মার্চ ৫, ২০২৩, ০৫:৩৯ পিএম
আজ ৫ মার্চ। ১৯৭১ সালের এদিন বিক্ষোভ মিছিলে উত্তাল সারাদেশ। দফায় দফায় চলে বৈঠক। সারা দেশে পালিত হয় হরতাল।
এদিন সকালে মিলিটারির বুলেটে টঙ্গিতে ক্ষত-বিক্ষত হয় চার শ্রমিকের দেহ। আহত হন আরও ২৫ জন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ জনতার ক্ষোভের বাঁধ ভেঙে যায়। রাজশাহী-রংপুরে আবারও জারি করা হয় কারফিউ।
পরক্ষণেই ছাত্রলীগের উদ্যোগে ছাত্র-জনতা টঙ্গির নিহত শ্রমিকদের লাশ নিয়ে ঢাকায় মিছিল বের করে।
বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে গোটা দেশকে রক্তে রঞ্জিত করে পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী। চট্টগ্রামে নিহত হয় ৩ জন। ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় আরও ১৪ জনের। এদিন পর্যন্ত চট্টগ্রামে আন্দোলনে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩৮। খুলনায় ২ জন ও রাজশাহীতে ১ জন নিহত হয়।
নিরীহ জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে গণহত্যার মাধ্যমে পাকিস্তানি স্বৈরাচারী অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়েছিল সেদিন।
সেদিন বঙ্গবন্ধু এক বিবৃতিতে জানান, কেবল ঢাকা ও আশপাশেই সেনাবাহিনীর গুলিতে কমপক্ষে ৩০০ জন প্রাণ হারান এবং ২০০ জন আহত হন।
প্রতিটি মসজিদে জুমার নামাজের পর শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। সারা দেশে আয়োজন করা হয় প্রতিবাদ সভা ও শোভাযাত্রা।
১৯৭১ সালের ৪ মার্চ সংগ্রামী জনতার প্রতি অভিনন্দন জানিয়ে বিবৃতি দেন বঙ্গবন্ধু। শোষণ ও উপনিবেশবাদী শাসন অব্যাহত রাখার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বানে সাড়া দেওয়ায় বীর জনতাকে অভিনন্দন জানান তিনি। ৫ মার্চ দৈনিক ইত্তেফাকের প্রথম পাতায় এ নিয়ে একটি খবর প্রকাশিত হয়।
তৎকালীন আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, ‘বিশ্ববাসী দেখে রাখুক. বাংলাদেশের নিরস্ত্র ছাত্র-শ্রমিক-জনতা বুলেটের মুখেও কী দুর্দান্ত সাহস ও দৃঢ়তার সঙ্গে তাদের অধিকার হরণের চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে।’
ঢাকায় ছাত্রলীগের উদ্যোগে বের করা হয় লাঠি মিছিল।
আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয় পূর্ববাংলা শ্রমিক ফেডারেশন, শ্রমিক লীগ, শ্রমিক ফেডারেশন, মজদুর ফেডারেশন, নিখিল পাকিস্তান মহিলা সমিতি, সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতি, মহিলা সংসদ, পান রফতানি সমিতি, গণমুক্তি দল ও চলচ্চিত্র সমাজসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন।
বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিকেলে কবি সাহিত্যিক ও শিক্ষকরা মিছিল নিয়ে রাজপথে নেমে আসেন। শহীদ মিনারে আহমদ শরীফের নেতৃত্বে এক সভায় তারা স্বাধীনতার শপথ নেন।
এ দিনে ঘটে যায় এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ফটক ভেঙে ৩২৫ কয়েদি মিছিল করে চলে আসে শহীদ মিনারে। যোগ দেয় স্বাধীনতা সংগ্রামে। ঘাতকের নির্মম বুলেট সেদিন আটকে রাখতে পারেনি বন্দিদেরও।
এদিকে, সন্ধ্যায় সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়, ঢাকায় সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদেশি বেতারে প্রচারিত ‘শেখ মুজিব জনাব ভুট্টোর সঙ্গে ক্ষমতা ভাগ ভাটোয়ারা করতে রাজি আছেন’ সংক্রান্ত সংবাদকে ‘কল্পনার ফানুস’ আখ্যায়িত করেন।
রাতে আরেক বিবৃতিতে তৎকালীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ বলেন, ঢাকা চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর ও সিলেটসহ বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানে সেনাবাহিনীর গুলিতে নিরীহ-নিরস্ত্র শ্রমিক, কৃষক ও ছাত্রদের হত্যা করা হয়েছে। নির্বিচারে নিরস্ত্র মানুষকে এভাবে হত্যা করা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ছাড়া আর কিছুই নয়।
মুক্তিকামী বাঙালির উত্তাল ও অপ্রতিরোধ্য আন্দোলন রুখতে পারেনি পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী। একে একে তৈরি হয় স্বাধীন বাংলা জয়ের নীলনকশা।