নভেম্বর ১৭, ২০২১, ০৪:২৮ পিএম
আলোচিত বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণ মামলার লিখিত রায়ে ধর্ষণের পর ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলে মামলা না নিতে পুলিশকে দেওয়া নির্দেশনার কোনো উল্লেখ নেই। মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) রাতে ওই মামলার প্রকাশিত লিখিত রায় থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
এর আগে, ওই মামলার বিচারক কামরুন্নাহার গত ১১ নভেম্বর রায়ে স্বাক্ষর করেন। পরে ওই রায়ের কপি আইন মন্ত্রণালয় ও সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো হয়।
চার বছর আগে দুই তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় গত ১১ নভেম্বর রায় দেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর তৎকালীন বিচারক মোছা. কামরুন্নাহার। রায়ে পাঁচ আসামি আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ, তার বন্ধু সাদমান সাকিফ, নাঈম আশরাফ, সাফাতের দেহরক্ষী রহমত আলী ও গাড়িচালক বিল্লাল হোসেনকে খালাস দেন।
সেই রায়ের পর কৌঁসুলিদের উদ্ধৃত করে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয় যে, রায় ঘোষণার সময় বিচারক নির্দেশনা দিয়েছেন যে, ধর্ষণের অভিযোগের ক্ষেত্রে ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলে পুলিশ যেন মামলা না নেয়।
আদালতের এমন নির্দেশনায় আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীরা প্রশ্ন তোলেন। তারা বলেন, এই নির্দেশনা সংবিধান ও ন্যায়নীতির পরিপন্থী।
এই ঘটনায় সমালোচনার মধ্যে গত শনিবার ওই বিচারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ওই বিচারকের পর্যবেক্ষণ সম্পূর্ণ বেআইনি ও অসাংবিধানিক। গত রোববার প্রধান বিচারপতি ওই বিচারককে আদালতে না বসতে নির্দেশ দেন। পরে তাকে ট্রাইব্যুনাল থেকে প্রত্যাহার করে আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত করা হয়।
রায়ে বিচারক লিখেছেন, প্রাপ্তবয়স্ক বাদীদের যদি ঘটনার পরপর বা দ্রুত সময়ের মধ্যে ডাক্তারি পরীক্ষা হতো, তাহলে ধর্ষণের চিহ্ন বাদীদের পক্ষে যেত। ৩৮ দিন পর মামলা হওয়া ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ইংরেজিতে লেখা ৫৪ পৃষ্ঠার লিখিত রায়ে ধর্ষণের অভিযোগের ক্ষেত্রে ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলে পুলিশ যেন মামলা না নেয়, সে-সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা বা পর্যবেক্ষণ পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক তরুণী ধর্ষণের অভিযোগে বনানী থানায় মামলা করেন।
ওই বছরের ৩ জুন একটি মেডিকেল বোর্ড ভিকটিমদের ফরেনসিক রিপোর্ট পুলিশের কাছে জমা দেয়। মামলায় অভিযোগ অনুসারে, অভিযুক্তরা বাদী এবং তার এক বন্ধুকে ঢাকার রেইনট্রি হোটেলে আটকে রেখে দুজনের ওপরই নির্যাতন চালায়। মামলাটি সে সময়েও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টির পাশাপাশি দেশজুড়ে ধর্ষণ-বিরোধী জনমত গড়ে তুলে।