১-১ সমতায় শেষ হলো আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যকার টি-টুয়েন্টি সিরিজ

ক্রীড়া ডেস্ক

মার্চ ৫, ২০২২, ১১:৫৪ পিএম

১-১ সমতায় শেষ হলো আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যকার টি-টুয়েন্টি সিরিজ

দ্বিতীয় টি-টুয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশকে ৮ উইকেটে হারিয়েছে সফরকারী আফগানিস্তান। এর ফলে দুই সিরিজের ম্যাচ ১-১ সমতায় শেষ হলো। 

অনেক প্রাপ্তির হিসেব মেলাতে (শনিবার) আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুই ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে মাঠে নামে বাংলাদেশ দল। পরিসংখ্যান বলছে, ক্রিকেটের ছোট সংস্করণের এ খেলায় মুখোমুখি দেখায় আফগানদের বিপক্ষে ৩-৪ ব্যবধানে পিছিয়ে ছিল টাইগাররা। তাই সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটিতে সুযোগ ছিল সমতা ফেরানোর। তবে উল্টো বেড় গেল ব্যবধান। আফগানদের হারাতে পারলে টি-টোয়েন্টি র‍্যাঙ্কিংয়ে ৮ নম্বরে উঠে আসারও সুযোগ ছিলো। 

সিরিজের প্রথম ম্যাচ ৬১ রানে জয়ের পায় বাংলাদেশ। এ ম্যাচ জিতলে দুই দলের দ্বিপাক্ষিক সিরিজে প্রথমবারের মতো সিরিজ জয়ের স্বাদ পেতে বাংলাদেশ। মুশফিকের রহিমের ১০০তম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আক্ষেপই বাড়ল শুধু। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় আগে ব্যাট করে স্কোর বোর্ডে মাত্র ১১৫ রান তোলে স্বাগতিকরা। ১১৬ রানের জবাব দিতে বেগ পেতে হয়নি সফরকারীদের। ৮ উইকেট আর ১৪ বল হাতে রেখে ম্যাচ জেতে আফগানরা।

এ ম্যাচ হারের জন্য যেমন কাঠগড়ায় ব্যাটসম্যানরা, তেমনি সহজ ক্যাচ ছেড়ে সে ব্যর্থতায় ভাগ বসিয়েছেন ফিল্ডাররা।  নাসুম আহমেদ, আফিফ হোসেন, নাঈম শেখরা ছেড়েছেন সহজ ক্যাচ। হাফ চান্স হাতছাড়া হয়েছে আরো দুটি। ক্যাচ মিসের মহড়ায় ম্যাচ জিততে একেবারেই বেগ পেতে হয়নি আফগানিস্তানের। হযরতউল্লাহ জাজাইয়ের ফিফটির সঙ্গে দুই ব্যাটসম্যান উসমান ঘানির ৪৭ রানের সুবাদে ৮ উইকেটের বিশাল জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে আফগানিস্তান।

অথচ ম্যাচের শুরুতেই দুর্দান্ত সুযোগ পেয়ে যায় বাংলাদেশ। ইনিংসের তৃতীয় বলে নাসুম আহমেদকে খেলতে গিয়ে অনেক উঁচুতে তুলে দেন জাজাই। অনেক সময় পেয়েছিলেন নাসুম। বলের নিচেও গিয়েছিলেন কিন্তু শেষ মুহূর্তে ফস্কে যায় ক‍্যাচ। সুযোগ পেয়ে সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজে যেমন অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন জাজাই, তেমনি তার ব্যাটেই সিরিজ বাঁচিয়েছে আফগানিস্তান।

ইনিংসের প্রথম ওভারে জাজাইকে ফেরানো না গেলেও পরের ওভারে সাজঘরে আরেক ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ। শেখ মেহেদী হাসানের বলে মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ দিয়ে ৫ বলে ৩ রানে সাজঘরে তিনি। এরপর একাধিক সুযোগ পেয়ে দলকে টেনে তোলেন জাজাই আর ঘানি। দ্বিতীয় উইকেটে দুজন গড়েন ৯৯ রানের পার্টনারশিপ। এই জুটিতেই ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ দল। 

