বেশ কিছুদিন ধরেই নাটক পাড়া উত্তাল অভিনেত্রী রুকাইয়া জাহান চমক ও আরশ খানের ইস্যুতে। নির্মাতা আদিফ হাসানের ‘শ্বশুর বাড়ির প্রথম দিন’ নাটকের শুটিং সেটে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় শুরু হয় কাদা ছোড়াছুড়ি। নিজেদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের কারণে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে চমক নির্মাতা আদিফ হাসান ও আরশ খানের বিরুদ্ধে থানায় জিডিও করেন।
এরপর অভিনয় শিল্পী সংঘ, ডিরেক্টরস গিল্ড, টেলিপ্যাব তিন সংগঠন তাদেরকে নিয়ে বসেন এবং একটি সমাধানে আসেন। ঘটনার সার্বিক বিশ্লেষণ শেষে অভিনয়শিল্পী সংঘের দেওয়া রায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন উঠতি অভিনেত্রী চমক। সেজন্য তাকে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে, সঙ্গে আর্থিক জরিমানাও।
রবিবার (১৩ আগস্ট) বিকালে বিষয়টি নিয়ে অভিনয়শিল্পী সংঘের বিচার সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে শিল্পী সংঘ, ডিরেক্টরস গিল্ড ও টেলিভিশন এবং ডিজিটাল প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টেলিপ্যাব) নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
টেলিপ্যাব’র সভাপতি মনোয়ার হোসেন পাঠানের সভাপতিত্বে সভার প্রথমে অভিযোগ সংক্রান্ত সবার আবেদনসমূহ পাঠ করা হয় এবং অভিযোগকারী অভিনেত্রী রুকাইয়া জাহান চমক ও নির্মাতা আদিফ হাসানের বক্তব্য শোনা হয়। ঘটনার সাক্ষী হিসেবে অভিনেতা আরশ খানের বক্তব্যও শোনেন সংগঠনের নেতারা।
এক দিন পর সোমবার (১৪ আগস্ট) রাতে সভার সিদ্ধান্ত লিখিত আকারে পাঠিয়েছে অভিনয়শিল্পী সংঘ। সেই বার্তায় বলা হয়েছে, ‘শুটিং সেটে উত্তেজিত অবস্থায় চমক যে আচরণ করেছেন, যার কারণে সেটে পুলিশ আসা, শুটিং বন্ধ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এবং পরিচালক আর্থিক ক্ষতি ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন।
এছাড়া জ্যেষ্ঠ অভিনেতা ফখরুল বাশার মাসুম এবং নির্মাতা আদিফ হাসানসহ ইউনিটের সবার সঙ্গে যে আচরণ করেছেন, তা অভিনেত্রী চমকের ভুল ছিল এবং পরবর্তীতে অভিনেতা আরশ খানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ইন্টারভিউতে যে অভিযোগ এনেছেন, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন প্রতীয়মান হয়।’
দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় চমকের ব্যাপারে কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংগঠনটি। এগুলো হলো-
১) ক্ষতিগ্রস্ত নাটকের প্রযোজক, পরিচালক ও জ্যেষ্ঠ অভিনেতা ফখরুল বাশার মাসুমসহ সকলের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করবেন ও ক্ষমা চাইবেন।
২) ‘শ্বশুর বাড়ির প্রথম দিন’ নাটকটি নির্মাণ সম্পন্ন করতে বাকি যে অর্থের প্রয়োজন হবে, তা ক্ষতিপূরণ হিসেবে চমক প্রদান করতে বাধ্য থাকবেন।
৩) অভিনেতা আরশ খান ও পরিচালক আদিফ হাসানের বিরুদ্ধে চমক থানায় যে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন তা অনতিবিলম্বে নিষ্ক্রিয় করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
৪) ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না, যদি ঘটে তবে সংগঠন কর্তৃক যে কোনও শাস্তি গ্রহণ করতে তিনি বাধ্য থাকবেন বলে লিখিতভাবে অঙ্গীকার করবেন। আগামী ৬ মাস তিনি সকল সংগঠনের পর্যবেক্ষণে থাকবেন। তার বিরুদ্ধে কোনও প্রকার অভিযোগ যেন না আসে, সে বিষয়ে সচেষ্ট থাকবেন।
এই সভায় উপস্থিত ছিলেন টেলিপ্যাবের সাধারণ সম্পাদক সাজু মুনতাসির, কার্যনির্বাহী সদস্য বাবুল আহমেদ, ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি অনন্ত হীরা, সহ-সভাপতি আশরাফুল আলম, সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান সাগর, অভিনয়শিল্পী সংঘের সহ-সভাপতি আনিসুর রহমান মিলন, সাধারণ সম্পাদক রওনক হাসান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজনীন হাসান চুমকিসহ আরও অনেকে।
সভা শেষে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিজের ভুলের জন্য অনুতপ্ত হন রুকাইয়া জাহান চমক। সেই সঙ্গে ফখরুল বাশার মাসুম ও আরশ খানের প্রতি দুঃখপ্রকাশ করেন। এছাড়া ভবিষ্যতে এই ধরনের কাজ করবেন না মর্মে লিখিত অঙ্গীকার দেন। তবে যেহেতু ঘটনাটি শুটিং সেটে সবার সামনে হয়েছিল, তাই পুনরায় সেই নাটকের সেটে গিয়ে সবার সামনেই দুঃখ প্রকাশ করতে হবে চমককে।