জুলাই ২৭, ২০২৩, ১২:৩৪ পিএম
সংগৃহীত ফাইল ছবি
‘স্বাভাবিকভাবে মানুষ যা ঘুমিয়ে দেখে তাই স্বপ্ন নয়! স্বপ্ন হচ্ছে সেটাই যা পূরণ করার তাগিদ মানুষকে ঘুমাতে দেয় না।’ স্বপ্নের এই সংজ্ঞা যিনি দিয়েছেন তিনি আর কেউ নন, তিনি ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালাম। পুরো নাম আভুল পাকির জয়নালআবেদিন আব্দুল কালাম। সামান্য এক খবরের কাগজ বিক্রেতা থেকে ডক্টর কালাম হয়ে ওঠেন ভারতের মিসাইল ম্যান।
স্টেশনে কাগজ বেচা ছোট্ট ছেলেটা, মাত্র ৮ বছর বয়স থেকেই ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকতো তামিলনাড়ুর একটি রেলওয়ে স্টেশনে। হাতে এক বান্ডিল খবরের কাগজ। প্রথমে সাধারণ যাত্রী, তারপর অর্ডার পেয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাগজ বিলি করা- এই ছিল কিশোর বয়সে তার প্রতিদিনের কাজ।
১৯৫৪ সালে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক অর্জন করে ১৯৫৫ সালে মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে বিমানপ্রযুক্তি শিক্ষায় ভর্তি হয় সেই ছোট্ট ছেলেটি। এরপরের গল্পটা কিছুটা স্বপ্নের মত। ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থার বিজ্ঞানী হিসেবে যোগদান করা থেকে পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষায় মাস্টার মাইন্ড হয়ে ওঠা, সবই অসাধারণ দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করেন ডক্টর এ পি জে আব্দুল কালাম।
ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা বা ডিআরডিও’তে এরানটিক্যাল ডেভলমেন্ট এস্টব্লিশমেন্টে একজন বিজ্ঞানী হিসেবে যোগদান করেন। ছোট একটি হোভারক্রাফটের নকশা তৈরি করা দিয়েই তাঁর কর্মজীবন শুরু। ১৯৬২ সালে ডি আর ডি ও ছেড়ে যোগদান করেন ভারতীয় সংস্থা ইসরোতে। সেখানেই আমূল বদলে যায় তাঁর জীবন। ইসরোতে তিনি ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞানের প্রাণ পুরুষ ডক্টর বিক্রম সারাভাইয়ের সংস্পর্শে আসেন। আর সেখান থেকেই শুরু হয় আব্দুল কালামের অভূতপূর্ব যাত্রা।
১৯৯৮ সালের ঘটনা। রাজস্থানের থর মরুভূমির মাঝে ছোট্ট গ্রাম পোখরান। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ী গোপনে ডেকে পাঠান ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা ডিআরডির প্রধান এপিজে আব্দুল কালাম ও আণবিক শক্তি কমিশনের ড. আর চিদাম্বরমকে। নির্দেশ দিলেন পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করার।
১৯৯৮ সালের ১১ মে। বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন পরীক্ষামূলক পারমাণবিক বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে মরুভূমি। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে সুখবর দিতে ফোন করেন স্বয়ং ডক্টর কালাম। স্যার উই হ্যাভ ডান ইট- কাঁপা কাঁপা গলায় বলতে পেরেছিলেন তিনি। বিশ্বের চতুর্থ পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের মেরুদণ্ডকে মজবুত করাই ছিল তাঁর জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি। এভাবেই এক কাগজ বিক্রেতা থেকে ভারতের মিসাইল ম্যান হয়ে ওঠেন ডক্টর এ পি জে আব্দুল কালাম।
ভারতের বুকে ইতিহাস লিখে দেশের ১১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন আব্দুল কালাম। তামিলনাড়ুর এক জেলে পট্টি থেকে দেশের প্রথম নাগরিক হিসেবে রাইসিনা হিলের সবথেকে বড় প্রাসাদের বাসিন্দা হন তিনি।
ফেল করে হতাশ হয়ো না। ইংরেজি শব্দ ‘ফেল’ মানে ফার্স্ট অ্যাটেম্ট ইন লার্নি- অর্থাৎ ‘শেখার প্রথম ধাপ’। বিফলতাই তোমাকে সফল হবার রাস্তা দেখিয়ে দেবে। এপিজে আব্দুল কালামের এই অমোঘ বাণী আজীবন দেশবাসীকে এগিয়ে চলার শিক্ষা দেয়। ইচ্ছা, সততা আর অধ্যবসায় থাকলে মানুষ সব করতে পারে, এই কথাই বারবার মনে করিয়ে দেয় ডক্টর এ পি যে আব্দুল কালামের গলি থেকে রাজপথে পৌঁছানোর জীবনী।