মার্চ ৯, ২০২৪, ০২:১০ পিএম
৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সঙ্গে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের যুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধের শুরু থেকেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলকে সহায়তা করে আসছেন। ইসরায়েলকে অন্ধভাবে সমর্থন দেওয়ার ফলে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এদিকে হামাস-ইসরায়েলের এই যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যমে ভুল ও ব্যাপক পক্ষপাতমূলক খবর প্রকাশ করেছে। সম্প্রতি দেশটির মুসলিম কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠান দ্য সেন্টার ফর মিডিয়া মনিটরিংয়ের (সিএফএমএম) প্রতিবেদনে বিষয়টি জানানো হয়।
প্রতিবেদনে গাজা যুদ্ধ শুরুর পর এক মাসের খবর বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এ জন্য যুক্তরাজ্যের সাতটি ও আন্তর্জাতিক তিনটি সম্প্রচারমাধ্যমের ১ লাখ ৮০ হাজার ভিডিও ক্লিপ এবং ২৮টি ব্রিটিশ নিউজ সাইটের ২৬ হাজার আর্টিকেল ব্যবহার করা হয়েছে।
১৫৭ পৃষ্ঠা সংবলিত প্রতিবেদনে যুক্তরাজ্যের ডানপন্থী সম্প্রচারমাধ্যম ও প্রকাশনায় ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভকারীদের ইহুদিবিরোধী অথবা হামাসের সমর্থক হিসেবে দেখানো হয়েছে। এছাড়া লাইভ সম্প্রচারে ফিলিস্তিনিদের হেনস্তারও সুযোগ পেয়েছে ইসরায়েলি প্রতিনিধি ও সমর্থকরা। এসময় উপস্থাপকদের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিরোধ দেখা যায়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিলিস্তিনের পতাকার মতো ফিলিস্তিনি প্রতীককে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যমগুলোতে ইহুদিবিরোধী হিসেবে দেখানো হয়েছে। একই সঙ্গে ক্রমবর্ধমান ইসলামবিদ্বেষকেও তুলে ধরা হয়েছে। যেমন অনেক খবরে বলা হয়েছে, ফিলস্তিনিদের সমর্থকরা বিপজ্জনক। কারণ তারা মুসলিম।
আরও বলা হয়, যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যমগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে ইসরায়েলের সমর্থনে অনেক ভুল তথ্য ছড়িয়েছে। সেখানে ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর বছরের পর বছর ধরে চলা ইসরায়েলি নিপীড়ন ও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখলের প্রেক্ষাপটকে তুলে ধরা হয়নি।
যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত এসব প্রতিবেদন দেখে মনে হয়েছে, দ্বন্দ্বের শুরু ৭ অক্টোবর থেকে। সেদিন থেকেই ইসরায়েল গাজা দখল করেছে। তবে ২০০৫ সালেও সেখানে ইসরায়েলি সেনাদের উপস্থিতি ছিল। বিষয়টি উঠে আসেনি।
এমনও প্রতিবেদন দেখা গেছে যেখানে ব্রিটিশ সম্প্রচারমাধ্যমগুলো ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে কথা বলেছে। একটি সম্প্রচারমাধ্যমে বলা হয়েছে, পশ্চিম তীর দখল করেছে ফিলিস্তিনিরা। তবে এসব জায়গায় আন্তর্জাতিক আইনের বিষয়টি তুলে ধরা হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভুল তথ্য ও গুজব বিদ্বেষ ছড়ায়। আর এই যুদ্ধকে ইহুদি ও মুসলিমদের মধ্যে একটি ধর্মীয় যুদ্ধ হিসেবে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে ফিলিস্তিনি ও তাদের সমর্থকদের ‘সন্ত্রাসী’ বানিয়ে মুসলিমবিদ্বেষ আরও বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে।
এর কারণে যুক্তরাজ্যে মুসলিমদের ওপর হামলার ঘটনা বেড়ে গেছে। দেশটির বেসরকারি প্রতিষ্ঠান টেল মামার প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দুই হাজার মুসলিম বিদ্বেষী ঘটনা ঘটেছে। যা এর আগের বছরে একই সময়ের চেয়ে ৩৩৫ গুণ বেশি।
প্রতিবেদনটির প্রধান লেখক ফয়সাল হানিফ বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদেরকে মানুষ হিসেবে প্রতিবেদনে উপস্থাপন করা উচিত। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের অনেক আগে থেকে তাদের অধিকারগুলো কীভাবে খর্ব করা হয়েছে সেটিও তুলে ধরা উচিত।’