বিদায়ী বছরের শেষ দিনে চমক দেখালেন পরীমণি। স্ট্যাটাস দিয়ে জানালেন ভালোবেসে ২০২২ সালেই যে চিত্রনায়ক শরীফুল রাজের সাথে সংসার বেঁধেছিলেন, তাঁকেই ছেড়ে দেয়ার কথা। তারপর নতুন বছরে আবারও পরীমণি শেয়ার করেন দুটো ছবি যেখানে দেখা যায় বিছানায় ছোপছোপ রক্ত। সাথে ক্যাপশনে জানালেন সংবাদ সম্মেলন করবেন। এর মধ্যে এসব বিষয় নিয়ে কোনো মন্তব্যও করেননি রাজ। পরীমণি লিখলেন রাজ ও রাজ্যের ভালোর জন্যই সবকিছু। অন্যদিকে রাজও ইঙ্গিত দিলেন তাঁর ভাবনা জুড়ে শুধু রাজ্য।
২০২১ সালে ‘গুণীন’ ছবি করতে গিয়ে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান রাজ-পরী। ওই বছরই গোপনে বিয়ে করেন তাঁরা। পরে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ধুমধাম করে বিয়ের সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। আগস্ট মাসের শুরুতে পুত্র সন্তান জন্ম দেন এই দম্পতি। বছরজুড়ে তাঁদের হাসিখুশি জীবন দেখে সবারই ধারণা হয়েছিল অতীত ছেড়ে বর্তমানে রাজ ও পুত্র রাজ্যকে নিয়ে সুখেই আছেন পরীমণি।
বছরের শেষ দিকে এসে কয়েকবার চলচ্চিত্রাঙ্গনের জনপ্রিয় নায়িকার সাথে জড়িয়ে বেশ আলোচনা হলেও সেগুলো পরে স্তিমিত হয়ে যায়। আবারও সুখের বাতাস বইতে থাকে। কিন্তু সেই সুখের দিন যে বেশিদিন ছিল না সেটি বছরের শেষ দিনে পরীমণির দেয়া পোস্ট থেকে বুঝা যায়।
পরীমণি ফেসবুকে লেখেন, ‘আমি আজ রাজকে আমার জীবন থেকে ছুটি দিয়ে দিলাম এবং নিজেকেও মুক্ত করলাম একটা অসুস্থ সম্পর্ক থেকে। জীবনে সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকার থেকে জরুরি আর কিছুই নাই।’
বছরের শেষ দিনে পরীমণির দেয়া এমন পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় তুলে দেয়। সংবাদমাধ্যম থেকে তাঁর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘এখনো বিচ্ছেদ হয়নি। তবে আমি সম্পর্ক ছিন্ন করে রাজের বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছি। আজ থেকে আমরা আলাদা হয়ে গেলাম। শিগগির বিচ্ছেদের চিঠি পাঠিয়ে দেব। বেশ কিছুদিন ধরেই সমস্যা হচ্ছিল। সমস্যা কাটিয়ে সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে একসঙ্গে থাকার চেষ্টা করেছি, পারলাম না। তাঁর আচার-আচরণ একসঙ্গে থাকার পরিস্থিতি নাই। তাই বাধ্য হয়ে বাসা ছেড়ে আলাদা হয়ে গেলাম।’
বছরের শেষ রাতে যখন সবাই নতুন বছরকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে সে সময় সংবাদমাধ্যমকে পরীমণি জানান, ‘আমরা একসঙ্গেই রয়েছি। বসুন্ধরায় আমাদের বাসায় আছি। এসব নিয়ে আর কোনো কথা বলতে চাই না।’
এই সংবাদ জানানোর কয়েক ঘণ্টা পরই বিছানায়-বালিশে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ দেখা যাচ্ছে এমন দুটি ছবি পোস্ট করে পরীমণি লেখেন, ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার। সংবাদ সম্মেলন, লোডিং....’।
এমন ছবি দেখে সবার মনেই প্রশ্ন জাগে কী হয়েছে? পরীমণির সাথে যোগাযোগের সুযোগ না পাওয়া গেলেও রাজ বলেন, ‘আমি আসলে এসব ইস্যুতে কিছুই বলতে চাই না। কী হচ্ছে, এসবের কিছুই আমি জানিও না। জানতেও চাই না। আমি বাসায় আছি। সারা রাত ঘুমাইনি। এখন ঘুমাচ্ছি, ঘুমানোর চেষ্টা করছি।’
