তোফায়েল আহমেদের শারীরিক অবস্থার ‘কিছুটা উন্নতি, চোখ খুলেছেন’

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

অক্টোবর ৬, ২০২৫, ০৬:৩৩ পিএম

তোফায়েল আহমেদের শারীরিক অবস্থার ‘কিছুটা উন্নতি, চোখ খুলেছেন’

ছবি: সংগৃহীত

ষাটের দশকের ছাত্ররাজনীতির উজ্জ্বল নক্ষত্র, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান আর একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের অগ্রসৈনিক, আওয়ামী লীগের এক সময়ের প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের শারীরিক অবস্থার ‘কিছুটা উন্নতি’ হয়েছে।

স্কয়ার হসপিটালস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইউসুফ সিদ্দিক সোমবার বলেন, তোফায়েল আহমেদ এখনো লাইফ সাপোর্টে আছেন। তবে তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সাড়া দিচ্ছে।

“উনার অবস্থা এখনো খুবই ক্রিটিক্যাল। তবে এখনো হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস ৩০ শতাংশের মতো কাজ করছে। অন্যান্য অঙ্গও কাজ করছে। এ অবস্থায় চিকিৎসকরা তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যান। তার বেলায়ও চিকিৎসকরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।” খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

এদিন বিকালে হাসপাতালে তোফায়েল আহমেদকে দেখে এসে তার ভাইয়ের মেয়ে শামীমা আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, “ওনার অবস্থা এখন ভালো, উনি চোখ খুলেছেন, কথা বলার চেষ্টাও করেছেন।”

বার্ধ্যক্যজনিত নানা জটিলতা নিয়ে প্রায় ১১ দিন থেকে স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তোফায়েল আহমেদ।

শনিবার রাতে তার মৃত্যুর খবর দেয় কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম। তবে খবরটি সত্য নয় বলে জানান, স্কয়ার হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইউসুফ সিদ্দিক।

তোফায়েল আহমেদের ব্যক্তিগত সহকারী আবুল খায়ের বলেন, “কয়েক দিনের তুলনায় ওনার অবস্থা উন্নতির দিকে। আজকে তুলনামূলকভাবে বেশ উন্নতি হয়েছে।”

পরিবারের এক সদস্য বলেন, কয়েক বছর ধরেই হুইলচেয়ারে চলাফেরা করেন তোফায়েল আহমেদ। স্ট্রোকের কারণে তার শরীরের একাংশ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যায়। বাঁ হাত ও পা অবশ হয়ে পড়ায় তিনি চলাফেরা অক্ষম হয়ে পড়েন।

১৯৪৩ সালের ২২ অক্টোবর ভোলা জেলার সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের কোড়ালিয়া গ্রামে তোফায়েল আহমেদের জন্ম। বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মৃত্তিকাবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন।

১৯৬৮-৬৯ এর উত্তাল সময়ে তোফায়েল ছিলেন ডাকসুর ভিপি। সে হিসেবে তিনি সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে তিনি ছিলেন ছাত্রসমাজের নেতৃত্বের ভূমিকায়।

প্রবল গণ আন্দোলনে পাকিস্তান সরকার ১৯৬৯ সালে শেখ মুজিবুর রহমানসহ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সকল আসামিকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ওই বছর ২৩শে ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক জনসভার আয়োজন করে।

লাখো জনতার সেই সমাবেশে শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। আর সেই উপাধি ঘোষণা করেন তোফায়েল আহমেদ।

১৯৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হন তোফায়েল। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তিনি ছিলেন মুজিব বাহিনীর অঞ্চলভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্ত চার প্রধানের একজন।

স্বাধীন বাংলাদেশে ৯ বার জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তোফায়েল আহমেদ। সর্বশেষ তিনি ভোলা-১ আসনের এমপি ছিলেন।

দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে পরে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হন তোফায়েল আহমেদ। বর্তমানে তিনি দলের উপদেষ্টা পরিষদের একজন সদস্য।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় তোফায়েল আহমেদকে নিজের রাজনৈতিক সচিবের দায়িত্ব দেন।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলে বঙ্গবন্ধুর মেয়ে শেখ হাসিনা তার সরকারের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন তোফায়েলকে। পরে ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আবারও তিনি বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

Link copied!