ডিসেম্বর ২, ২০২৩, ০২:১৭ পিএম
জরুরি সমন্বিত পদক্ষেপই জলবায়ু বিষয়ক আসন্ন বিপর্যয় রোধ করবে বলে মনে করছেন বিশ্ব নেতারা। এক্ষেত্রে তহবিলের পাশাপাশি সেটির যথাযথ ব্যবহার প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।
জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে (কপ-২৮) অংশ নিয়ে অংশীজনরা প্রতিনিয়তই আলোচনা করছেন সঙ্কট সমাধানের। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপের অংশ হিসাবে সরকারি-বেসরকারি খাতের অংশীদারিত্বের আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জলবায়ু বিপর্যয় থেকে বিশ্বকে বাঁচাতে উদাত্ম আহ্বান জানিয়েছেন ব্রিটিশ রাজা চার্লস। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, ‘পৃথিবী আমাদের নয়, আমরাই পৃথিবীর। প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগ এরই মধ্যে বিপদের মুখে থাকা বিভিন্ন দ্বীপ দেশসহ ভারত, বাংলাদেশের নানা অংশে তাণ্ডব ঘটিয়েছে; পাকিস্তান নজিরবিহীন বন্যার মুখোমুখি হয়েছে। আট বছর আগে ফ্রান্সের প্যারিসে কপ২১ সম্মেলনে ভাষণ দিতে পেরে আমি উদ্বেলিত হয়েছিলাম। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি হয়েছিল। সেটি ছিল আশা, ইতিবাচকতার এক মাইলফলক মুহূর্ত। বিভিন্ন দেশ মতবিরোধ সরিয়ে রেখে ভাল কিছু করার জন্য একত্রিত হয়েছিল।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রতিটি দেশকে তাদের জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আজ সারা বিশ্ব আমাদের দেখছে। পৃথিবী তার ভবিষ্যৎ রক্ষার জন্য আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমাদের সফল হতে হবে।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেন, আমরা প্রত্যেককে সাহায্য করার জন্য আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে বাস্তববাদী হওয়া উচিত। শুধু বিশ্বনেতা হলেই হবে না এটাও নিশ্চিত করকে হবে যে আমরা ঘরের মানুষদের চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি কিনা।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বলেন, গ্রুপ অফ সেভেন (জি৭) কে জলবায়ু সুরক্ষায় অন্যান্য দেশের জন্য উদাহরন স্থাপন করতে হবে। কয়লাকে অযৌক্তিক উল্লেখ করে ২০৩০ সালের মধ্যে কয়লার অবসান ঘটাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
জাতিসংঘের শীর্ষ জলবায়ু কর্মকর্তা সাইমন ইমানুয়েল কারভিন স্টিয়েল বলেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা নতুন রেকর্ড ভেঙেছে, যা এই বছরটিকে রেকর্ডে সবচেয়ে উষ্ণ করে তুলেছে, এবং বিপদজনকভাবে ১.৫ সেলসিয়াসের থ্রেশহোল্ডের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। অথচ দেশগুলো প্যারিস চুক্তিতে এই তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রাক-শিল্প স্তরের উপরে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখতে সম্মত হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সীমার মধ্যে থাকার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস করা এখনও সম্ভব, তবে আরও বিলম্ব বিপজ্জনক হবে। অথচ প্রতি বছর আমরা বিন্দুর মতো শিশুর পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমাদের আরও বড় পদক্ষেপ নেয়া দরকার। যদি আমরা এই দৌঁড়ে থাকতে চাই তাহলে প্রতিটি বছরের সঙ্গে আমাদের আরও বড় লাফ দিতে হবে। আমাদের কি করতে হবে বিজ্ঞান তা একেবারে পরিষ্কার করে বলে দিয়েছে।
৩০ বিলিয়ন ডলারের জলবায়ু তহবিল গঠনের ঘোষণা
৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি জলবায়ু তহবিল গঠনের ঘোষণা দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) দেশটির প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান এ ঘোষণা দেন। এই তহবিলের মাধ্যমে চলতি দশকের শেষে বিশ্বব্যাপী আরও ২৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন সংযুক্ত আরব আমিরাতের ঘোষিত তহবিলটির নাম দেওয়া হয়েছে আলতেরা। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় এই তহবিলটি বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি বিনিয়োগ তহবিল হতে যাচ্ছে।
আবুধাবি-ভিত্তিক বিনিয়োগ তহবিল লুনেট এই তহবিলটি গঠন করেছে। কপ ২৮ সম্মেলনের সভাপতি ড. সুলতান আল জাবের এই তহবিলটিকে আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়নের একটি নতুন যুগের সূচনা বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, আলতেরার পরিধি এবং কাঠামো জলবায়ু কেন্দ্রিক বিনিয়োগে একটি চক্রবৃদ্ধি প্রভাব তৈরি করবে।
আলতেরা প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো, গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোতে কার্বন নির্গমন হ্রাসে ভূমিকা রাখে এমন বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থের প্রবাহ বাড়ানো। যুক্তরাষ্ট্রের ব্ল্যাকরক ইঙ্ক, কানাডার ব্রুক ফিল্ড আলতেরার এই তহবিলে অংশীদার। এই তহবিলের কিছু অর্থ ইতোমধ্যেই ভারতে পুনর্নবীকরণযোগ্য প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।
মেহেদী আল আমিন, দুবাই থেকে