জীবনের ওপর দিয়ে রীতিমতো ঝড় বয়ে গেছে তরুণ ফুটবলার মোহাম্মদ ইলিয়াসের। ২৫ পেরুনো তরুণকে অল্প বয়সেই দেখতে হয়েছে কঠিন বাস্তবতাকে। তারপরও দমে যাননি। সমস্ত বাধার সাগর পেরিয়ে এগিয়ে চলেছেন সদর্পে। গেল প্রায় দেড় বছর দিন-রাত কিভাবে পার করেছেন তা কেবল ইলিয়াসই জানেন। ইলিয়াসের গর্ভধারিনী মা পর পর দু’বার স্ট্রোকজনিত কারণে দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর ছিলেন শয্যাশায়ী। অসুস্থ মাকে সুস্থ করে তুলতে ফুটবলে কিছুটা ছন্দপতন ঘটেছে তার। কিন্তু প্রিয় খেলা একেবারে ছেড়ে দেননি। অসুস্থ মাকে সময় দেয়ার পাশাপাশি নিয়মিত ফুটবল অনুশীলন এবং ফিটনেস নিয়ে কাজ করেছেন। মা এখন আগের চেয়ে অনেকটাই সুস্থ। তাই চলতি মৌসুম দিয়ে আবারো প্রিমিয়ার লিগে ফেরার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন এ উইঙ্গার।
ফুটবলাররা যে এক একজন গ্ল্যাডিয়েটর সেটা ইলিয়াস আরেকবার প্রমাণ করেছেন। মাঠে যেমন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ফুটবল যুদ্ধে অবতীর্ণ হোন তারা; তেমনি মাঠের বাইরে জীবনটাও তাদের কম বড় যুদ্ধক্ষেত্র নয়। ইলিয়াস তার জ্বলন্ত উদাহরণ। অথচ কী দারুণভাবেই না ক্যারিয়ারটা শুরু করেছিলেন টাঙ্গাইয়ের ভূঁঞাপুরের এ ফুটবলার। ২০১৭-১৮ মৌসুমে পুরনো ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ক্লাব রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটিতে খেলার মধ্য দিয়ে দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ আসর প্রিমিয়ার লিগে তার যাত্রা। ব্রাদার্সের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে রহমতগঞ্জের জার্সিতে শুরু। অভিষেক ম্যাচেই গোল করে আলোচনার জন্ম দেন। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। টানা দুই মৌসুম খেলেছেন দেশের শীর্ষ ক্লাব শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রে। করোনার জন্য বাতিল হওয়া লিগটা গোনায় ধরলে তিন মৌসুম খেলেছেন শেখ রাসেলে। এরপরই তার জীবনের নেমে আসে ঘোর অমানিশা।
মাকে সুস্থ করে তোলার পাশাপাশি ফুটবল ক্যারিয়ারটা যেন অঙ্কুরেই বিনষ্ট না হয় সেজন্য গত বছর প্রিমিয়ার লিগে চেষ্টা না করলেও খেলেছেন বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে (বিসিএল)। নোফেল স্পোর্টিং ক্লাবের জার্সিতে। স্বল্প সময়ে লিগটা শেষ করে আবারো মায়ের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। তবে এখন মা নিজেই হাঁটাচলা করতে পারছেন বলে ফুটবলে পুরোদমে মনোনিবেশ করেছেন ইলিয়াস। সামনে প্রিমিয়ার লিগের দলবদল শুরু হতে যাচ্ছে। পুরনো ট্র্যাকে ফেরার জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ঢাকার দু/একটা ক্লাবের সঙ্গে ইতোমধ্যে অনানুষ্ঠানিক কথা হয়েছে তার।
এ প্রসঙ্গে ইলিয়াস বলেন, ‘খেলায় একবার ছেদ পড়লে কিংবা আপনি ওপর থেকে নিচে নেমে গেলে সেখানে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। আমাকেও সেসব বাধার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। তবে মাকে সুস্থ করার দায়িত্বের চেয়ে ওই মুহূর্তে আমার কাছে আর কিছু বড় মনে হয়নি। সকলের দোয়ায় এখন মা সুস্থ আছেন। আমিও পুরোদমে ফুটবল অনুশীলন করছি। প্রত্যাশা রাখি আবারো পুরনো ট্র্যাকে ফিরে আসব। ক্লাব কর্মকর্তারা আমার খেলা পূর্বে দেখেছেন। তারা নিশ্চয়ই আমাকে মূল্যায়ণ করবেন। তবে সব কিছুর ওপর যার যার রিজিক। আল্লাহ পাক ভাগ্যে কী রেখেছেন সেটা ওনিই একমাত্র জানেন। আমার কাজ শুধু চেষ্টা করে যাওয়া। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।’