অভিনয়জীবনের শুরু থেকেই বিভিন্ন কারণে আলোচিত ও সমালোচিত হতে থাকেন পরীমণি। একাধিক বিয়ে ও প্রেমের সম্পর্ক, অনৈতিক কার্যকলাপসহ বিভিন্ন কারণে সংবাদমাধ্যমে আসতে থাকেন তিনি। সবশেষে যখন শরীফুল রাজকে বিয়ে, নতুন করে শুরুর কথা, সন্তানের জন্ম- এসব দেখে সবাই আশাবাদী ছিল পরীমণিকে নিয়ে। কিন্তু সম্পর্ক যে সুখকর ছিল না তা একসময় প্রকাশ্যেই চলে এলো। সম্পর্ক বোঝাপড়ার মাধ্যমে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হলেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত পরীমণির লেখায় রাজের হাত তোলার অভিযোগ এলো।
রবিবার পরীমণির দেয়া একটি পোস্টই বলে দেয় তাঁদের সম্পর্ক এখন কোন অবস্থায় আছে। পরীমণি লিখেছেন, 'একটা সম্পর্কে পুরোপুরি সিরিয়াস বা খুব করে না চাইলে একটা মেয়ে, বাচ্চা নেয়ার মতো এত বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারে না কখনোই। আমার জীবনের সবটুকু চেষ্টা যখন এই সম্পর্কটাকে ঠিকঠাক টিকিয়ে রাখা তখনই আমাকে পেয়ে বসা হলো। যেন, শত কোটি বার যা ইচ্ছে তাই করলেও সব শেষে ওই যে আমি মানিয়ে নেই এটা রীতিমতো দারুণ এক সাংসারিক সূত্র হয়ে দাঁড়ালো। আমি জোর দিয়ে বলতে পারি আমাদের এই সম্পর্ক এত দিন আমার এফোর্টে টিকে ছিল শুধু। কিন্তু বারবার গায়ে হাত তোলা পর্যায়ে পৌঁছালে কোনো সম্পর্কই আর সম্পর্ক থাকে না। স্রেফ বিষ্ঠা হয়ে যায়।
রাজ্যের দিকে তাকিয়ে বার বার সব ভুলে যাই। সব ঠিক করার জন্যে পরে থাকি। কিন্তু তাতে কি আসলেই আমার বাচ্চা ভালো থাকবে! না । একটা অসুস্থ সম্পর্ক এত কাছে থেকে দেখে দেখে ও বড় হতে পারে না। তাই আমি, রাজ্য এবং রাজের মঙ্গল এর জন্যেই আলাদা হয়ে গেলাম। রাজ এখন শুধু আমার প্রাক্তন’ই না, আমার ছেলের বাবাও। তাই রাজ্যের বাবার সম্মান রাখতে পাবলিকলি আর বাকি কিছু বলছি না আমি।
তবে আমার উপর তার আর তার পরিবারের কোন অসুস্থ আচরণ বা হার্মফুল কিছু করার চেষ্টা করলে আমি কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবো।
সংবাদমাধ্যমকর্মী যারা রয়েছেন আপনারা নিশ্চয়ই আমার মানসিক অবস্থা বুঝতে পারবেন আশা করছি। আমাকে একটু সময় দিন। শারীরিকভাবেও আমি বিধ্বস্ত। রাজ্য তার বাবা মাকে একসাথে নিয়ে বড় হতে পারলো না এর থেকে কষ্টের আর কি হতে পারে আমার কাছে।’
এদিকে পরীমণির এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে নিশ্চুপ অবস্থানে থাকা শরীফুল রাজ নতুন বছরের প্রথম দিনে পুত্র রাজ্যকে নিয়ে ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘আমার প্রিয় পুত্র, তোমার একটি দুর্দান্ত বছর এবং সামনের বছরগুলো দারুণ কাটুক। তোমার সু-স্বাস্থ্য কামনা করছি। সামনের বছরগুলো আনন্দ উল্লাসে কাটাও। আমার হৃদয় সবসময় তোমার জন্য ভালোবাসায় পূর্ণ থাকবে। তুমি যত বড় এবং শক্তিশালীই হও না কেন বাবার ভালোবাসাকে কখনেই ছাড়িয়ে যেতে পারবে না।’
পরীমণির একের পর এক অভিযোগের পোস্ট ও বিচ্ছেদের কথা বা পরীমণিকে পাওয়া গেল না রাজের লেখায়।
বিচ্ছেদ কি তাহলে এখন শুধু কাগজেই হওয়া বাকি?