দেশে উৎপাদিত করোনার টিকা ‘বঙ্গভ্যাক্স’ শতভাগ কার্যকর বলে দাবি করেছে এর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড। সোমবার (০১/১১/২০২১) দুপুরে বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলে (বিএমআরসি) এ বিষয়ে জমা দেওয়া এক প্রতিবেদনে এ দাবি করেছে গ্লোব বায়োটেক।
সম্প্রতি বিএমআরসির নির্দেশনা অনুসারে বানরের দেহে চালানো পরীক্ষার ফলাফলে এমন তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদন জমার পর গ্লোব বায়োটেক কতৃর্পক্ষ আশা করছে, দ্রুত তাদের পরবর্তী ধাপ অর্থাৎ মানবদেহে পরীক্ষার অনুমোদন দেয়া হবে। বলা হচ্ছে, বঙ্গভ্যাক্স টিকাটি প্রাকৃতিক বিশুদ্ধ এমআরএনএ (মেসেঞ্জার রাইবোনিউক্লিক এসিড) দিয়ে তৈরি, তাই এটি সবচেয়ে বেশি নিরাপদ ও কার্যকর হওয়ার সুযোগ রয়েছে। বঙ্গভ্যাক্স টিকাটি এক ডোজের। টিকাটি অনুমতি পেলে বিদেশেও চাহিদা তৈরি হবে।
গ্লোব বায়োটেকের সিনিয়র ম্যানেজার (কোয়ালিটি অ্যান্ড রেগুলেটরি) ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানান, ইঁদুরের দেহে টিকাটি পরীক্ষা করে ৯৫ শতাংশ কার্যকারিতা মিলেছিল। টিকাটি শতভাগ নিরাপদ বলেও প্রমাণিত হয়। পরে বিএমআরসির নির্দেশনা অনুসারে বানরের দেহে পরীক্ষা চালানো হয়। প্রাথমিক ফলাফলে টিকাটি বানরের দেহে সম্পূর্ণ নিরাপদ ও কার্যকর এন্টিবডি তৈরি করতে সক্ষম হয়! এরপর বানরের দেহে আরেক দফা পরীক্ষা চালানো হয় যাকে বলা হয় চ্যালেঞ্জ ট্রায়াল। এই পরীক্ষায় করোনার কতটি ভেরিয়েন্টে বঙ্গভ্যাক্স কাজ করে তা দেখা হয়। ফলাফলে দেখা গেছে এ পর্যন্ত করোনার যতগুলো ভেরিয়েন্ট এসেছে তার সব কটিতেই টিকাটি শতভাগ কার্যকর।
বাংলাদেশে কোভিড-১৯ শনাক্ত হওয়ার পর দেশিয় ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস গ্রুপ অব কোম্পানিজ লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড ২০২০ সালের ২ জুলাই দেশে প্রথমবারের মতো কোভিড-১৯ (করোনাভাইরাস) রোগের টিকা (ভ্যাকসিন) আবিষ্কারের ঘোষণা দেয়। এর প্রায় সাড়ে তিন মাসের মাথায় ১৫ অক্টোবর গ্লোব বায়োটেকের তিনটি টিকাকে (ডি সিক্স ওয়ান ফোর জি ভেরিয়েন্ট এমআরএনএ ভ্যাক্সিন (D614G), ডিএনএ প্লাজমিড ভ্যাক্সিনস এবং অ্যাডনোভাইরাস টাইপ-5 ভেক্টর ভ্যাক্সিন) সম্ভাব্য টিকাপ্রার্থীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গ্লোব বায়োটেকই বিশ্বের একমাত্র প্রতিষ্ঠান যাদের সর্বোচ্চ তিনটি ভ্যাক্সিনের নাম তালিকায় রয়েছে।
এর আগে প্রতিষ্ঠানটি প্রাণিদেহে পরীক্ষা ও আনুষঙ্গিক গবেষণা শুরু করে। ইঁদুরের দেহে বঙ্গভ্যাক্স টিকার পরীক্ষা চালায়। চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি বঙ্গভ্যাক্সের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের নীতিগত পরীক্ষার জন্য বিএমআরসির কাছে প্রটোকল জমা দেয়া হয়।
এরপর বিএমআরসির চাহিদা অনুযায়ী সংশোধিত প্রটোকল জমা দেয় ১৭ ফেব্রুয়ারি। গত ২২ জুন বিএমআরসি মানবদেহে বঙ্গভ্যাক্সের পরীক্ষা চালানোর অনুমতি দেয়, যদিও এর আগে বানর বা শিম্পাঞ্জির দেহে পরীক্ষা করার শর্ত দেওয়া হয়। গত ১ আগস্ট প্রতিষ্ঠানটি বানরের দেহে পরীক্ষা শুরু করে, যা শেষ হয় ২১শে অক্টোবর। গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড ২০১৫ সালে ক্যানসার, আর্থ্রাইটিস, রক্তস্বল্পতা, উচ্চ রক্তচাপ, অটোইমিউন ডিজিজসহ অন্যান্য দুরারোগ্য রোগ নিরাময়ের জন্য বায়োলজিক্স, নভেল ড্রাগ এবং বায়োসিমিলার উৎপাদনের লক্ষ্যে অত্যাধুনিক গবেষণাগার স্থাপনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রয়োজনে গ্লোব বায়োটেক গবেষণার পাশাপাশি কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ কিট, টিকা ও ওষুধ আবিষ্কার সংক্রান্ত গবেষণা শুরু করে।
বিএমআরসির নির্দেশনা অনুসারে বানরের দেহে চালানো বঙ্গভ্যাক্স পরীক্ষার ফলাফল সমপর্কিত প্রতিবেদন আজ সোমবার (০১/১১/২০২১) দুপুরে বিএমআরসিতে জমা দেওয়া হয়েছে। একই সাথে বিএমআরসির ৩য় চিঠির সকল প্রশ্নের জবাবও দেওয়ার হয়েছে!
এর মধ্য দিয়ে বিএমআরসির ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পূর্বশর্তসহ সকল পর্যবেক্ষনের যথাযথ উওর দেওয়া শেষ হয়েছে! যদি বিএমআরসি আর কালক্ষেপণ না করে অতি দ্রুত নৈতিক অনুমতি দিয়ে দেয়, তাহলে আমরা ঔষধ প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে নভেম্বরের মধ্যেই মানবদেহে পরীক্ষা শুরু করতে পারবো বলে আশা করছি! বানর আর মানুষের মধ্যে জিনগত বেশ মিল থাকায় এবং বানরের পরীক্ষায় 'বঙ্গভ্যাক্স' সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং শতভাগ কার্যকর প্রমাণিত হওয়ায়, আমরা খুবই আশাবাদী যে 'বঙ্গভ্যাক্স' মানবদেহেও অনুরুপভাবে কাজ করবে!