনটি মূলত কাফরুল ও মিরপুরের বিভিন্ন ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত।
ঢাকা ১৫
ঢাকা ১৫ আসনটিতে আওয়ামী লীগের নেতা কামাল আহমেদ মজুমদারের একক কর্তৃত্ব ছিল। কেননা সীমানা পরিবর্তনের পর এই আসনে ২০০৮ সাল থেকেই প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছে। এর আগে এই নির্বাচনী অঞ্চলটি ঢাকা ১০ ও ঢাকা ১৪ এর সাথে যুক্ত ছিল। ঢাকা-১৫ আসনটি ঢাকা শহরের ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ০৪, ১৩, ১৪ ও ১৬ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। এদিকে বিএনপির শক্তিশালী কোন প্রার্থী না থাকায় এই আসনটি অনেকটাই ফাঁকা বলা যায়।
বর্তমানে ঢাকা উত্তরর ১৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আহসানউল্লাহ চৌধুরী হাসান এই আসনে বিএনপির প্রার্থী। এর আগে ২০১৮ সালের বিএনপি জোটের হয়ে ড. শফিকুর রহমান এই আসনে লড়াই করেন। তিনি বর্তমানে জামায়াতে ইসলামীর আমির। জামায়াত ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার ঘোষণা করলেও ঢাকা ১৫ থেকে তিনি নির্বাচন করছেন না বলে জানা গেছে।
বর্তমানে বিএনপির কিংবা তাদের দলীয় জোটের সম্ভাব্য প্রার্থী এখনও চূড়ান্ত নয়। ২০১৮ সালে বিএনপির হয়ে এই আসনে লড়েছেন বর্তমান জামায়াতের আমির ড. শফিকুর রহমান। তবে বর্তমানে বিএনপির হেবিওয়েট প্রার্থী নেই এই আসনে ২০০৮ সালের নির্বাচনে লড়াই করা হামিদউল্লাহ খান মারা যান ২০১১ সালে। বর্তমানে কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সম্পাদক মামুন হাসান ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক সদস্য ও কাউন্সিলর আহসান উল্লাহ চৌধুরি হাসান নমিনেশনের জন্য থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে।
ভোটের চিত্র
ঢাকা ১৫ আসনে ২০২৪ সালের নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৫০৭। বিএনপি এই নির্বাচন অংশ না নেয়ার কারনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কামাল আহমেদ মজুমদার জয় লাভ করেন। তবে সেই নির্বাচনে সবচেয়ে কম ভোট পড়েছিল এই আসনে। রাজধানী ঢাকার এ আসনে ভোট পড়েছে ১৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। আওয়ামী লীগের কামাল আহমেদ মজুমদারের পাওয়া ভোটের সংখ্যা ৩৯ হাজার ৬৩২। আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির মো. সামছুল হক। তিনি ভোট পেয়েছেন ২ হাজার ৪৪।
তবে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জয়ী হন কামাল আহমেদ মজুমদার। আওয়ামী লীগের কামাল আহমেদ মজুমদার ১ লাখ ৭৫ হাজার ১৬৭ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দী বর্তমানে জামায়াতে আমি মো. শফিকুর রহমান ৩৯ হাজার ৭১ ভোট পান।
এদিকে ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচন অংশ না নিলে এই আসনে কামাল আহমেদ মজুমদার একক কর্তৃত্ব স্থাপন করেন। সে নির্বাচনে কামাল আহমেদ মজুমদার পান ৩০ হাজার ৯৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী হাতী প্রতিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী এখলাস উদ্দিন মোল্লা পান ৩ হাজার ৩০৯ ভোট।
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কামাল আহমেদ মজুমদার পান ১ লাখ ২০ হাজার ৭৮০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী বিএনপি নেতা হামিদুল্লাহ খান পান ৭৭ হাজার ৮১ ভোট।
মূলত ২০০১ সালের বাংলাদেশ আদমশুমারিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি লক্ষ করার পর, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের পূর্বে জনসংখ্যার পরিবর্তন প্রতিফলিত করার জন্য সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনঃনির্ধারণ করে এই নির্বাচনী আসন সৃষ্টি করে। ফলে এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কামাল আহমেদ মজুমদারের একক কর্তৃত্ব থাকে। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, জমিদখলের অভিযোগ থাকলেও বিকল্প কোন প্রার্থী না থাকায় এই আসনে এখনও কোন ক্লিন ইমেজের নেতা গড়ে ওঠেনি।
নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারির জন্ম-বৃত্তান্ত
নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারির জন্ম চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৩-১৪ সেশনের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির একজন সমন্বয়ক। ২০২০ সালে সীমান্ত হত্যা বন্ধের দাবিতে নিয়ে রাজুতে অবস্থান নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনায় আসেন। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ইস্যুতে সরব ভূমিকায় দেখা যায় তাকে। সব মিলিয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের পর নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক ও পরে জাতীয় নাগরিক পার্টির মূখ্য সমন্বয়কের মত গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছে তিনি।
এদিকে জুলাই অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ ছিল মিরপুর অঞ্চল। মূলত মিরপুরের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষেরা প্রতিরোধ গড়ে তোলার পাশাপাশি সক্রিয় আন্দোলনে অংশ নেয়। ফলে এই আসনে জুলাই অভ্যুত্থানের ইস্যুটি কাজে লাগাতে চাইবে প্রার্থীরা। সেদিন থেকে নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারি এখন পর্যন্ত এগিয়ে আছে। বর্তমানে কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সম্পাদক মামুন হাসান ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক সদস্য ও কাউন্সিলর আহসান উল্লাহ চৌধুরি হাসান নমিনেশনের জন্য থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে।