ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৪, ১২:৪১ পিএম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগের পর আজ আরও এক নারী শিক্ষার্থী লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, বিভাগের একজন নারী শিক্ষার্থীর সাথে ঘটে যাওয়া মৌখিক যৌন হয়রানি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন অধ্যাপক নাদির জুনাইদ।
আজ রবিবার ওই নারী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থীকে ইঙ্গিত করে তাঁর এক সহপাঠী অন্য আরেক সহপাঠীকে বলেছিল, ‘ওকে খেতে আসছিস?’ এই মন্তব্যের পর ওই নারী শিক্ষার্থী বিভাগের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। এই বিষয়ে তদন্তের জন্য অধ্যাপক নাদির জুনাইদকে দায়িত্ব দেয় বিভাগ। এরপর ওই নারী শিক্ষার্থী নাদির জুনাইদের সাথে দেখা করেন। ভুক্তভোগী নারী জানান, নাদির জুনাইদ বিষয়টি অনেক হালকা করে ফেলেন এবং অভিযুক্তদের দোষ ঢাকতে চান।
আরও পড়ুন: ঢাবির সাংবাদিকতা বিভাগে ফলাফলে ধস; আত্মপক্ষ সমর্থনে যা বললেন অভিযুক্ত অধ্যাপক
ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থী বলেন, ‘তিনি অভিযুক্তদের সামনেই আমাকে বলেন, তুমি এখনও অনেক ছোট। তাই সামনে আরও অনেক কিছু এক্সপেরিয়েন্স করতে হবে। ভবিষ্যতে তুমি বিসিএস বা বড় চাকরি করতে গেলেও তোমার কলিগদের দ্বারা এমন কটু কথা শুনতে পার। তাই বলে কি তুমি চাকরি ছেড়ে দেবে? এসব কোনো ব্যাপার না।’
ওই নারী বলেন, ‘এ ধরনের কথা আমার শিক্ষকের কাছ থেকে শুনে আমি অবাক হয়েছি। কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না। আমি বিচারের রুমে বসেই কেঁদে ফেলেছিলাম। এই ঘটনার জন্য আমি যেন কোথাও বিচার চাইতে না যাই এজন্য তিনি কঠোরভাবে বলে দিয়েছিলেন।’
সম্প্রতি নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির যে অভিযোগ উঠেছে তার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন এই শিক্ষার্থী।
আরও পড়ুন: ঢাবি অধ্যাপকের বিরুদ্ধে এবার যৌন নিপীড়নের অভিযোগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. আবুল মনসুর আহাম্মদ বলেন, গতকাল প্রক্টরকে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর আজ বিষয়টি নিয়ে তিনি ও বিভাগের দুজন শিক্ষক উপাচার্যের সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে সভা করেছিলে। সেখানে প্রক্টরও উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরাও তাদের বক্তব্য রাখেন। এদিকে প্রক্টর লিখিত অভিযোগগুলো উপাচার্যের কাছে পাঠিয়েছেন। কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করেছেন যে এসব বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’
এদিকে, যৌন অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
সেইসঙ্গে অভিযোগের তদন্ত ও বিচার না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে না ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
রোববার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিভাগের বারান্দায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন ১৩ থেকে ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। পরে তারা মিছিল নিয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। দুপুর ২টায় অপরাজেয় বাংলার সামনে মানববন্ধনও করেন তারা।
বিক্ষোভ থেকে শিক্ষক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা। তারা তিনটি দাবি তুলে ধরেন।
দাবিগুলো হল- নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন নিপীড়নের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন করা; দ্রুত অপরাধারীকে শাস্তির আওতায় আনা; তদন্ত চলাকালে বা অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সকল অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকে শিক্ষক নাদির জুনাইদকে বিরত রাখা।