বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের অনুদান বন্ধ করতে দুই বছর আগে চিঠি দিয়েছিল বিএনপি। এমনকি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের ওয়াশিংটন সফরে তাকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে চাপে ফেলতে লবিস্ট ফার্ম দিয়ে তদবিরও করায় দলটি। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে দেওয়া বিএনপি ও লবিস্ট ফার্ম ব্লু-স্টার স্ট্র্যাটেজিসের চিঠি বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য মিলেছে। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ৈসময় টিভির অনলাইন নিউজ পোর্টাল সময়নিউজডটটিভি’র এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই দলের লবিস্ট নিয়োগের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যে বিএনপির লবিস্ট নিয়োগ ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন দফতরে দলটির তদবিরের কিছু নথিপত্র এসেছে সময় সংবাদের হাতে। নথি বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগে ও পরে মার্কিন বিভিন্ন দফতরে বিএনপি অর্ধশতাধিক চিঠি চালাচালি করে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সাড়ে ৩ মাস পর ২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিল মার্কিন সিনেট কমিটি, সাব কমিটি ও হাউস কমিটির চেয়ারম্যান ও সদস্য মিলিয়ে ৫ জনকে চিঠি লেখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ কমিটির কাজ বাংলাদেশকে দেওয়া মার্কিন সহায়তা ও অনুদান মূল্যায়ন করা।
ওই চিঠিতে মির্জা ফখরুল লেখেন-‘২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন গভীর ত্রুটিপূর্ণ। আওয়ামী লীগ সরকারের নানা পদক্ষেপ রোহিঙ্গা সংকটকে আরও খারাপের দিকে নিচ্ছে। বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিন স্বার্থ স্থায়ী করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই এটি নিশ্চিত করতে একটি কার্যকর উপায় হিসেবে মার্কিন বরাদ্দকরণ প্রক্রিয়াকে কাজে লাগাতে হবে। বাংলাদেশকে দেওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুদান পূণ-মূল্যায়ন করা উচিত।’
২৪ এপ্রিল ২০১৯: বিদেশবিষয়ক হাউস ও সিনেটের মূল ও সাব-কমিটির ৫ জন চেয়ারম্যান এবং এ সংক্রান্ত বিভিন্ন কমিটির আরও ৫ সদস্যকে চিঠি লেখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এসব চিঠিতে বিএনপির মহাসচিব উল্লেখ করেন-‘আমরা কংগ্রেস নেতাদের কাছে আবেদন করছি যেন তারা ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেন দ্রুত আন্তর্জাতিক তদন্তের উদ্যোগ নেয়।’ এসব চিঠিতে আন্তর্জাতিক ৭টি সংস্থার নির্বাচনী পর্যবেক্ষণও তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল।
এর আগে একই বছরের ১৬ জানুয়ারি বিএনপির নিয়োগ করা লবিস্ট প্রতিষ্ঠান ব্লু-স্টার স্ট্র্যাটেজিস বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওয়াশিংটন সফরের এক সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক দুটি অধিদফতরে চিঠি দেয়। চিঠিতে মন্ত্রীকে জবাবদিহির মুখোমুখি করতে এবং ২০১৮'র নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অসন্তোষ জানাতে তদবির করা হয়।
ওই চিঠিতে বলা হয়-‘আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াশিংটন সফর করবেন। আমরা আশা করি যুক্তরাষ্ট্র সরকার এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের ত্রুটিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলবে এবং তাকে জবাবদিহির মুখোমুখি করবে।’
সব চিঠি বিএনপির দলীয় প্যাডে লেখা হয়েছে। ঠিকানা দেওয়া হয়েছে দলটির নয়াপল্টন অফিসের। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের আগে পাঠানো চিঠির প্রেরকের জায়গায় ব্লু-স্টার স্ট্র্যাটেজিস ও বিএনপির নাম লেখা হয়।