মার্চ ১, ২০২৩, ০৪:১৩ পিএম
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখা ছাত্রলীগের পাঁচ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
বুধবার (১ মার্চ) বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংগঠনবিরোধী, শৃঙ্খলা পরিপন্থী, অপরাধমূলক এবং সংগঠনের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয় এমন কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, কর্মী তাবাসসুম ইসলাম, হালিমা খাতুন ঊর্মি, ইসরাত জাহান মিম ও মোয়াবিয়া জাহানকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হলো।
এর আগে গত রোববার ‘র্যাগিং ও যৌন হয়রানি বিরোধী পদযাত্রা’ শেষে সমাবেশে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে মর্মান্তিক ঘটনায় তারা বেদনায় নীল হয়েছেন। ফুলপরীকে তারা স্যালুট জানান।
এ দিকে বুধবার সকালে ইবির শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত থাকায় সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ পাঁচ ছাত্রীকে সব ধরনের শিক্ষার কার্যক্রম থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে প্রভোস্ট শামসুল আলমকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঘটনাটি নিয়ে দুটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ কয়েক দফা নির্দেশসহ আদেশ দেন। আদালত আগামী ৮ মের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন। সেদিন প্রয়োজনীয় আদেশের জন্য তারিখ রেখেছেন আদালত।
হাইকোর্ট ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) র্যাগিং বন্ধসহ ৬টি নির্দেশনা দিয়েছেন। বিচারপতি জেবিএম হাসান ও রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেন, সম্প্রতি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা তাদের রাজনৈতিক পরিচয় অপব্যবহার করছেন, যা তাদের রাজনৈতিক দলের ইমেজও নষ্ট করছে।
ছয় নির্দেশনা হলো-
সাময়িক বহিষ্কৃত পাঁচজন কোনো একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থাকতে পারবেন না। ইবির হলগুলোর সিসিটিভি মনিটরিং বাড়াতে হবে। নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনকে তিন দিনের মধ্যে তার পছন্দমতো হলে আবাসিকতা দেয়ার নির্দেশ। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। ৮ মে পরবর্তী আদেশ এবং এর মধ্যে আদেশগুলো পালন করে আদালতকে জানাতে হবে।
এ ছাড়া পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, যে ফোনে সেদিন রাতের ভিডিও ধারণ করা হয়েছে তা উদ্ধার করে তা মুছে ফেলতে হবে। এসপি পাবনা এবং এসপি কুষ্টিয়াকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে ভিকটিমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশ, একই সঙ্গে যারা সাক্ষী দিয়েছেন তাদেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
নির্যাতনকারী বহিস্কৃত ওই পাঁচ শিক্ষার্থী হলেন- ইবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ছাত্রলীগ কর্মী ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম, আইন বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের ইসরাত জাহান মীম, ফাইন আর্টস বিভাগের হালিমা খাতুন উর্মি ও ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের মোয়াবিয়া। অন্তরা ছাড়া সবাই ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত ৫ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে এক ছাত্রীকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। ভুক্তভোগী ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে– তারা ওই ছাত্রীকে মারধর করে ও তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে রাখেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি সকালে ভয় পেয়ে হল ছেড়ে বাড়ি চলে যান ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী। পরে র্যাগিংয়ের নামে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তার বিচার ও নিরাপত্তা চেয়ে প্রক্টর ও ছাত্র-উপদেষ্টা দফতর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে হল প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শাখা ছাত্রলীগ পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে। বিষয়টি হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্টের নির্দেশে ক্যাম্পাস ছাড়েন অভিযুক্তরা। হাইকোর্টের নির্দেশে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন।