নেতাকর্মীদের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ ওবায়দুল কাদেরের

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই ১৭, ২০২৪, ০৩:১৬ পিএম

নেতাকর্মীদের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ ওবায়দুল কাদেরের

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে চলমান আন্দোলনে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির নেতাকর্মীরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দলের নেতাকর্মীদের তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন, “আমাদের অস্তিত্বের প্রতি হামলা এসেছে, হুমকি এসেছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলা আমাদের করতেই হবে। আপনারা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রস্তুত হয়ে যান।”

বুধবার (১৭ জুলাই) দুপুরে ঢাকা জেলা ও মহানগর (উত্তর-দক্ষিণ) আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি। তেজগাঁও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “সাধারণ শিক্ষার্থীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কেন রাস্তাঘাট দখল করতে যাবে, সহিংসতায় জড়াবে? এই আন্দোলনের নেতৃত্ব নিঃসন্দেহে অশুভ শক্তির হাতে চলে গেছে। সেই অবস্থায় আমরা নিশ্চুপ থাকতে পারি না।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করি, লালন করি, বিশ্বাস করি, সেই চেতনায় বিশ্বাসীরা; আমরা চুপ করে বসে থাকতে পারি না। আমাদের অস্তিত্বের প্রতি হামলা এসেছে, হুমকি এসেছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলা আমাদের করতেই হবে। কাজেই আপনারা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রস্তুত হয়ে যান। এখানে বেশিক্ষণ আপনাদের ধরে রাখতে চাই না। যার যার এলাকায় (চলে) যান, আজকেও তাদের ভয়াবহ তাণ্ডব সৃষ্টির এজেন্ডা আছে, বিধ্বংসী এজেন্ডা আছে।”

ওবায়দুল কাদের বলেন, “এখানে শুধু পুলিশের শক্তি নয়, আমাদের দল, দলের যে শক্তি। যে শক্তি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ করেছে, যে শক্তি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতন্ত্রকে শৃঙ্খলমুক্ত করেছে, সেই শক্তি হলো আওয়ামী লীগ। আমাদের এই শক্তিকে আজ কাজে লাগাতে হবে। আমাদের যার যার দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে হবে।”

দলের নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশনা দিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, “সারা দেশে আমাদের সব নেতাকর্মীকে নেত্রীর (শেখ হাসিনা) পক্ষ থেকে নির্দেশ দিচ্ছি, সারা দেশে সতর্ক হয়ে শক্ত অবস্থান নিয়ে এই অশুভ অপশক্তিকে প্রতিহত করতে হবে। কোনও অপশক্তির সঙ্গে আপস করা যাবে না।”

ওবায়দুল কাদের বলেন, “বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল সাহেব দম্ভ করে বলেছেন, আমরা যা পারিনি, ছাত্ররা তা করে দেখিয়েছে। এতে বোঝা যায়, কোটার দাবিতে তারা নামেনি। তারা নির্বাচিত সরকারকে হটাতে চায়। ক্ষমতা দখলের জন্য কতটা মরিয়া হলে তারা শিশু-কিশোরদের মিছিল ব্যবহার করে। ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির কর্মীদের উসকানিমূলক শ্লোগান, তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের স্ট্যাটাস আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে পরিণত করেছে।”

মন্ত্রী বলেন, “বিএনপির এক নেতার ফোনালাপের অডিও ক্লিপ থেকে বোঝা গেছে, ছাত্রদল ক্যাডারদের হামলার নির্দেশ দিচ্ছে। এতে প্রমাণ হয়, সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবেগকে পুঁজি করে বিএনপি-জামায়াত আবারও সহিংসতার পথে হাঁটছে। তারা তাদের সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী সারা বাংলাদেশ থেকে এনে এই শহরে গুপ্তহত্যা করা শুরু করেছে। আরও অনেক বাজে পরিস্থিতি, ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টির আহ্বান জানাচ্ছে, উসকানি দিচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই বিষয়গুলো আমরা জানতে পেরেছি।”

তারা (বিএনপি) সারা দেশ থেকে ক্যাডার বাহিনী, প্রশিক্ষিত সন্ত্রাসীদের ঢাকায় এনেছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “নাশকতা ও নৈরাজ্যজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিএনপির পল্টন কার্যালয়ে গতকাল রাতে ৫-৬ বোতল পেট্রোল, বিপুল সংখ্যক লাঠিসোটা, ৬০টি দেশি-বিদেশি অস্ত্র, শতাধিক ককটেল জড়ো করেছিল, যা পুলিশের তল্লাশিতে উদ্ধার করা হয়।”

এ সময় শিক্ষার্থীদের মা-বাবার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আপনাদের প্রাণপ্রিয় সন্তানদের এ ধরনের আত্মবিধ্বংসী কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রাখেন। কারণ বিএনপি-জামায়াতের সশস্ত্র ক্যাডাররা এই আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করেছে। এই সশস্ত্র ক্যাডাররা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মিশে গিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা চরিতার্থ করার জন্য হত্যা, গুপ্ত হত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। অভিভাবকদের অনুরোধ করবো, আপনাদের সন্তানদের বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডার বাহিনীর এই আন্দোলন থেকে দূরে রাখেন।”

সেতুমন্ত্রী বলেন, “কোনও অপশক্তির সঙ্গে আপস করা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধীদের আমরা কোনও ছাড় দেবো না, স্বাধীনতাবিরোধীদের আমরা কোনও ছাড় দেবো না। বিএনপি জামায়াত যদি মনে করে এসব করে তারা ছাড় পাবে, তবে তাদের বলতে চাই, কোনও ছাড় আওয়ামী লীগ দেবে না।”

আমরা সবসময় ছাত্রসমাজের দাবির প্রতি সহনশীল উল্লেখ করে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আমাদের রাষ্ট্রের অভিভাবক। সবার যৌক্তিক দাবি তার বিবেচনায় রয়েছে। আমরা আন্দোলনকারীদের বলবো, আইনের পাশে থাকুন। সর্বোচ্চ আদালতের নির্ধারিত তারিখের শোনানির জন্য অপেক্ষা করুন। ধৈর্য ধারণ করুন। কোনও অপশক্তির উসকানি বা ষড়যন্ত্রে পা দেবেন না। ফাঁদে পা না দিয়ে অপেক্ষা করুন। তরুণ প্রজন্মের কাছ থেকে দায়িত্বশীল আচরণ আশা করি।”

ওবায়দুল কাদের বলেন, “ভুলে গেলে চলবে না, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের পূর্বপুরুষরা স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছে। বঙ্গবন্ধুর কন্যার নেতৃত্বে বিশ্ব পরিমণ্ডলে আজ বাংলাদেশ একটি মর্যাদাশীল, উন্নয়নশীল জাতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।”

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “সাধারণ শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে দেশের অর্জিত গণতন্ত্র উন্নয়ন-অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়। আসুন আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সর্বশক্তি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সব শক্তি নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলি।”

এ সময় আরও ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, শাজাহান খান, কামরুল ইসলাম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী মোজাম্মেল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজমসহ আরও অনেকে।

Link copied!