ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৩, ০৫:৪৭ পিএম
দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় পর (৪৫ বছর) ঢাকায় ফের দূতাবাস চালু করেছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনা। সোমবার (২৭ ফ্রেবুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর বনানীর বি ব্লকের ২৩ নম্বর সড়কের ৫০ নম্বর প্লটের একটি ভবনে আর্জেন্টিনা দূতাবাস উদ্বোধন করেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সান্তিয়াগো ক্যাফিয়েরো। এ সময় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, “দুই দেশের জন্য আনন্দের মুহূর্ত, এটি ঐতিহাসিক ঘটনা। অভিনন্দন জানাচ্ছি আর্জেন্টিনাকে। এই দূতাবাসের মধ্যে দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক আরও ভাল হবে। বিশ্বকাপ জয়ের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের প্রেসিডেন্টকে অভিনন্দন জানিয়ে চিঠি দেন। আর্জেন্টিনাও ইতিবাচক সাড়া দেয়। পুনরায় দূতাবাস চালুর ফলে দুই দেশের সম্পর্কে উন্নত হবে।
আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সান্তিয়াগো ক্যাফিয়েরো বলেন, “১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে আর্জেন্টিনা দূতাবাস খোলা হয়। কয়েকবছর পর জান্তা সরকারের সময় অ্যাম্বাসি বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশের মানুষ আর্জেন্টিনার জন্য অনবরত ভালোবাসা দেখিয়ে গিয়েছে। তারা আর্জেন্টিনাকে ভুলে যায়নি, সেজন্যই আবারও দূতাবাস চালু করছি।”
সান্তিয়াগো ক্যাফিয়েরো আরও বলেন, “এটা শুধু দুই দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়নই নয়; বরং দেশের জনগণের আবেগেরও বিষয়। বাংলাদেশের মানুষের প্রতি আর্জেন্টিনার ভালোবাসা আছে। যে কারণে আজ এখানে দূতাবাস খোলা হলো। এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও গতি পাবে।”
এর আগে, সোমবার সকালে ঢাকায় পৌঁছান দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সান্তিয়াগো ক্যাফিয়েরো। দূতাবাসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সফরের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সান্তিয়াগো ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাবেন। একই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথেসৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন তিনি।
এছাড়া বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গেও বৈঠক করবেন সান্তিয়াগো। ওইদিন বিকেলে সান্তিয়াগো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর অনূর্ধ্ব–১৪ ফুটবলারদের প্রীতি ফুটবল ম্যাচ দেখবেন বলে জানা গেছে।
এর বাইরে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সঙ্গে বিজনেস টু বিজনেস বৈঠকে থাকবেন আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৮ সালে দূতাবাস বন্ধ করে দেয় লাতিন আমেরিকার ম্যারোডোনা-মেসিদের দেশটি। এর ফলে দীর্ঘ চার দশকের বেশি সময় পর ফের বাংলাদেশে মিশন চালু করল আর্জেন্টিনা। গত বছরের শেষের দিকে পুনরায় ঢাকায় দূতাবাস খোলার বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়। তবে কাতার বিশ্বকাপের সময় আর্জেন্টিনা দলের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের সমর্থনে মুগ্ধ হয় দেশটি। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকায় পুনরায় দূতাবাস খোলার বিষয়টি গতি পায়।
ঢাকায় আর্জেন্টিনার দূতাবাস চালুর বিষয়টি মূলত সামনে আসে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একটি টুইটকে কেন্দ্র করে। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সান্তিয়াগো এক টুইটে জানান, ঢাকায় ১৯৭৮ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া তাঁর দেশের দূতাবাস পুনরায় চালুর বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সাথে আলোচনা হয়েছে।
আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের প্রতি বাংলাদেশের জোরালো সমর্থন দীর্ঘদিনের। তবে সদ্য সমাপ্ত কাতার বিশ্বকাপের সময় আর্জেন্টিনা দলের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের আবেগ মিডিয়ার বদৌলতে বিশ্ববাসীর মনোযোগ কাড়ে। বিশেষ করে আর্জেন্টিনার খেলার আগে-পরে বাংলাদেশের সমর্থকদের প্রতিক্রিয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে সারা বিশ্বে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে দূতাবাস খোলার আগ্রহ দেখায় আর্জেন্টিনা।