জুন ৩, ২০২২, ০৬:৩৬ পিএম
ইউক্রেনে রাশিয়ার সেনা অভিযান একশো দিনে গড়িয়েছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া এ অভিযান শুক্রবারে (৩ জুন) একশো দিন পূর্ণ হলো। এ সময়ে ইউক্রেনের ৫টি অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে মস্কো। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, তার দেশের ২০ শতাংশ অঞ্চল তথা পাঁচভাগের একভাগই রুশ বাহিনীর দখলে চলে গেছে। একই সঙ্গে রাশিয়াকে রুখতে আবারও পশ্চিমাদের কাছে অস্ত্র সহায়তা চেয়েছেন জেলেনস্কি। ইউক্রেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ দেয়া নৈতিক দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জোট প্রধান জেনস স্টোলটেনবার্গ।
সীমান্তে ইউক্রেনের সামরিক কর্মকাণ্ড বন্ধ ও ন্যাটোর সদস্যপদ লাভ ঠেকাতে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে বিশেষ সেনা অভিযান শুরু করে রাশিয়া। প্রতিদিনই সেখানে রুশ বাহিনীর সঙ্গে-ইউক্রেনের বাহিনীর হামলা, পাল্টা হামলা অব্যাহত আছে। দফায় দফায় গোলাবর্ষণে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে একের পর এক এলাকা। বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা।
সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল দোনবাসে সেনা অভিযান জোরদার করেছে রাশিয়া। এরপর থেকেই অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ নিতে প্রায় প্রতিদিনই তীব্র রকেট হামলা চালিয়ে আসছে পুতিন বাহিনী। এরই মধ্যে কয়েকটি অঞ্চলে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাও করেছে তারা। সর্বশেষ দোনেৎস্কের উপশহর সেভেরোদোনেৎস্ক দখলে নিতে গেল কয়েকদিন ধরেই দফায় দফায় গোলাবর্ষণ করে আসছে রুশ বাহিনী। ইউক্রেনীয় সেনারা অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ হারানোর দ্বারপ্রান্তে বলেও জানিয়েছেন স্থানীয় গভর্নর।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেছেন, চলমান পরিস্থিতিতে ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ দেয়া কেবল কৌশলগত সিদ্ধান্ত নয়, পাশাপাশি নৈতিক দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে। একইসঙ্গে, ইইউকে রুশ জ্বালানির ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ন্যাটো প্রধান বলেছেন, রাশিয়া ন্যাটোর পরিসর কমিয়ে আনতে চেয়েছিল বলেই জোট আজ সম্প্রসারণের পথে। ফিনল্যান্ড ও সুইডেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ দেয়া নিয়ে তুরস্ক আপত্তি তোলায় এ নিয়ে আঙ্কারার সঙ্গে আলোচনা চলছে বলেও জানান তিনি।
জাতিসংঘের তথ্য মতে, এ যুদ্ধ শিশুদের একটি বিধ্বংসী পরিণতির দিকে নিয়ে গেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এমন দৃশ্য আর দেখা যায়নি।ইউক্রেনের প্রধান প্রসিকিউটরের অফিস জানায়, রাশিয়ার হামলায় কমপক্ষে ২৪৩ শিশু মারা গেছে। আহত হয়েছে আরও ৪৪৬ শিশু। জাতিসংঘের ধারণা, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইউক্রেনে কমপক্ষে চার হাজার ১৪৯ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও চার হাজার ৯৪৫ জন।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার তথ্য মতে, যুদ্ধে ইউক্রেনে প্রতি ছয় জনের মধ্যে একজন অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এ ধরনের বাস্তুচ্যুত মানুষের মোট সংখ্যা ৭৭ লাখ।
ইউক্রেনের দাবি, যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে অন্তত ২৪ হাজার ২০০ রুশ সেনা নিহত হয়েছে। রাশিয়ান এবং ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিরা যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে মোট চার দফায় মুখোমুখি আলোচনায় বসেছে। এর মধ্যে তিন দফায় বেলারুশে এবং এক দফা তুরস্কে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেলারুশে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দুই পক্ষই বিরোধপূর্ণ অঞ্চল থেকে বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য মানবিক করিডোর বাস্তবায়নের বিষয়ে সম্মত হয়।
রাশিয়ার অভিযান মোকাবিলায় ইউক্রেনকে সমরাস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে পশ্চিমা বিশ্ব। নতুন করে ইউক্রেনকে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জার্মানি। চলমান পরিস্থিতিতে ইউক্রেনকে রক্ষায় মাঝারি পাল্লার রকেট সিস্টেম পাঠানোর বিষয়টি এক প্রকার নিশ্চিত বলছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন মনে করেন, পশ্চিমা বিশ্বের এইসব ভারী অস্ত্র দিয়েও এই অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।