বিশ্বজুড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) প্রভাব দিন দিন বাড়ছে, আর এর ছোঁয়ায় বিলিয়নিয়ারদের জীবনযাপন ও ব্যবসা পরিচালনায় এসেছে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন।
২০২৫ সালের ফোর্বস ওয়ার্ল্ড বিলিওনেয়াার্স তালিকায় নতুন যুক্ত হওয়া বেশ কিছু ধনকুবেরের সম্পদ বৃদ্ধির পেছনেও রয়েছে এআই-এর অবদান।
উদাহরণস্বরূপ, লিংকডইন সহ-প্রতিষ্ঠাতা রিড হফম্যান নিজেই তৈরি করেছেন নিজের এআই ‘জোড়া’, যার সঙ্গে তিনি আলোচনা করেছেন একটি সেশনে যার নাম দিয়েছেন “মি, মাইসেল্ফ অ্যান্ড (এআই)I”। অন্যদিকে, প্রায় অবসরপ্রাপ্ত ওয়ারেন বাফেট এআই সম্পর্কে সন্দিহান অবস্থান নিয়ে বলেছেন, “এটা এমন এক দৈত্যের মতো যা বোতল থেকে বেরিয়ে এসেছে—এবং এটা আমাকে ভয় পাইয়ে দেয়।”
ফোর্বস একটি জরিপে জানতে চেয়েছে বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের মধ্যে কতজন ব্যক্তি ও পেশাগত জীবনে এআই ব্যবহার করছেন। জরিপে অংশ নেওয়া বিলিয়নিয়ারদের গড় বয়স ৬৬ বছর। জরিপ অনুযায়ী, ৬৫% ধনকুবের জানিয়েছেন তারা ব্যক্তিগত জীবনে এআই ব্যবহার করেন এবং ৭৭% ব্যবসায়িক কার্যক্রমে এআই ব্যবহার করছেন।
গ্রুপঅন-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ও টেম্পাস এআই-এর বর্তমান প্রধান এরিক লেফকফস্কি বলেন, “আমি দিনে অন্তত পাঁচবার চ্যাটজিপিটি-এর সঙ্গে কথা না বলে থাকতে পারি না।” তিনি আরও জানান, কয়েক বছর আগে তাদের পুরো প্রতিষ্ঠানকে ‘জেনারেটিভ এই ফার্স্ট’ মডেলে রূপান্তর করা হয়েছে, যা কেবল ব্যবসার প্রবৃদ্ধিই নয়, রোগীদের জীবনমান উন্নয়নে সহায়ক হয়েছে।
৪৫ জন বিলিয়নিয়ারের মধ্যে ৪৩ জন ব্যক্তিগত জীবনে এআই ব্যবহারের বিষয়ে উত্তর দিয়েছেন এবং ৪০ জন জানিয়েছেন তাদের ব্যবসায়িক ব্যবহারের অভিজ্ঞতা। এর মধ্যে ২৭ জন এআই চ্যাটবট ব্যবহার করেন, যার মধ্যে ২৩ জন নির্দিষ্ট করে চ্যাটজিপিটি-এর কথা উল্লেখ করেছেন।
১২ জন বিলিয়নিয়ার জানিয়েছেন, তারা এআই ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট ব্যবহার করেন। ২০২৩ সালে বিল গেটস ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে পাঁচ বছরের মধ্যে সবাই এআই সহকারী ব্যবহার করবেন—এটি এখন বাস্তবের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
ফ্লোরিডার রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার ডেভিড হফম্যান, ভারতীয় অটো পার্টস ব্যবসায়ী অনুরাং জৈন, ফরাসি লজিস্টিকস মোগল এরিক হেমার এবং কোচ ইনকর্পোরেটেডের সহ-সিইও চার্লস কোচসহ পাঁচজন অজ্ঞাতনামা বিলিয়নিয়ার তাদের ব্যবসায় রোবোটিক্স ব্যবহারের কথা জানিয়েছেন।
তবে সবাই এআই-কে সাদরে গ্রহণ করছেন না। নয়জন ধনকুবের জানিয়েছেন, তারা তাদের ব্যবসায় একেবারেই এআই ব্যবহার করেন না। এদের মধ্যে রয়েছেন ফিনান্স ব্যবসায়ী স্টিফেন স্মিথ, গাড়ি বিক্রেতা নর্মান ব্রামান, শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রধান হর্ষ গোয়েঙ্কা এবং বাড়ি নির্মাতা প্যাট্রিক নিল। প্যাট্রিক নিল বলেন, “একটা বাড়ি হলো ছোঁয়া যায় এমন জিনিস—এটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।”
সব মিলিয়ে বলা যায়, বেশিরভাগ বিলিয়নিয়ার ইতিমধ্যেই এআই -এর সম্ভাবনাকে কাজে লাগাচ্ছেন। তবে এর ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা সত্ত্বেও এখনো কিছুজন রয়েছেন যারা এই প্রযুক্তির বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।