ঢাবি অধ্যাপকের বিরুদ্ধে এবার যৌন নিপীড়নের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৪, ১০:২৮ এএম

ঢাবি অধ্যাপকের বিরুদ্ধে এবার যৌন নিপীড়নের অভিযোগ

অধ্যাপক নাদির জুনাইদ।

ব্যক্তিগত আক্রোশে শিক্ষার্থীদের ফলাফলে ধস নামানোর জন্য অভিযুক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে এবার যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছেন উক্ত বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থী।

শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ আনেন ওই শিক্ষার্থী।অভিযোগপত্রে উক্ত শিক্ষার্থীর সঙ্গে অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদের বিভিন্ন হয়রানির বিষয় তুলে ধরেন তিনি। উক্ত নারী শিক্ষার্থীর অভিযোগ পত্র গ্রহণ করার  বিষয়টি দ্য রিপোর্ট লাইভকে নিশ্চিত করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাকসুদুর রহমান।

এই নারী শিক্ষার্থীর অভিযোগপত্র থেকে জন্য যায়, অধ্যাপক নাদির জুনাইদ তার ফেসবুক আইডি (বর্তমানে Centaur Phoenix নামে একাউন্টটি আছে, উল্লেখ্য তিনি ঘনঘন ফেসবুক আইডির নাম পরিবর্তন এবং আইডি খোলেন) থেকে মেসেজ করতেন তাকে বিয়ের প্রসঙ্গে কথা বলে স্পষ্টভাবে তার দিকে ইঙ্গিত করেন। যা নাকচ করে দেওয়ার পরও নাদির জুনাইদ অন্তরঙ্গ বিষয় নিয়ে অনেক কথা বলতে চাইতেন। তার শারীরিক অবয়র সম্পর্কে নোংরা মন্তব্য করতেন এবং যৌন উত্তেজনা প্রকাশ করতেন। 

আরও পড়ুন: ঢাবি অধ্যাপকের বিরুদ্ধে এবার যৌন নিপীড়নের অভিযোগ

ওই শিক্ষার্থী জানান, ‘উনি আমার শরীরের স্পর্শকাতর জায়গা নিয়ে প্রশ্ন করতেন, দেখতে কেমন, ইত্যাদি নানান কথার প্রশ্ন উনি খুব আগ্রহের সাথে জিজ্ঞেস করতেন।উনি আমার সাথে এমন কথাবার্তা বলতেন, এমন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতেন আমার প্রতি, যার বেশিরভাগ কথাই সাধারণত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে হয়ে থাকে। তিনি  বলতেন, ধরে নাও তোমার সাথে বিয়ে হলে, তোমার সাথে এটা করলে ওটা করলে কেমন হতো।’

নাদির জুনাইদ কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে বিভাগের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে তাকে এবং অন্য শিক্ষার্থীদেরও নজরদারি করা ও তাদের নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করা ছাড়াও অনেক শিক্ষার্থীকেই বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার কথা জানান ওই শিক্ষার্থী।

ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘উনি সাধারণত ১০-১১টার মধ্যে কল দিতেন। কিন্তু যৌন ইংগিতপূর্ণ কথা শুরু করলে গভীর রাত পর্যন্ত কথা বলতে চাইতেন। এই ধরনের কথাগুলো ছিল আমার জন্যে তীব্র যন্ত্রণার। আমি কত রাত ঘুমাতে পারিনি, কত দিন এই অস্বস্তি এবং মানসিক কষ্ট নিয়ে রাত দিন পার করেছি কেউ জানে না।কিন্তু শিক্ষক হওয়ায় আমার উপর দেড় বছর ধরে হওয়া যৌন নিপীড়ন মুখ বুজে সহ্য করেছি। এবং আগে থেকে বলতে হচ্ছে যে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করবো না।’

অধ্যাপক নাদির জুনাইদের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিতে আবেদন জানান ওই শিক্ষার্থী।

