চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে গুলিবিদ্ধ হয়ে বিভিন্নস্থানে ৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নির্বাচনী সহিংসতায় আহত হয়েছেন আরও ৫৩ জন। তবে, এই নির্বাচন বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনার বাইরে সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছেন নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে।
নির্বাচনী সহিংসতায় ঠাকুরগাঁও, পটুয়াখালী ও সিলেটে ৩ জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন, সিলেটের আব্দুস সালাম, পটুয়াখালীর আবদুল খালেক এবং ঠাকুরগাঁওয়ের হামিদুল ইসলাম।
এদিকে,রবিবার (২৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নির্বাচন শেষে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার জানিয়েছেন চতুর্থ ধাপে ৮৩৬ ইউনিয়ন পরিষদে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ হয়েছে। দিনভর ভোটকেন্দ্রে জনগণের সম্পৃক্ততা ছিল বলেও দাবি করেন তিনি।
ইসি সচিব বলেন, “প্রায় ৫৮টি জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে জনগণের সম্পৃক্ততা ছিল। ভোটগ্রহণ করতে গিয়ে ১৫টি ভোটকেন্দ্র প্রিসাইডিং অফিসারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকায় ওই সব কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ করা হয়েছে। বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ছাড়া সব মিলিয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে।”
ইসি সচিব আরও বলেন, “ভোটগ্রহণকারী ২৯ জন আহত হয়েছেন। প্রার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে ৬৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ।”
এদিকে, সিলেটের গোলাপগঞ্জে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষে ঘটনা ঘটেছে। রবিবার (২৬ ডিসেম্বর) রাত ৮টার দিকে উপজেলার সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের ফুলবাড়ি ইউনিয়নের বৈটিকর বাজারে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে ৷ এ ঘটনায় আব্দুস সালাম (৪০) নামে এক সাইকেল মেকানিকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও এ সংঘর্ষে ৮ / ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
আব্দুস সালাম গোলাপগঞ্জের লক্ষিপাশা ইউপির রামপা দক্ষিণ ভাগ এলাকার বাসিন্দা।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রবিবার রাত ৮টার দিকে গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নে দুটি ভোটকেন্দ্রের উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে বৈটিকর এলাকায় পুলিশ ও গ্রামবাসীর মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় পুলিশসহ কয়েকজন এলাকাবাসী আহত হন। এ সময় আব্দুস সালাম নামের একজন আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তবে তিনি কীভাবে মারা গেছেন তা সঠিকভাবে কেউ বলতে পারেনি।
এ বিষয়ে গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ গোলাম কবির বলেন, ‘একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। তবে তিনি কার গুলিতে মারা গেছেন, সেটি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’
পটুয়াখালী ও ঠাকুরগাঁওয়ে ২ জন মারা গেছেন
পটুয়াখালী ও ঠাকুরগাঁও জেলায় নির্বাচনী সহিংসতায় দুজন নিহত হয়েছেন। রবিবার চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায় তারা মারা যান।
জানা গেছে, রবিবার সন্ধ্যার পর পটুয়াখালীর চরমন্তাজ ইউনিয়নের নয়ার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে আবদুল খালেক নামে এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তিনি ওই ইউনিয়নের মেম্বার প্রার্থী জিয়ার সমর্থক ছিলেন।
রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান সোহাগ হাওলাদার বলেন, “আমি শুনেছি ওখানে ঝামেলা হয়েছে। তবে গুলিবিদ্ধ হয়েছে কি না তা জানি না। আপনি অন্যভাবে জানার চেষ্টা করুন। আমরা এখন নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে ব্যস্ত আছি।”
অন্যদিকে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রাজাগাঁও ইউনিয়নে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে ওই ইউনিয়নের দক্ষিণ আসান নগর গ্রামের হামিদুল ইসলাম (৪২) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “রাজাগাঁও ইউনিয়নের ভোটগ্রহণ শেষে ব্যালট পেপার ভর্তি বাক্স নিয়ে নির্বাচন কাজে সংশ্লিষ্টরা ইউএনও অফিসে আসার সময় লোকজন রাস্তা অবরোধ করে। উত্তপ্ত জনতাকে নিবৃত্ত করতে পুলিশ গুলি ছোড়ে। এতে শটগানের গুলিতে একজন ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান।”
তিনি জানান, অপর আরেক ঘটনায় আখানগর ইউনিয়নের দক্ষিণ ঝাড়গাঁও দাখিল মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রে আবু হোসেন (৪৫) পুলিশের গুলিতে আহত হন। তিনি এখন ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. রাকিবুল আলম বলেন, ‘হামিদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত ব্যক্তির পিঠে ও বুকে শটগানের গুলি রয়েছে। গুলিতে আহত আরেক ব্যক্তি আবু হোসেনের চিকিৎসা চলছে।’
এর আগে দ্বিতীয় ধাপে ৬ জন ও তৃতীয় ধাপে নির্বাচনের দিন সহিংসতায় নিহত হয়েছিলেন ৭ জন। এ নিয়ে সারা দেশে নির্বাচনী সহিংসতায় মারা গেছেন ৭০ জন।