নজিরবিহীন ধর্মঘটে যোগ দিল ৫ লাখ মানুষ, অচল যুক্তরাজ্য

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৩, ০৮:৩১ পিএম

নজিরবিহীন ধর্মঘটে যোগ দিল ৫ লাখ মানুষ, অচল যুক্তরাজ্য

ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্যে নজিরবিহীন এক ধর্মঘট হয়েছে। দেশটির বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ লাখেরও বেশি শিক্ষক-কর্মচারীসহ বেসরকারি কর্মচারী ও রেলওয়ের কর্মচারীরা বুধবার জোটবদ্ধভাবে ওই ধর্মঘট পালন করে। দেশজুড়ে ধর্মঘটের ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে সবকিছু।

বুধবার প্রাথমিকভাবে তিন লাখ শিক্ষক ধর্মঘটে যোগ দিতে পারেন বলে ধারণা করা হয়েছিল। তবে ধর্মঘট শুরুর পরই দেখা যায়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকসহ ৫ লাখেরও বেশি মানুষ কর্মস্থল থেকে এই ওয়াকআউটে অংশ নেন। গত এক দশকের মধ্যে শিক্ষক ধর্মঘটের এত মানুষের অংশগ্রহণ এটিই প্রথম।

কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, বুধবার শুরু হওয়া এই ধর্মঘট আরও কিছুদিন চলতে থাকলে ভয়াবহ সংকটে পড়বে দেশটি। সরকারের বেশকিছু সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে শুরুতে রাস্তায় নামেন শিক্ষকরা। তারপর সেখানে যুক্ত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, সরকারি কর্মী, ট্রেনচালকসহ বিভিন্ন খাতের কর্মীরা।

শিক্ষক ও বেসরকারি কর্মচারী ছাড়াও বুধবার দেশজুড়ে এই ধর্মঘটে অংশ নিয়েছেন শতাধিক সরকারি দপ্তরের এক লাখ সরকারি কর্মচারী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার প্রভাষক। এর মাঝে কয়েকটি সেক্টরের কর্মীরা ধর্মঘট রোধে নতুন আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে বৃস্পতিবারও সমাবেশ করেছে।

এ ছাড়া চলতি সপ্তাহে অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা দেশব্যাপী ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। অন্যদিকে আগামী সপ্তাহে নার্স, অ্যাম্বুলেন্স স্টাফ, প্যারামেডিকস, জরুরি ফোনকল গ্রহীতা এবং অন্য স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা আরও একবার ওয়াকআউটের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে।

দেশটির সাম্প্রতিক মুদ্রাস্ফীতি গত চার দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে উঠেছে। গত কয়েক মাস ধরেই স্বাস্থ্য, পরিবহন কর্মী, ওয়্যারহাউস কর্মচারী এবং ডাক বিভাগের কর্মীসহ বিভিন্ন সেক্টরে ধর্মঘটের ঢেউ উঠেছে।

কেন এই ধর্মঘট?

মূলত বেতনবৃদ্ধি ও প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতেই বিভিন্ন সেক্টরের কর্মীদের এই ধর্মঘট। কিন্তু সরকার এই ধর্মঘটে বিচলিত না হয়ে উল্টো মূদ্রাস্ফীতি রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতেই সচেষ্ট বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন।

অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ঋষি সুনাক সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মরতদের বেতন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধাও বন্ধ রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, নতুন শ্রম আইন আনার ব্যাপারে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আইনটিতে বলা হয়েছে, কয়েকটি ক্ষেত্রে কোনোভাবেই ধর্মঘট করা যাবে না। এতে ফুঁসে উঠছে দেশটির বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও ট্রেড ইউনিয়ন। শ্রমিক সংগঠন ও ট্রেড ইউনিয়নগুলোর দাবি, নতুন শ্রম আইনের মাধ্যমে সরকার শ্রমিকদের কণ্ঠরোধ করতে চাইছে। এতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে।

সমন্বিত ধর্মঘটের ফলে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। ঢিলেঢারাভাবে চলছে বেশিরভাগ রেল পরিষেবা। বিমানবন্দরেওে অনেক জায়গায় ফ্লাইট ওঠানামায় বিঘ্ন ঘটছে। পরিস্থিতি জটিল হওয়ায় সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।

দেশটির ন্যাশনাল এডুকেশন ইউনিয়নের জেনারেল সেক্রেটারি মেরি বুস্টেডের বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, তার ইউনিয়নের শিক্ষকরা মনে করেন তাদের ধর্মঘট করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। কারণ বেতন কমানোর অর্থ হলো অনেক লোক পেশা ছেড়ে যাক। এটি অন্যদের কাজ কঠিন করে তুলছে।

তবে শিক্ষকদের দাবি না মেনে শিক্ষামন্ত্রী গিলিয়ান কিগান সরকারের অবস্থানে অনড় রয়েছে। তিনি বলেছেন, বেশি বেতন বৃদ্ধির দাবি মেনে নেওয়া হলে তা মুদ্রাস্ফীতি আরও বেড়ে যাবে। 

তিনি ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা বিবিসিকে বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে শ্রমশক্তির একটি অংশের বেতন বৃদ্ধি করা হলে মুদ্রাস্ফীতিকে আরও খারাপের দিকে ঠেলে দেওয়া হবে। এ ধরণের পদক্ষেপ নেওয়া অর্থনৈতিকভাবে কখনোই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।’

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শিক্ষকদের এই ধর্মঘট প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সরকারের ওপর একটি রাজনৈতিক প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, কনজারভেটিভ পার্টির আগের সরকারপ্রধানরাও এই ধর্মঘটগুলোকে লাঠিপেটার মাধ্যমে সামাল দিয়েছে। ফলে ব্রিটিশ জনগণ মনে করে, ক্ষমতাসীন এই দলের ভোট ও সমীক্ষাবিরোধী লেবার পার্টির চেয়ে তাদের প্রায় ২৫ শতাংশ পয়েন্টে পিছিয়ে দিয়েছে।

Link copied!