আরও পড়ুন: এবার মৌখিক যৌন হয়রানি ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগ উঠলো অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে

অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাকসুদুর রহমান জানান, ‘একজন নারী শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন, আমরা অভিযোগটি গ্রহণ করেছি। ভিসি স্যারের কাছে অভিযোগ পত্রটি পাঠানো হবে এরপর তিনি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।’

এর আগে, বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কম নম্বর দেয়ার অভিযোগ তুলে উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১২তম ব্যাচের ২৮জন শিক্ষার্থী।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পরীক্ষার ফলাফলে ধস নামিয়ে দিয়েছেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মাস্টার্স দ্বিতীয় সিমেস্টারের কোর্সের সমন্বয়ক ছিলেন অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদ। ফলে তিনি মাস্টার্সের পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান ও সমন্বিত কোর্সের পরীক্ষক ছিলেন। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ওই কোর্সটিতে ৫৪জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩৫ জনই চার পয়েন্টের স্কেলে ৩ এর নিচে পেয়েছেন। এর মধ্যে ২.৫০ পেয়েছেন ১৪ জন, ২.২৫ পেয়েছেন ১২জন, ২.০০ পেয়েছে পাঁচজন। এর মধ্যে, স্নাতক পর্যায়ে ফলাফলে প্রথম দশজনের মধ্যে মাস্টার্সে ভর্তি হওয়া ৬ জনের মধ্যে একজনই ২.৭৫ পেয়েছেন। অন্যরা ২.২৫ এর নিচে পেয়েছেন। এ ধরনের গ্রেডস-কে ‘নজীরবিহীন’ বলছেন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। 

আরও পড়ুন: ঢাবির সাংবাদিকতা বিভাগে ফলাফলে ধস; আত্মপক্ষ সমর্থনে যা বললেন অভিযুক্ত অধ্যাপক

ভাইভায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ভাইভাতে অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করে পরীক্ষার্থীদের ভীতসন্ত্রস্ত্র করে ফেলতেন তিনি। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে জানা প্রশ্নের উত্তরও ভুল হয়ে যাচ্ছিল। ব্যাচের শিক্ষার্থী শাফাত রহমান ফেসবুকে লেখেন, তিনি ভাইভাতে আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন, ‘ইন্দিরা গান্ধীর সন্তান কতজন?’ আরেক শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞেস করেন, ‘কয়েকটি কুকুরের জাতের নাম বল’। আরেক শিক্ষার্থী বলেন, তিনি আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন, কপিল দেব ১৯৮৩ বিশ্বকাপে যার রেকর্ড ছিল, সেই খেলোয়াড়ের দেশের সাথে পরের বিশ্বকাপে দুইটা রেকর্ড করে। রেকর্ডগুলো কী কী?’ -এ ধরনের অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করে তিনি অন্য পরীক্ষকদের সামনেও শিক্ষার্থীর ‘ইম্প্রেশন’ খারাপ করে দেন। এরই প্রতিফলন ঘটেছে কম্পিহেনসিভের নাম্বারে।

বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি ভাইভাতে ‘ইয়েস’ বলে তার একটা প্রশ্নের সাড়া দিয়েছিলাম। কেন তাকে ‘স্যার’ সম্বোধন করিনি- এনিয়ে অন্তত দশ মিনিট ধরে আমাকে বকাঝকা করেন। ফলে ভাইভার শুরুতেই আমি নার্ভাস হয়ে যাই। সব সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর শেষে তিনি আমাকে প্রশ্ন করতে শুরু করেন। তিনি আমাকে এত প্রশ্ন করতে শুরু করেন যে অন্য একজন শিক্ষক তাকে শেষ করার অনুরোধ করেন। এরপর অন্তত ৫-৭টি প্রশ্ন করেন। স্বাভাবিকভাবে সেসময় তিনি এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছিলেন যে আমি জানা প্রশ্নের উত্তরও ভুল করছিলাম। ’

Link copied!