বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবনাবসান হয়েছিল মাত্র ৪৯ বছর বয়সে। ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন বেলা ২টায়। তিনি জন্মেছিলেন আজকের এই দিনে। ২৫ জানুয়ারি ১৮২৪ সালে। যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে।
অকাল প্রয়াত কবি মধুসূদন ছাত্র জীবনেই ১৮৪৩ সালে ৯ ফেব্রুয়ারি খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেন। ১৮৪৮ সালে তিনি মাদ্রাজ গিয়ে সেখানে মাদ্রাজ এতিমখানা বিদ্যালয়ে ইংরেজি শিক্ষকের পদে যোগ দেন। ১৮৫২ সালে মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংযুক্ত বিদ্যালয় বিভাগে দ্বিতীয় শিক্ষকের গুরুত্বপূর্ণ পদ গ্রহণ করেন। মাদ্রাজে তিনি সাত বছর থাকাকালে শিক্ষক, সাংবাদিক ও কবি হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। Timothy Penpoem ছদ্মনামে সনেট, গীতিকবিতা ও খণ্ডকাব্য এ সময় লিখেছেন। The Vision of the Past, The Captive Lady নামে তার দু’টি দীর্ঘ কবিতা একসাথে পুস্তকাকারে মাদ্রাজ থেকে প্রকাশিত হয় ১৮৪৯ সালে।
১৮৪৮ সালে তিনি পূর্বোক্ত এতিমখানার বালিকা বিভাগের ছাত্রী রেবেকাকে বিয়ে করেন। তবে এ দাম্পত্য জীবন সুখের ছিল না। ইউরোপ যাত্রার আগে মাত্র ছয় বছর সময়ের মধ্যে একে একে তিনি রচনা করলেন রতœাবলী নাটকের ইংরেজি অনুবাদ, শর্মিষ্ঠা, একেই কি বলে সভ্যতা, বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ, পদ্মাবতী, কৃষ্ণকুমারী প্রভৃতি নাটক ও প্রহসন। তিলোত্তমা সম্ভব, ব্রজাঙ্গনা, মেঘনাদবধ, বীরাঙ্গনা প্রভৃতি কাব্য ও কবিতা এবং দীনবন্ধু মিত্রের বিখ্যাত নীলদর্পণ নাটকের ইংরেজি অনুবাদ।
১৮৬২ সালে কবি ইংল্যান্ড চলে যান। ১৮৬৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে ফিরে আসেন। এরপর কলকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসায় করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন। কিন্তু অমিতব্যয়ের ফলে জীবনে নেমে আসে দুর্বিপাক। একপর্যায়ে আইন ব্যবসায় ছেড়ে তিনি মাসিক দেড় হাজার টাকা বেতনে প্রিভি কাউন্সিলে আপিলের অনুবাদ বিভাগে চাকরি নিয়েছিলেন। দুই বছর পর আইন ব্যবসায় ফিরে আসেন। আইন ব্যবসায় ব্যর্থ হয়ে মানভূমে পঞ্চকোট রাজার আইন উপদেষ্টার চাকরি নেন। এভাবে চলে জীবনযুদ্ধ। ক্রমে অসুস্থ হয়ে পড়েন কবি এবং ফরাসি স্ত্রী হেনরিয়েটা। ১৮৭৩ সালের ২৬ জুন স্ত্রীর জীবনাবসান হয়। তিনদিন পর কবিও চলেন অনন্ত যাত্রায়।
মধুকবির প্রতি দ্য রিপোর্টের শ্রদ্ধাঞ্জলি।