জেনে নিন কোন গ্রহে আপনার ওজন কত

ফাহিম রেজা শোভন

জানুয়ারি ২৪, ২০২৪, ১২:২০ পিএম

জেনে নিন কোন গ্রহে আপনার ওজন কত

ছবি: সংগৃহীত

নিজের ওজন কমাতে চান? চলে যান চাঁদ, প্লুটো অথবা মঙ্গলে। মহাকাশের প্রেমিরা মাঝে মাঝেই বিজ্ঞানের অমীমাংসিত কল্প জগতে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন। তো ওজন কমানোর স্বার্থে গ্রহ উপগ্রহ ঘুরে বেড়াতে দোষ কী?

তবে চলুন জেনে নেই কোথায় গেলে আপনার ওজন কত হবে!

ধরে নিচ্ছি পৃথিবীতে আপনার ওজন ৬০ কেজি। মহাবিশ্বের গ্রহ-উপগ্রহের মধ্যে সবচেয়ে কম ওজন অনুভব করবেন প্লুটোতে। সেখানে গেলে আপনার ওজন হবে মাত্র সাড়ে ৩ কেজি। এখানে এতই অ-জৈব মিথেন গ্যাস আছে যে, ৬০ কেজি ওজনকে সাড়ে ৩ কেজিতে নামানোর প্রচেষ্টা চালাতে গেলে আপনার জীবনাবসান ঘটবে। আর এই বামন গ্রহে ১ বছর পূর্ণ হতে সময় লাগে পৃথিবীর ২৪৮ বছরের সমান সময়।

যেহেতু এতো বছর বাঁচার সুযোগ নেই,  তাই চলুন ফিরে আসি পৃথিবীর একদম কাছাকাছি! প্ল্যানেট আর্থের একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ। সেখানে ৬০ কেজি ওজনের আপনি হয়ে যাবেন ১০ কেজি ওজনের শিশুর মত হালকা। আপনার শরীর ঠিকই থাকবে, শুধু অভিকর্ষজ ত্বরণের কারণে আপনার কম ওজন অনুভূত হবে।

এরপর আপনাদের নিয়ে যেতে চাই বুধ ও মঙ্গলে। বুধ সূর্যের সবচেয়ে কাছের গ্রহ তাই তাপও অনেক বেশি। এতটাই বেশি উষ্ণ এই বুধ যা আপনার রান্নাঘরের চুলার চেয়ে দ্বিগুন তাপ ছড়ায়। তবে যাদের জীবন মন্থর হয়ে গেছে, নিজের জীবনের গতি বাড়াতে চান, তারা চাইলেই বুধ গ্রহকে বেছে নিতে পারেন। কারণ এখানে আটাশি (৮৮) দিনে বছর।

বুধ গ্রহে গ্র্যাভিটি পৃথিবীর চেয়েও ২.৫ গুণ দূর্বল। তাই আপনি চাইলেই বড় বড় ট্রাক-বাস নিজ হাতে তুলে নিয়ে ছুড়ে মারতে পারবেন। তবে রাতেই বেলায় এখানে পৃথিবীর উত্তর মেরুর চেয়েও ৩ গুণ কম ঠাণ্ডা পড়ে। তাই বাদ দিন, চলুন মঙ্গলের দিকে এগিয়ে যাই।

আপনার ওজন ৬০ কেজি হলে মঙ্গল ও বুধে ওজন হবে প্রায় ২৩ কেজি। মঙ্গল গ্রহ পৃথিবীর সদৃশ্য হলেও দূর্বল গ্রেভেটির কারণে এখানে মানুষের মাংসপেশি ঠিকভাবে কাজ করবে না। তবে যারা ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্সে ভোগে তাদের জন্যে এই লাল গ্রহ উপযুক্ত। কারণ এখানে আপনি পৃথিবীর চেয়ে ৩ গুণ শক্তিশালী হয়ে উঠবেন। কিন্তু এখানে জন্মদিন পালন করতে গিয়ে বোরিং হয়ে যাবেন! কারণ মঙ্গলে ৬৮৭ দিন ঘুরে আসে ১ বছর। তো জীবনকে বোরিং কেনই বা করবেন?

চলুন এইবার একে একে যাই শুক্র, শনি, নেপচুন ও ইউরেনাসের কাছে। শুক্র ও ইউরেনাসে আপনার ওজন হবে প্রায় ৫৫ কেজি। অর্থাৎ পৃথিবীর চেয়ে ৫ কেজি কম। শনিতে ৬৪ আর নেপচুনে ৭১ কেজি হবে ৬০ কেজি ওজনের একজন মানুষের।

শুক্রতে সালফার ডাই অক্সাইডের দূর্গন্ধ মাতুয়াইলের ময়লার ভাগাড়কেউ হার মানাবে। শনিতে বাতাসের গতি প্রায় ১৮০০০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায়। প্রায় ৭০ টি সাইক্লোন সিডর একসাথে আঘাত হানার সমান বাতাস। নেপচুনে সবচেয়ে শক্তিশালী শৈত্য প্রবাহ হয়ে থাকে। আর ইউরেনাসে ৮৪ বছরে হয় এক বছর। তারমানে ইউরেনাসে একটি বছর পার করতে আপনার সারাটা জীবন পার হয়ে যেতে পারে।

রইল বাকী বৃহস্পতি গ্রহ। এখানে ৬০ কেজি একজন মানুষের ওজন হবে ১৪০ কেজি। আর বৃহস্পতিতে ১ বছরের আপনার শিশু কৈশরে পা দিবে। কারণ পৃথিবীর ১২ বছর সমান বৃহস্পতির ১ বছর।

এদিকে আমাদের নক্ষত্র সূর্যে গেলে আপনি সবচেয়ে বেশি ওজন অনুভব করবেন। প্রায় ৬০ কেজি ওজনের আপনি ১৬০০ কেজির একটি বালু ভর্তি ট্রাকের সমান ওজন ধারণ করবেন। গ্রীষ্ণকালে পৃথিবীতে বসেই সূর্যের তাপ সহ্য করতে পারেন না, আর সূর্যে গেলে তো তাপে গলে যাবেন। থাক ফেরত আসুন পৃথিবীতে। 

এবার পৃথিবীর ভাষায় বলি…বৈজ্ঞানিক ভাষায় ওজন হলো, কোনো পদার্থের ভর ও অভিকর্ষজ ত্বরণের গুণফল। ভর হল কোন বস্তু বা ব্যক্তির ভেতর মোট পদার্থের পরিমাণ। অভিকর্ষজ ত্বরণ একেক গ্রহে একেক রকম। কোনো বস্তুকে পৃথিবী তার নিজের দিকে যে বলে টানে, সেই বলই হলো ওজন।

বিভিন্ন সময় দেখা যায় মহাকাশের জমি বিক্রির গুজব। ভবিষ্যতে যদি সত্যিই স্পেসের জমি বিক্রি হয় তবে চাইলেই কন্সিডার করতে পারেন। তবে স্পেস স্যুট পরে বেরিয়ে পড়ুন। উপভোগ করুন সীমাহীন ওজনহীনতা। 

Link copied!