যান্ত্রিক কোলাহল এড়িয়ে ঢাকার কাছেই বনভোজনে যেতে পারেন যেখানে

সায়কা সিদ্দিকী

নভেম্বর ২৯, ২০২৩, ০৯:২১ পিএম

যান্ত্রিক কোলাহল এড়িয়ে ঢাকার কাছেই বনভোজনে যেতে পারেন যেখানে

ছবি: সংগৃহীত

ব্যস্ততা এবং যান্ত্রিকতাময় জীবনে পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে শহরের বাইরে দূরে কোথাও যাওয়া বেশ দুষ্কর। আর রাজধানীর বুকে ঘুরে বেড়ানোর জায়গাগুলোয় সবসময়ই থাকে কোলাহল। এ অবস্থায় যদি মন চায় সবুজে ঘেরা ছায়া ঢাকা কোনো পরিবেশে ঘুরতে, তাহলে ভাবছেন কোথায় যাওয়া যায়?

ব্যস্ততার অবসানে একটু শান্তির নিমিত্তে যেখানে যেতে পারেন ঢাকাবাসী। ঢাকার অদূরে সাপ্তাহিক ছুটিতে দারুণভাবে কাটানো যেতে পারে পুরো একটি দিন। তেমনই কিছু ভ্রমণ স্থানের নাম জেনে নিন আপনিও...

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক : গাজীপুরের বাঘের বাজারে অবস্থিত সাফারি পার্ক  অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি দর্শনীয় স্থান। এতে রয়েছে ৫টি সেকশন- কোর সাফারি, সাফারি কিংডম, জীববৈচিত্র্য পার্ক, বিস্তৃত এশিয়ান সাফারি পার্ক ও বঙ্গবন্ধু চত্বর। বন্যপ্রাণীদের মধ্যে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার ও সাদা সিংহ তো আছেই। এছাড়া দেখা পাওয়া যাবে জেব্রা, হরিণ, বাইসন, ম্যাকাও, হর্নবিল, ময়ূর, হাতি, কুমির, চিত্রা হরিণ, বানর ও হনুমানের। আলাদাভাবে দৃষ্টি চলে যাবে জাতীয় ইতিহাস জাদুঘর, অ্যাকোয়ারিয়াম, হাঁসের পুকুর এবং ছোট প্রজাপতি ঘের। বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে বনভোজনের জন্য প্রবেশ মূল্য ৪০০ টাকা। এছাড়া জনপ্রতি ৫০ টাকা করে রাখা হয়। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে পার্কটি। 

সোনারগাঁও পানাম নগর : ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে নির্মিত হওয়া বাংলাদেশের হিন্দু বণিকদের সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত এই শহরটি এখন একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্থান। সোনারগাঁও লোক-শিল্প ও কারুশিল্প জাদুঘর, গোয়ালদী মসজিদ এবং সোনারগাঁয়ের অন্যান্য আকর্ষণগুলো দেখতে দেখতে সারাটা দিন কেটে যাবে। বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ দ্বারা সংরক্ষিত অঞ্চলটি রবিবার বাদে সপ্তাহের ৬ দিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকে দর্শনার্থীদের জন্য। মাত্র ১৫ টাকা প্রবেশ মূল্যে এই ঐতিহাসিক স্থানটি ঘুরে বেড়াতে পারবেন।

মৈনট ঘাট : প্রমত্তা নদী পদ্মার সাগরসম রূপের জন্য স্থানীয়দের কাছে এই মৈনট ঘাট মিনি সমুদ্র সৈকত নামে পরিচিত। এখানে আসার পথে নবাবগঞ্জের পথে দেখে নেওয়া যেতে পারে নবাবগঞ্জের জজবাড়ি, আনসার ক্যাম্প, কোকিলপ্যারি দালান, উকিলবাড়ি, খেলারাম দাতার বাড়ি বা আন্ধার কোঠার মতো ঐতিহাসিক কিছু দর্শনীয় স্থান। গুলিস্তান থেকে বাবু বাজার সেতু পার হয়ে দোহারের পথে এগোলে রাস্তা গিয়ে শেষ হয় মৈনট ঘাটে। এছাড়া মোহাম্মদপুরের বসিলা সেতু দিয়েও ওঠা যায় দোহারের রাস্তায়। যাওয়ার পথে মাওয়া ঘাটে পদ্মার পাড়ে ইলিশ ভাজাও খেয়ে নিতে পারেন। আরও রয়েছে কার্তিকপুর বাজারের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি ও বান্দুরা বাজারের চারা বিস্কুট।