শেষদিকে সুযোগ পেয়েও অবশ্য ফিফটি করতে পারেননি ঘানি। ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাট করে ৫টি চার আর ১টি  ছক্কায় ৪৮ বলে খেলেন ৪৭ রানের ইনিংস। অন্যপ্রান্তে অর্ধশতকের স্বাদ পান জাজাই। শেষপর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৪৫ বলে ৫৯ রানে। ৩টি চারের সঙ্গে ৫টি ছক্কা হাঁকান তিনি। সঙ্গে দারউইস রাসুলির ৮ বলে অপরাজিত ৯ রানের কল্যাণে ৮ উইকেটের বিশাল জয় পায় আফগানরা। বাংলাদেশের হয়ে মেহেদী আর মাহমুদউল্লাহ ১টি করে উইকেট নেন।

এর আগে মিরপুরে টস জিতে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। শুরুটা ভালো হয়নি তাদের। ইনিংসের প্রথম ওভারে ব্যাট থেকে কোনো রান নিতে পারেননি মুনিম শাহরিয়ার। রানের জন্য হাপিত্যেশ করতে থাকেন, যদিও বাউন্ডারিও পেয়ে যান ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে। আগের ম্যাচের মতো এদিনও চার দিয়ে রানের খাতা খোলেন মুনিম। মুনিমের ব্যাটিংয়ের ধরণ বেশ ভালোভাবেই পড়ে ফেলেন অভিজ্ঞ মোহাম্মদ নবী। ওই চার রানেই প্যাভিলিয়নে মুনিম। 

আগের ম্যাচে ব্যাট হাতে রানের ফোয়ারা ছোটানো লিটন দাস এদিন ব্যাটিং ঝড়ের বার্তা দেন ফারুকিকে ফাইন লেগ দিয়ে উড়িয়ে মেরে। তবে সেই ইনিংসটি বড় করতে পারেননি লিটন। আজমতউল্লাহর বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ব্যক্তিগত ১৩ রানে। ১০ বলের ইনিংসে বাউন্ডারী ওই একটিই। ব্যাট হাতে ব্যর্থ হলেও আজ আবারও সুযোগ পান নাঈম শেখ। তবে সেটি কাজে না লাগিয়ে টেস্ট মেজাজের ব্যাটিংয়ে উল্টো দলের উপর চাপ বাড়াতে থাকেন। আউট হন ১৯ বলে ১৩ করে।

এদিন নাঈমের থেকে বেশি রক্ষণাত্মক ছিলেন সাকিব আল হাসান। আগের ম্যাচে ৬ বলে ৫ করা সাকিব এদিন ব্যর্থ, আউট হন মাত্র ৯ রান করে। যেখানে ৬০ স্ট্রাইক রেটে ১৫ বল খরচ করলেও কোনো বাউন্ডারি নেই। ১০ ওভারে ৪৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ দল। এরপর পঞ্চম উইকেটে মাহমুদউল্লাহর রিয়াদের সঙ্গে ৪৩ রানের পার্টনারশিপ গড়েন নিজের ১০০তম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা মুশফিকুর রহিম। তাদের জুটিতেই ইনিংসের ১২তম ওভারে এসে ৩৮ বল পর বাউন্ডারির সন্ধান পায় স্বাগতিকরা। 

দ্রুত রান তুলতে গিয়েই বিপত্তি বাঁধে। ইনিংসের ১৫তম ওভারে রাশিদ খানে কাটা পড়েন মাহমুদউল্লাহ। ৩ চারে ১৪ বলে করেন ২১ রান। ৪৩ রানের জুটি ভাঙার পর সাজঘরে মুশফিকও। ফারুকির দ্বিতীয় শিকার হন ২৫ বলে ৩০ রানে। যেখানে তার ব্যাট থেকে আসে ৪টি চারের মার। একই ওভারে শেখ মেহেদীকে রানের খাতা খোলার আগেই ফেরান ফারুকি। আফিফও ব্যাট হাতে ব্যর্থ হলে বড় রানের স্বপ্ন ফিকে হয়ে যায় বাংলাদেশ দলের।

 

শেষদিকে মুস্তাফিজুর রহমানের ৫ বলে ৬ এবং নাসুম আহমেদের ৫ রানের কল্যাণে ব্যাটিং ব্যর্থতায় ১১৫ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। এতে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে ১১৫ রান তোলে স্বাগতিকরা। 

Link copied!