গত ১০ ফেব্রুয়ারি পাবনা জেলায় ৯ মাসের গর্ভবতী এক গৃহবধূর প্রসববেদনা ওঠায় স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা তাঁর সিজারের পরামর্শ দেন। সিজারের পর দেখা গেল ওই নারীর গর্ভে কোনো সন্তান নেই। এ নিয়ে ওই নারীর পরিবার দোষারোপ করা হলে সিজার করা চিকিৎসক পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি বিশেষজ্ঞ শাহিন ফেরদৌস শানু বলেন, ‘রোগীর পেটে কোনো বাচ্চা ছিল না। মেডিক্যাল সায়েন্সের পরিভাষায় একে বলে ফ্যান্টম প্রেগন্যান্সি বা ভৌতিক গর্ভধারণ।’
গর্ভধারণ হয়নি কিন্তু গর্ভবতী মনে হওয়া আসলে একটি রোগ যার কারণে অনেককেই পারিবারিক জীবনে ভুক্তভোগী হতে হয়। আবার অনেক চিকিৎসককেও প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে।
এই রোগটি নিয়ে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের সাবেক গাইনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. সুধাকর কৈরী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে লিখেছেন। তাঁর সেই লেখাটি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
“Pseudocyesis(False pregnancy)
গর্ভ নয়, অথচ নিজেকে গর্ভবতী মনে করা।
এরকম ঘটনার মুখোমুখি আমাকে বেশ কয়েকবার হতে হয়েছে। মাসিক বন্ধ অনেক কারণেই হয়ে থাকে, তার মধ্যে প্রেগন্যান্সি অন্যতম কারণ। কোন কোন মহিলাদের হরমোনের তারতম্যের কারণে মাসিক বন্ধ হয়ে থাকে। তখন কেউ কেউ নিজেকে গর্ভবতী মনে করেন এবং মানসিক পরিবর্তন হয়ে থাকে। আর এই কারণে অনেকের গর্ভের লক্ষণগুলো যেমন বমির ভাব হয়ে থাকে, এমনকি অনেকে বমিও করে থাকেন। ধীরে ধীরে পেট বড় হতে থাকে, বিশেষ করে ওজন যাদের বেশী। অনেকে বাচ্চার নড়াচড়াও বুঝেন বলে জানান। এসবই ঘটে মানসিক পরিবর্তনের জন্য। তাদের পেটে হাত দিয়ে আমরা সহজে জরায়ু সনাক্ত করতে পারি না। তাদের হিসাবে ১০ মাস হয়ে গেলে অনেকে ব্যথাও অনুভব করে থাকেন।
আজকাল হাতের নাগালে আলট্রাসনোগ্রাফী করার সুযোগ থাকায় অতি সহজেই আমরা বলতে পারি যে তিনি গর্ভবতি নন। আমি যখন ১৯৮৫ সাল থেকে চিকিৎসা পেশায় আসি তখন আল্ট্রাসাউন্ড হাতের নাগালে ছিল না। তখন ইউরিন টেস্ট করিয়ে ভুল ভাঙাতে হতো। ঐ সময় গ্রাম অঞ্চলের অনেক মহিলা কোন টেস্ট করাতেন না, চিকিৎসকের কাছে যেতেন অনেক পরে।
এই প্রসঙ্গের অবতারণা করেছি পাবনার ঘটনা শুনার পর। ওখানে সবারই দোষ ছিল। ক্লিনিক, ক্লিনিকের কর্তব্যরত চিকিৎসক এবং সংশ্লিষ্ট গাইনীকোলজিস্টের। উনি পাবনার একজন স্বনামধন্য গাইনীকোলজিস্ট। ২০০১ সাল থেকে তিনি ঐ এলাকায় সেবা দিয়ে এসেছেন, অনেক মা ও নবজাতকের জীবন বাঁচাতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। আজ পরিনত বয়সে এমন ভুল তাঁর পক্ষে সম্ভব না হলেও তিনি ভুল করেছেন এবং মিডিয়াতে তিনি তা স্বীকারও করেছেন।
হলুদ সাংবাদিকতার কারণে তাঁকে বাচ্চা চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। যতদূর জানতে পেরেছি রোগীর লোকজন False pregnancy ব্যাপারটা বুঝতে পেরে তাঁদের অভিযোগ তুলে নিয়েছেন।
আসুন কোন সংবাদ ভাইরাল করার আগে একবার সত্যতা যাচাই করি।”