জিন্দা পার্ক : নৌকা বাইচ, লাইব্রেরি, কৃত্রিমভাবে তৈরি খিলান-সুড়ঙ্গ এবং পদ্ম পুকুর; কোনো কিছুরই ঘাটতি নেই ঢাকাবাসীদের প্রিয় জিন্দা পার্কে। পরিবারকে নিয়ে পিকনিক করার জন্য একটি আদর্শ জায়গা এই পার্কটি। ১৯৮০ সালে জিন্দা গ্রামের অগ্রপথিক পল্লী সমিতির পাঁচ হাজার অধিবাসী দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে গড়েছেন এই অপূর্ব পার্কটি। পার্কে গাছের ওপর দেখা যাবে টং ঘর, মাটির ঘর, সুন্দর স্থাপত্যশৈলীর লাইব্রেরি ও ছোট্ট একটি চিড়িয়াখানা। পার্কের লেকে নৌবিহারের জন্য সাজানো আছে ৮টি নৌকা। কুড়িল হাইওয়ে ধরে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত যেয়ে বাঁয়ে বেশ খানিকটা ভেতরে গেলেই পাওয়া যাবে জিন্দা পার্ক। এখানে প্রবেশ টিকেট জনপ্রতি ১০০ টাকা। লাইব্রেরির প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা।

গোলাপ গ্রাম : সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের সাদুল্লাপুরে তুরাগ নদীর তীরে অবস্থিত গোলাপ ফুলের এক বিস্ময়কর রাজ্যের নাম গোলাপ গ্রাম। এখানকার লাল, হলুদ ও সাদাসহ রঙ-বেরঙের গোলাপগুলো যেকোনো পর্যটকের চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। রাজধানীতে গোলাপ ফুল যোগানের একটি বিরাট অংশ পূরণ করে এই গ্রামটি। গোলাপের ক্ষেত্রে মাঝ দিয়ে আঁকাবাঁকা সরু পথ নিমেষেই ভুলিয়ে দেবে শহরের কোলাহল। এখানকার শ্যামপুর গ্রামে প্রতি সন্ধ্যায় বসে গোলাপের জমজমাট হাট। সেখানকার আবুল কাশেম বাজার ছাড়াও মোস্তাপাড়ার সাবু বাজারের সন্ধ্যাগুলো প্রতিদিনি মুখরিত থাকে ফুল ব্যবসায়ীদের আনাগোনায়। ঢাকা থেকে বিরুলিয়ায় সরাসরি বাস সার্ভিস আছে। তবে মিরপুর ১-এর দিয়াবাড়ি বটতলা ঘাট থেকে নৌকা ভ্রমণটি সবচেয়ে রোমাঞ্চকর যাত্রা।

ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান : ঢাকা নগরবাসীর বনভোজনের জন্য সেরা জায়গা হলো গাজীপুর। আর সেই গাজীপুরের প্রধান আকর্ষণ হলো এই ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান। এখানে আছে চিড়িয়াখানা, ভাওয়ালের প্রাচীন গাছ শালের বন এবং একাধিক পিকনিক স্পট। চিড়িয়াখানায় দেখা মিলবে বাঘ, চিতাবাঘ, মেছোবাঘ, হাতি, ময়ূর ও হরিণের। থাকার জন্য আছে ১৩টি কটেজ এবং ৬টি বিশ্রামাগার। যাওয়ার জন্য আগে ভাগেই বুকিং দিয়ে নিতে হবে। উদ্যানটিতে জনপ্রতি ৫০ টাকা প্রবেশ মূল্যে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা অব্দি ঘুরে বেড়ানো যাবে। 

জল ও জঙ্গলের কাব্য : গাজীপুরের পুবাইলের এই রিসোর্টটি বিগত কয়েক বছর ধরে ভ্রমণপিপাসুদের প্রিয় জায়গায় পরিণত হয়েছে। স্থানীয়দের কাছে পাইলট বাড়ি নামে পরিচিত ৯০ বিঘা জায়গা জুড়ে গড়ে তোলা এই রিসোর্টটি। মাছ ধরা, শীতের পিঠাসহ অন্যান্য বাঙালি খাবার; সব মিলিয়ে গ্রামীণ আমেজ পাবেন এখানে। ডে আউট প্যাকেজে বড়দের জন্য খাবারের খরচ ২০০০ টাকা। বাচ্চাদের জন্য অথবা গাড়ি চালক থাকলে তাদের খরচ মাথাপিছু ১০০০ টাকা।  এখানে যেতে হলে ন্যূনতম ১০ জন মিলে যেতে হবে। আর ছুটির দিনের জন্য আগেই বুকিং দিয়ে যাওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ। 

নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্ট : বনভোজনের জন্য রিসোর্ট খুঁজতে গেলে ভ্রমণপিপাসুদের পছন্দের তালিকায় প্রথমেই থাকে গাজীপুর জেলার রাজেন্দ্রপুরের এই রিসোর্টটি। নাট্য দম্পতি তৌকির আহমেদ ও বিপাশা হায়াত ২০১১ সালে প্রায় ২৫ বিঘা জমির ওপর নির্মাণ করেন এই রিসোর্ট। সবুজে ঘেরা জায়গাটিতে গড়ে তোলা হয়েছে দীঘি, ঝর্ণা, সুইমিংপুল ও কনফারেন্স হল। তাই পরিবার-পরিজন কিংবা অফিসের কলিগদের নিয়ে পিকনিকে যাওয়ার ক্ষেত্রে নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্ট সেরা জায়গা। রিসোর্ট ঘুরে দেখতে ৫০০ টাকা প্রবেশ মূল্য দিতে হবে। তাই আর দেরি না করে আপনার প্রিয়জনদের সাথে নিয়ে ঘুরে আসুন আপনিও ।

Link copied!