অক্টোবর ২৪, ২০২১, ০৮:৩৯ পিএম
ইতিহাসের রোমাঞ্চকর অধ্যায়ের গল্পগুলো অনেকের অজানা। সেসময়ের মানুষের জীবনযাত্রা, কৃষ্টি- সংস্কৃতি এ যুগের মানুষের কাছে বেশ চমকপ্রদ ব্যাপার। ইতিহাস নির্ভর তেমনই এক গল্পের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে 'চন্দ্রাবতী কথা' সিনেমাটি। অসাধারণ প্রতিভাময়ী এক কবি ও অত্যান্ত স্পর্শকাতর রোমান্টিক মনের অধিকারী ছিলেন চন্দ্রাবতী।
ষোড়শ শতকের অসম্ভব প্রতিভাবান ও সংগ্রামী এই নারীকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘চন্দ্রাবতী কথা’। আজ থেকে প্রায় ৪০০ বছর আগের সময়কে যেভাবে এই সিনেমায় তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে, সেটা একটা দলিল হিসাবে থেকে যাবে। সিনেমাটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন মডেল ও অভিনেত্রী দিলরুবা দোয়েল।
চন্দ্রাবতী জন্ম ছিলেন চারশ বছর আগে। তার লেখা ‘মনসামঙ্গল’ ১৫৭৫ সালের দিকে শেষ হয়। কথিত আছে যে, মনসামঙ্গল রচনায় বংশীবদন চন্দ্রাবতীর সাহায্য পেয়েছিলেন। এ সময় চন্দ্রাবতীর বয়স কমপক্ষে পঁচিশ ছিল। কুলকুল করে বয়ে যাওয়া টলটলে স্বচ্ছ জলের ফুলেশ্বরীর তীরে অপূর্ব শ্যামল নিসর্গের কোলে বেড়ে ওঠা চন্দ্রাবতী কেবল পরমা সুন্দরীই ছিলেন না, অসাধারণ প্রতিভাময়ী এক কবি ছিলেন।
ওই সময়ের কোনো কিছুই এখন খুঁজে পাওয়া সহজ নয়। এক ধরনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে হয়েছে এই সিনেমায় বলে জানান অভিনেত্রী দোয়েল। সে চ্যালেঞ্জ সামলানো নিয়ে, ষোড়শ শতকের চন্দ্রাবতী হয়ে ওঠার গল্প বললেন তিনি। অভিনেত্রী দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, ‘আমি আসলে যখন ছবিটা করবো বলে সিদ্ধান্ত নিই তখন কিন্তু চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম আমাকে কাজটা পারতে হবে। আর কোনো কাজ আমি না পারলে তা করি না।’
কে এই চন্দ্রাবতী?
চন্দ্রাবতীর গল্প জানতে গেলে ফিরে যেতে হবে আজ থেকে সাড়ে চার শ বছর আগে। কিশোরগঞ্জের পাতুয়ারীতে ছিল চন্দ্রাবতীর নিবাস। মনসামঙ্গল কাব্যের অন্যতম রচয়িতা দ্বিজ বংশীদাস ছিলেন চন্দ্রাবতীর বাবা। কিন্তু চন্দ্রাবতীর নিজেরও আলাদা পরিচয় আছে। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে প্রথম বাঙালি মহিলা কবি তিনি। মলুয়া, দস্যু কেনারামের পালা, রামায়ণ গীতিকা তাঁরই লেখা।
চন্দ্রবতীকে নিয়ে লেখা হয়েছে একটি গীতিকা। মৈমনসিংহ গীতিকার সেই পালার নাম `জয়-চন্দ্রাবতী'। পরবর্তী সময়ে আরও অনেক পালায়, গল্পে, কাহিনিতে এসেছে চন্দ্রাবতী প্রসঙ্গ।
চন্দ্রাবতীর জার্নি-
আলফা’ সিনেমার সেটে পরিচালক এন রাশেদ চৌধুরী আমাকে দেখতে যায়। এটা আমি পরে জানতে পেরেছি। ২০১৫ সালে সেটা। পরিচালক চন্দ্রাবতী খুঁজছিলেন। তারপর অডিশন দিলাম। এভাবেই যুক্ত হওয়া। মাসখানেক রিহার্সেল করে ২০১৫ সালের শেষের দিকে আমরা শুটিংয়ে যাই।
প্রস্তুতি কেমন ছিল?
আমি আসলে চন্দ্রাবতী সর্ম্পকে খুব বেশি জানতাম না। চন্দ্রাবতীর কিন্তু কোনো রেফারেন্স নেই। তার চলন-বলন, কথাবার্তা বিভিন্ন গবেষণা থেকে আমি নিয়েছি। চরিত্রের প্রয়োজনে জানতে হয়েছে। এখন বেশ কয়েকবার সিনেমাটি দেখার পর চন্দ্রাবতীকে অনেক ফিল করতে পারছি। পরিচালক অনেক সময় নিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছেন। আমার টিম আমাকে অনেক হেল্প করেছে বলেই অভিনয় করতে পেরেছি।
মুক্তির পর কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
প্রশংসা পাচ্ছি। অনেকেই প্রশংসা করেছেন। আসলে প্রশংসা পেয়ে আমারও ভালো লাগছে। হলগুলোতে গিয়ে দর্শকদের সঙ্গে বসে সিনেমা দেখেছি। অনেক ভালো রেসপন্স পাচ্ছি। বিভিন্ন চ্যানেলে ইন্টারভিউ দিতে গিয়েও প্রশংসা পেয়েছি। আমার কাছে সত্যি ভালো লাগছে। আমি এখনও চন্দ্রাবতীর ভেতর ঢুকে আছি। যারা হলে এসে সিনেমাটি দেখছেন তাদের ধন্যবাদ।
সিনেমাটি রেফারেন্স হয়ে থাকবে-
সিনেমাটি অবশ্যই রেফারেন্স ও ইতিহাস হয়ে থাকবে। আমরা যখন সিনেমাটি শুরু করি তখন কোনো ভিজ্যুয়াল রেফারেন্স ছিল না। এখন আমরা এটা করেছি। এটা দেখে যদি চন্দ্রাবতীকে নিয়ে কেউ কাজ করতে চায় তাহলে অবশ্যই রেফারেন্স হিসেবে সিনেমাটি থেকে হেল্প পাবে।
কিশোরগঞ্জে জন্ম চন্দ্রাবতীর। আবার তিনি কবি ছিলেন। তবে তার সংলাপে কাব্যিক ভাষা ব্যবহার না করে স্থানীয় ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। এ ভাষা রপ্ত করার জন্য অভিনেত্রী দোয়েলকে সহায়তা করেছে শুটিং শুরুর আগে হওয়া রিহার্সেল। সঙ্গে তার নিজের প্রচেষ্টাও ছিল।
শুটিং শুরুর প্রায় পাঁচ বছর পর ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে। এ নিয়েও কোন দুঃখবোধ নেই দোয়েলের। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যার যখন সময় হবে তখন আসবে। আমাদের ছবিটিও মনে করি সময়মত আসছে।’
দর্শকদের উদ্দেশে-
এ সিনেমার জন্য আমাদের অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। সেন্সর বোর্ডে সিনেমাটি আটকে ছিল। আপনারা যদি হলে এসে সিনেমাটি দেখেন তাহলে আমরা সফল। আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে আপনাদের হলে এসে সিনেমা দেখতে হবে।