লেগ স্পিনার, বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক আক্ষেপের নাম। জুবায়ের লিখন থেকে রিশাদ, এসেছেন অনেকেই কিন্তু হৃদয়ে দোলা দিতে পারে নি কেউ। টেস্ট স্ট্যাটাসের ২৩ বছরেও একজন আন্তর্জাতিক মানের লেগ স্পিনার তৈরি করতে পারেনি বাংলাদেশ। রশিদ খান, যুজবেন্দ্র চেহেল শাদাব খানরা তাক লাগানো রিস্ট স্পিনে মাত করে রেখেছেন দুনিয়া। টেস্ট খেলুড়ে প্রায় সব দলেই আছে এমন এক বা একাধিক রিস্ট স্পিনার কিন্তু সেখানে বাংলাদেশে মশাল জ্বালিয়েও একজন লেগ স্পিনার খুঁজে পাওয়া কষ্টকর।
আধুনিক ক্রিকেটে ফ্ল্যাট পিচে বা সবুজ উইকেটে অন্যান্য স্পিনার দের থেকে লেগ স্পিনাররা বেশি কার্যকরী। টপ অর্ডার থেকে মিডল অর্ডারের যেকোনো সেট ব্যাটসম্যান কে পরাস্ত করার জন্য লেগ স্পিন খুবই কার্যকরী। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাও লেগ স্পিনে অনেক বেশি দুর্বল। তাঁর কারন আমাদের নেটে বল করার মতোও কোন ভালো লেগ স্পিনার নেই। অন্যান্য দলগুলোর দিকে তাকালেই বাংলাদেশের অবস্থা কতোটা করুণ সেটা ফুটে উঠবে। নেপালের মতো দুর্বল দলেও লেগি হিসেবে আছেন সন্দ্বীপ লেমিচান্দ। জিম্বাবুয়েতে রয়েছেন গ্রায়েম ক্রেমার। আর বড় দলগুলোর অবস্থা আরও অনেক ওপরে। ভারতের চায়নাম্যান কুলদিপ জাদব আর চাহালের লেগ স্পিন এখন সব ব্যাটারদেরই আতংকের নাম।
আমাদের আরেক প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কা দলে চায়নাম্যান সান্দাকান, সিকুগে প্রসন্না, এবং হাসারাঙ্গার মতো দারুণ সব লেগ স্পিনার রয়েছেন। পাকিস্তানের শাদাব খান, ওয়েস্ট ইন্ডিজে আছেন বিশু, বদ্রি আর সাউথ আফ্রিকায় চায়নামেন শামসি, ইমরান তাহির। অস্ট্রেলিয়ায় আছেন সুইপসন, জাম্পা । ইংল্যান্ড এ আদিল রাশিদ , মেসন ক্রেন। নিউজিল্যান্ডে রয়েছেন ইশ সধি।
আর আফগানিস্তানের রাশিদ খান তো রীতিমত বিস্ময় উপহার দিচ্ছেন। ভারতীয় ক্রিকেট বিশ্লেষক হারশা ভোগলে কে দেয়া এক সাক্ষাতকারে রশিদ খান বলেছিলেন, তাদের বিভিন্ন একাডেমীতে ১০০০ জন লেগ স্পিনার অনুশীলন করেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের আরেক বড় হতাশার নাম পেস বোলিং অলরাউন্ডার। বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্মলগ্ন থেকে একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডার খুঁজে আসছে। প্রতিভাবান অনেক খেলোয়াড় সুযোগ পেলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা হারিয়ে গেছেন অজানা কোনো কারণে। প্রতিভা থাকা খেলোয়াড়রা পারফরম্যান্সের কারণেই দল থেকে বাদ পড়েছেন। কিন্তু একবার বাদ পড়া খেলোয়াড়রা আর কখনোই ফিরতে পারেননি। জিয়াউর রহমান, আবুল হোসেন রাজু, ফরহাদ রেজা, সাইফুদ্দিনের মতো খেলোয়াড়রা আসলেন, খেললেন এবং চলেও গেলেন। কিন্তু জেনুইন একজন পেইস বোলিং অলরাউন্ডারের আক্ষেপ থেকেই গেল। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এক হারদিক পান্ডিয়ার ও শারদুল ঠাকুরদের মত খেলোয়াররা খেলায় কতটা কর্যকরী হতে পারেন তা ভারতের খেলা দেখলেই বোঝা যায়। মিডল অর্ডারে ব্যাকফুটে থাকা দলকে কীভাবে ফ্রন্ট ফুটে নিয়ে ম্যাচ বের করে আনতে হয় তা এই পেইস বোলিং অলরাউন্ডাররা করে দেখিয়েছেন। বর্তমান ক্রিকেটে পাকিস্তানের ফাহিম আশরাফ, শ্রীলংকার দাশুন শানাকারা কতটা কার্যকর সেটির প্রমাণও মিলছে।
কিছুদিন বাদেই শুরু হবে বিশ্বকাপের লড়াই। যেকোনো বড় দলের বিপক্ষে জয়ের জন্য একজন লেগ স্পিনার পাশাপাশি একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডার নিঃসন্দেহে এক মোক্ষম অস্ত্র। হতাশাজনক হলেও এটাই বাস্তব যে দেশের ক্রিকেটে এখনও এই দুই শক্তিমত্তার জায়গা তৈরি হয় নি। এখন তবে এটাই দেখার বিষয় বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশ নিজেকে কতটা মেলে ধরতে পারবে।