চলিত গদ্যরীতির প্রবর্তক প্রমথ চৌধুরী

নিজস্ব প্রতিবেদক

সেপ্টেম্বর ২, ২০২১, ০৮:৫০ পিএম

চলিত গদ্যরীতির প্রবর্তক প্রমথ চৌধুরী

প্রমথ চৌধুরী।সাহিত্যাঙ্গনে যিনি পরিচিত ছিলেন ‘বীরবল’ ছদ্মনামে। সম্রাট আকবরের দরবারে নবরত্নের একজন যেমন  ছিলেন বীরবল, বাংলা সাহিত্যে প্রথম চৌধুরীও তেমনি এক রত্ন। তাঁর ছদ্মনাম যেন তাকেই নির্দেশ করে। লেখার ভিত্তি, গাঁথুনি এবং যুক্তিনিষ্ঠা তার সাহিত্যকর্মকে অনবদ্য করে তুলেছে। আজ ২ সেপ্টেম্বর, বাংলা সাহিত্যে চলিত গদ্যরীতির এই প্রবর্তকের মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৪৬ সালের এই দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।  

স্ত্রী ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণীর সঙ্গে প্রমথ চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

বাংলা সাহিত্যের গতিপথ ঘুরিয়ে দিয়ে নতুনত্ব এনেছিলেন এই কিংবদন্তি লেখক । এই পরিবর্তনের সাথে মানুষকে মানিয়ে উঠতে দারুনভাবে সহায়তা করেছে তার সাহিত্যকর্ম। প্রমথ চৌধুরীকে বাংলা সাহিত্যে বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ প্রাবন্ধিক ও সাহিত্য সমালোচক হিসেবেও অভিহিত করা হয়।

প্রমথ চৌধুরী বলেছিলেন, ‘ভাষা মানুষের মুখ থেকে কলমের মুখে আসে, কলমের মুখ থেকে মানুষের মুখে নয়।’ তিনি তার মুখের ভাষা অত্যন্ত সাবলীলভাবে লিখে গেছেন। যা থেকে জীবনবোধ প্রবল থেকে প্রবলতর হতে পারে।

প্রমথ চৌধুরী ১৮৬৮ সালের ৭ আগস্ট মাসে বাংলাদেশের যশোরে জন্মগ্রহণ করেন। জমিদার তনয় তাঁর পৈতৃক বাড়ি ছিল পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলার হরিপুর গ্রামে। তাঁর বাবার নাম দুর্গাদাস চৌধুরী এবং মায়ের নাম মগ্নময়ী দেবী। প্রমথ চৌধুরী কলকাতার হেয়ার স্কুল থেকে এন্ট্রান্স, প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে দর্শনে প্রথম শ্রেণিতে বিএ পাস এবং ইংরেজিতে প্রথম শ্রেণিতে এমএ পাস করেন। তাঁর শিক্ষাজীবন ছিল অত্যন্ত কৃতিত্বপূর্ণ। ১৮৯৩ সালে ইংল্যান্ডে গিয়ে সেখান থেকে বার অ্যাট ল ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবনে কিছুকাল তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে অধ্যাপনা ছাড়াও সরকারের উচ্চপদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মেয়ে ইন্দিরা দেবীকে বিয়ে করেন। সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাই। সুতরাং সে হিসেবে রবীন্দ্রনাথের ভ্রাতুষ্পুত্রী-জামাতা ছিলেন প্রমথ চৌধুরী।

তিনি ছিলেন সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। সুতরাং সে কারণেই তিনি ইউরোপীয় শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। যার প্রভাব পড়েছিল তাঁর পরবর্তী সাহিত্য জীবনে। অনেকেই মত পোষণ করেন যে, পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবের কারণেই তাঁর প্রবন্ধগুলোতে অনেক উদ্ভট বিষয় স্থান পেয়েছে। নিঃসন্দেহে তাঁর লেখার ধাঁচ বাংলা সাহিত্যের জন্য মাইলফলক। তিনি ছিলেন মননশীল ও প্রচণ্ড যুক্তিবাদী।

প্রথম চৌধুরীর গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে কাব্যগ্রন্থ: সনেট পঞ্চাশৎ (১৯১৯) ও পদচারণ (১৯২০); গল্পগ্রন্থ: চার ইয়ারি কথা (১৯১৬), আহুতি (১৯১৯), ঘোষালের ত্রিকথা (১৯৩৭), নীল লোহিত (১৯৩৯), অনুকথা সপ্তক (১৯৩৯), সেকালের গল্প (১৯৩৯), ট্র্যাজেডির সূত্রপাত (১৯৪০), গল্পসংগ্রহ (১৯৪১), নীল লোহিতের আদি প্রেম (১৯৪৪), দুই বা এক (১৯৪০); প্রবন্ধগ্রন্থ: তেল-নুন-লাকড়ি (১৯০৬), নানাকথা (১৯১১), বীরবলের হালখাতা (১৯১৭), আমাদের শিক্ষা (১৯২০), দুই ইয়ারির কথা (১৯২১), বীরবলের টিপ্পনী (১৯২৪), রায়তের কথা (১৯২৬), নানাচর্চা (১৯৩২), ঘরে বাইরে (১৯৩৬), প্রাচীন হিন্দুস্থান (১৯৪০), বঙ্গ সাহিত্যের সংক্ষিপ্ত পরিচয় (১৯৪০) এবং প্রবন্ধ সংগ্রহ ১ম ও ২য় খণ্ড (১৯৫২-১৯৫৩)।

প্রমথ চৌধুরী বাংলা সাহিত্যে, ফারসি ছোটগল্পের আঙ্গিক রীতির প্রবর্তক,  ইতালীয় সনেটের প্রবর্তক। নিজস্ব ধারায় সনেট রচনাও করেছেন। বাংলা সাহিত্যে ‘চুটকি সাহিত্যের প্রচার, প্রসারে প্রমথ চৌধুরীর ভূমিকা অনস্বীকার্য।

Link copied!