জকসু নিয়ে বাধা এলে সবাইকে সব বলে দেব: জবি উপাচার্য

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

আগস্ট ২৪, ২০২৫, ০৫:১০ পিএম

জকসু নিয়ে বাধা এলে সবাইকে সব বলে দেব: জবি উপাচার্য

ছবি: সংগৃহীত

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নিয়ে কাজ করার সময়ে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হলে সবাইকে ‘সব কথা জানিয়ে দেবেন বলে সতর্ক করেছেন উপাচার্য মো. রেজাউল করিম।

জকসুর নীতিমালা পাস হওয়ার পর তা ইউজিসি, শিক্ষা ও আইন মন্ত্রণালয়ের ধাপ পার হয়ে আইনি রূপ পাওয়ার, তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন করা হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন উপাচার্য।

রোববার, ২৪ আগস্ট দুপুর দেড়টার দিকে উপাচার্য রেজাউল করিম তার কক্ষে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, “মঙ্গলবার আমরা সিন্ডিকেট সভা ডেকে নীতিমালা নিয়ে আলোচনা করব। সেই নীতিমালা পাশ হলে তা ইউজিসিতে যাবে। তারপর সেটা শিক্ষামন্ত্রণালয় হয়ে আইন মন্ত্রণালয় যাবে। সেখান থেকে শিক্ষামন্ত্রণালয় হয়ে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে আইন পাশ হবে। আর আইন হওয়ার পর আগামী ৯০ দিনের মধ্যে জকসু নির্বাচনের আয়োজন করব।”  

তিনি বলেন, “জকসু নিয়ে কাজ করতে এখন পর্যন্ত কোনো বাধা পাইনি, পরবর্তীতে বাধা আসলে আমিও সবাইকে সব কথা জানিয়ে দেব।”

আবাসন খাতে সম্পূরক বৃত্তি এবং জকসু নীতিমালা ও সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা-এই দুই দফা দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কক্ষের সামনে শিক্ষার্থীরা ‘ব্রেক দ্য সাইলেন্স’ কর্মসূচি পালন করেন।

সকালে ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারের সামনে দুই ঘন্টা অবস্থানের পর দুপুর ১২টায় প্রশাসনিক ভবনের উপাচার্য কক্ষের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা।

এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘আটটা টু আটটা, বাজায় কার ঘণ্টা’, ‘ভিসি স্যার জানেন না নাকি, আমরা এখানে বসে গেছি’, ‘ভিসি স্যার শুনছেন নাকি, আমরা এখানে বইসা গেছি’, ‘হচ্ছে হবে বাদ দাও, কবে হবে বলে দাও’, ‘করছি করছি বাদ দাও, কবে হবে বলে দাও’, ‘জ্বালরে জ্বালো, আগুন জ্বালো’, ‘সিন্ডিকেটের গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথে’, ‘জকসু আমার অধিকার, রুখে দেওয়ার সাধ্য কার’, ‘বৃত্তি আমার অধিকার মুখে দেওয়ার সাধ্য কার’, ‘বিপ্লবে বলীয়ান, নির্ভীক জবিয়ান’সহ বিভিন্ন স্লোগান তেলেন।

মার্কেটিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জাহিদুল জনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের সাথে তামাশা করছে। তারা সব সময় আশ্বাসদের কিন্তু বাস্তবে তার উল্টোটা দেখা যায়। সব ক্যাম্পাসের সব দাবি পূরণ করা হয় কিন্তু জবিয়ানরা বঞ্চনার শিকার হয়ে আসছে। আমাদের দাবি না মানলে প্রশাসনকে চরম মূল্য দিতে হবে।” খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।  

অবস্থান কর্মসূচির বিষয়ে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ জগন্নাথ শাখার আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের সাথে প্রহসন করছে। আমরা ‘লংমার্চ টু যমুনার’ পরও এখনো আন্দোলন করতে হচ্ছে এটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক। সম্পূরক বৃত্তি এটা কারো দয়া নয় আমাদের অধিকার। জকসু হচ্ছে শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক চর্চার স্থান। সুস্পষ্ট রোডম্যাপসহ আমরা আমাদের দাবির বাস্তব প্রতিফলন চাই।”

“আগের মত এবারও উপাচার্য স্যার এসে আমাদের হচ্ছে-হবে বলছেন। দুই দফা দাবির বিষয়ে কোনো আপোস চলবে না। যতক্ষণ না দাবি আদায় হয় ততক্ষণই আন্দোলন চলবে। আমরা আমাদের অবস্থানে অটল।”

জগন্নাথ পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তর হওয়ার আগে কলেজ সময়ে মোট ১৪ বার ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে। তার মধ্যে সর্বপ্রথম নির্বাচন হয় ১৯৫৪-৫৫ শিক্ষাবর্ষে। সবশেষ ১৯৮৭-৮৮ শিক্ষাবর্ষে ছাত্রসংসদের ভিপি নির্বাচিত হন মো. আলমগীর সিকদার লোটন ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন জাহাঙ্গীর সিকদার জোটন।

এরপর ২০০৫ সালে কলেজ থেকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫’ এ ছাত্র সংসদ সম্পর্কিত কোনো ধারা না থাকায় প্রতিষ্ঠার পর একবারও জকসু নির্বাচন হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বহুবার নির্বাচন দাবি করলেও এই ‘আইনি জটিলতার’ কারণে তা আয়োজন করা যায়নি।

চলতি বছরের ২ জানুয়ারি ৯৯তম সিন্ডিকেট সভায় প্রথমবারের মত জকসুর জন্য একটি নীতিমালার খসড়া উত্থাপন করা হয়। পরে শিক্ষার্থীদের মতামত নেওয়ার শর্তে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে নীতিমালা সংশোধনের জন্য নতুন একটি কমিটি গঠন করা হয়।

জকসুর সংশোধিত নীতিমালাটি এদিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়ার কথা রয়েছে কমিটির।

উপাচার্যের দপ্তর বলছে, নীতিমালাটি হাতে পাওয়ার পর মঙ্গলবার একটি বিশেষ সিন্ডিকেট সভা আয়োজন করে তা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) পাঠানো হবে।

Link copied!