অক্টোবর ৩১, ২০২৩, ১১:১৪ এএম
চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত ছাড়িয়ে গেছে যেন সব রেকর্ড। আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দুই লাখ ৭০ হাজার আর মৃতের সংখ্যাও প্রায় সাড়ে তেরশো। চলতি মাসে প্রতিদিনই প্রায় ২হাজার নতুন রোগী আর মৃতের সংখ্যা ছিল দুই অঙ্কে ।
চলতি বছর ডেঙ্গুর ধরণ ডেন টু আর থ্রি দাপিয়ে বেড়ালেও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) গবেষণায় মিলেছে ডেন ফোরের অস্তিত্ব। সেক্ষেত্রে আসছে বছর এ সেরোটাইপ দিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
নতুন এ ধরণ দিয়ে আবারও লাগামহীন হতে পারে পরিস্থিতি। তাই দেশজুড়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি নেয়ার তাগিদ দেন তারা।
ঢাকা মেডিকেল, সোহরাওয়ার্দী, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজসহ বেশকিছু হাসপাতাল থেকে ডেঙ্গু রোগীর নমুনা সংগ্রহের পর আইসিডিডিআরবির গবেষণা করেছে।
ওই গবেষণায় উঠে আসে এবারের বেশি আক্রান্তের সংখ্যা ডেঙ্গুর ধরণ ডেন টু আর থ্রি। তবে গত কয়েক বছর ডেন থ্রির প্রাদুর্ভাব থাকায় কিছুটা হলেও এন্টিবডি তৈরি হয়েছিল এ ধরণে।
তাই গুরুতর রোগীর অধিকাংশই শনাক্ত হয়েছে ডেন-টু। আবার মৃতের নমুনাও বলছে এ ধরণে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। তবে হঠাৎ করেই নতুন ধরন ডেন ফোরের অস্তিত্ব মিলেছে আইইডিসিআর এর ল্যাবে।
সম্প্রতি সময় সংবাদকে দেয়া সাক্ষাতকারে আইসিডিডিআরবির ভাইরোলজি ল্যাবরেটরির প্রধান ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণা করা হয়েছে।
সেখানে আমরা ডেঙ্গুর ধরণ ডেন ফোর পেয়েছি। তবে মাত্র একটি পাওয়া গেছে। কিন্তু পরবর্তীতে এ ডেঙ্গু ফোর আসবে না, তা কে বলতে পারে? পরবর্তী বছরে যদি ডেঙ্গু ফোর আসে তাহলে সেটা খুবই ভিন্ন ধরনের। শঙ্কা থেকেই যায়।
বিশেষজ্ঞরা জানান, নতুন শনাক্তের এ ডেন ফোর কিংবা ওয়ান এর ক্ষেত্রে যদি পরের বছর আক্রান্ত বাড়ে তাহলে সেটাও হতে পারে ভয়ঙ্কর।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, ডেঙ্গু ফোর মহামারি আকারে দেখা দিতে পারে, সেজন্য প্রতিনিয়ত মনিটরিং করতে হবে, মনিটরিং আমাদের প্রতিনিত করতে হবে এবং বাড়াতেও হবে।
সেক্ষেত্রে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া এডিস মশাবাহিত রোগ বশে আনতে ম্যালেরিয়ো কিংবা কালাজ্বর নিয়ন্ত্রণের মত কর্মসূচির অভিজ্ঞতা নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগকে এগিয়ে আসার পরামর্শ তাদের।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে নজির আহমেদ বলেন, আমাদের গ্রামের মানুষগুলো যেহেতু সবগুলো সেরোটাইপ দ্বারা আক্রান্ত হয়নি, সুতরাং তারা সেরাটাইপ ১ এবং ফোরের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা নেই তাদের। পাশাপাশি প্রযুক্তি নির্ভর নানা পরিকল্পনা নিয়ে বছরজুড়েই এডিস নিয়ন্ত্রণে কাজ করার তাগিদ দেন তিনি।
এদিকে সারাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত রবিবার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আটজনের মৃত্যু হয়েছে। এসময় হাসপাতালে ভর্তি হন এক হাজার ৭০৮ জন ডেঙ্গুরোগী। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩৪১ জনে।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন দুই লাখ ৬৯ হাজার ৩৮৮ জন। সোমবার (৩০ অক্টোবর)) স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অধিদফতর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এক হাজার ৭০৮ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৩৭৪ এবং ঢাকার বাইরের এক হাজার ৩৩৪ জন। অন্যদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া আটজনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা চারজন, ঢাকার বাইরের চারজন।
এদিকে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন দুই লাখ ৬১ হাজার ৫৮৪ জন। এদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৯৬ হাজার ১৬৩ জন এবং ঢাকার বাইরের এক লাখ ৬৫ হাজার ৪২১ জন।
২০২২ সালে ডেঙ্গুতে ২৮১ জন মারা যান। ঐ বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। একই সাথে আলোচ্য বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৬২ হাজার ৩৮২ জন।