৭২ ঘণ্টা পর ধর্ষণ মামলা না নেওয়ার নির্দেশ ন্যায়নীতির পরিপন্থী: সুলতানা কামাল

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

নভেম্বর ১২, ২০২১, ১০:২৭ পিএম

৭২ ঘণ্টা পর ধর্ষণ মামলা না নেওয়ার নির্দেশ ন্যায়নীতির পরিপন্থী: সুলতানা কামাল

রাজধানীর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণ মামলার সব (৫ জন) আসামিকে খালাস দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি রায় দেওয়ার পর আদালত নির্দেশনা দিয়েছেন, ধর্ষণের অভিযোগের ক্ষেত্রে ৭২ ঘণ্টা পার হলে পুলিশ যেন মামলা না নেয়।

এ নির্দেশনার বিষয়টি নিয়ে সমালোচনায় মুখর হয়েছেন নারী ও মানবাধিকারকর্মীরা। এ বিষয়টিকে ন্যায়নীতির পরিপন্থী বলে উল্লেখ করেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল।

সুলতানা কামাল প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন, নির্দেশনাটি কোনো বিচারেই সংগত হয়েছে বলা যায় না। প্রথমত, ফৌজদারি অপরাধের বিরুদ্ধে মামলা করার কোনো সময়সীমা আমাদের প্রচলিত আইনব্যবস্থায় বেঁধে দেওয়া নেই। বিচারকের এ নির্দেশনা সম্পূর্ণ বেআইনি। ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলে ধর্ষণের আলামত খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়, সে কারণে এই সময়সীমা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা যত উন্নত প্রযুক্তির দিকে এগোচ্ছি, অপরাধ নির্ণয়ে নানা সুযোগ আমাদের সামনে উন্মুক্ত হচ্ছে।

তিনি বলেন, ধর্ষণের মামলায় ডিএনএ পরীক্ষা তেমন একটি উপায়। অপরাধ যাতে প্রমাণ করা যায়, সে বিষয়ের ওপর জোর না দিয়ে বিচারক ৭২ ঘণ্টার পরে মামলা না নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে ধর্ষণের শিকার মানুষের বিচার পাওয়ার পথে কঠিন অন্তরায় সৃষ্টি করলেন। আর একটি কথা, ধর্ষক বা ধর্ষকেরা ভুক্তভোগীকে ৭২ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখতে পারলেই নিজেদের বিচারের আওতামুক্ত থাকা নিশ্চিত করে নিতে পারল।

এসময় তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘মাননীয় আদালত একবারও এ মামলার বিচার করতে গিয়ে ভুক্তভোগীকে ন্যায়বিচার দেওয়ার কথা চিন্তা করে বিচারকার্য সমাধা করলেন কি?

সুলতানা কামাল এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘রায়টি অত্যন্ত হতাশাব্যাঞ্জক। এটি এই সময়কার বহুল আলোচিত একটি মামলাই শুধু নয়, কলঙ্কিত মামলাগুলোর মধ্যে একটি। যেভাবে এ মামলার ঘটনাগুলো ঘটেছে, পরবর্তী সময়ে তার যে বিবরণ আমরা পেয়েছি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টালবাহানা, ভুক্তভোগীদের হয়রানি, চিকিৎসকদের ভূমিকা, সর্বোপরি অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থানের প্রভাব, নানা ঘটনা আছে। তাতে এ মামলার প্রথম থেকেই সবার মনে এ শঙ্কা তৈরি করেছিল যে এ ধরনেরই একটি রায় আসতে পারে। আমাদের সেই শঙ্কাকেই সত্য প্রমাণ করে এমন একটি রায় পাওয়া গেল, যা আমাদের বিচারব্যবস্থার প্রতি এখনো যতটুকু আস্থা রাখার চেষ্টা করি আমরা, তার ওপর কঠিন আঘাত হানল। এ রায় কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’

ধর্ষণ মামলা নেওয়ার ক্ষেত্রে আদালত একটি সময় নির্ধারণ করে দেওয়ায় ধর্ষণের শিকার নারীর আইনি সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা আরও কি বাড়ল না এবং ন্যায়বিচারের দৃষ্টিতে এ পর্যবেক্ষণ কতটুকু সংগত এমন এক প্রশ্নের জবাবে সুলতানা কামাল বলেন, এ পর্যবেক্ষণ ন্যায়বিচারের সব ন্যায়নীতির পরিপন্থী। একটি মানবিক সমাজ, যে সমাজে স্বাধীন, সৎ, নিরপেক্ষ এবং দুর্নীতিমুক্ত বিচারব্যবস্থা একটি অন্যতম প্রধান শর্ত; সেখানে কোনো বিচারকের কাছ থেকে এমন পর্যবেক্ষণ গ্রহণযোগ্য নয়।

এই নির্দেশনার মধ্য দিয়ে আদালত নানা পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে অপরাধ করে নিষ্কৃতি পাওয়ার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

Link copied!