করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে চূড়ান্ত সময়ের মধ্যে টিকা না নেওয়ায় নিউইয়র্ক নগরীর প্রায় দেড় হাজার কর্মচারী চাকরি হারিয়েছেন। নিউ ইয়র্ক নগর কর্তৃপক্ষের কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। খবর আলজাজিরার।
কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরার খবরে বলা হয়, নিউইয়র্ক নগর কর্তৃপক্ষের দেওয়া বাধ্যতামূলক টিকা গ্রহণের চূড়ান্ত সময়সীমা ছিল গত ১১ ফেব্রুয়ারি। তবে নির্দিষ্ট তারিখ পর্যন্ত করোনা টিকা না নেওয়ায় ১ হাজার ৪ শত ৩০ জন কর্মচারিকে চাকরিচ্যুত করেছে নগর কর্তৃপক্ষ।
নগর কর্তৃপক্ষ জানায়, কর্মচ্যুতদের সংখ্যা তিন লাখ ৭০ হাজার জনশক্তি সম্পন্ন সিটির ১৫ ভাগের কম। সিটি প্রশাসন গত শুক্রবার পর্যন্ত সিটির কর্মচারিদের ভ্যাকসিন নেওয়ার চূড়ান্ত সময়সীমা ছিল। সিটির জনশক্তির মধ্যে ভ্যাকসিন না নেওয়া আরও যথেষ্ট সংখ্যক কর্মী রয়েছেন, যারা তাদের চাকরিচ্যুতির আশঙ্কা করছেন।
নিউইয়র্ক মেয়র অফিস সূত্র জানায়, যাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে তারা ১১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভ্যাকসিন নিতে অথবা ভ্যাকসিন না নেওয়ার যৌক্তিক কারণ উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। সিটি প্রশাসনের আগের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা পর্যন্ত চাকরিচ্যুত অধিকাংশ কর্মীকে ছুটিতে রেখেছিল, কিন্তু অনেকের চাকরি আদালতের সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত বহাল রয়েছে।
চাকরিচ্যুতদের অধিকাংশই নিউ ইয়র্ক সিটি ডিপার্টমেন্ট অফ এডুকেশনের কর্মী বলে জানা গেছে। চূড়ান্ত সময়সীমা ঘনিয়ে আসার আগেই কিছুসংখ্যক শিক্ষক ভ্যাকসিন নেওয়ার বাধ্যবাধকতার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন এবং তারা ভ্যাকসিন না নেওয়ার পক্ষে ধর্মীয় কারণ প্রদর্শন করেছেন। তবে আদালত তাদের যুক্তি আমলে নেননি। গত বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট তাদের যুক্তিকে খারিজ করে রায় দিয়েছেন।
এর আগে, ভ্যাকসিন না নিলে চাকরি হারাতে হতে পারে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন সদ্য সাবেক সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাজিও এবং তা বাস্তবায়ন শুরু করেছেন নবনির্বাচিত মেয়র এরিক অ্যাডামস।
যে রায়ের ভিত্তিতে সিটি কর্মচারিদের যারা ভ্যাকসিন নিতে রাজি নন, তারা ছাড় পেয়ে যাবেন বলে ভেবেছিলেন। কিন্তু তা হয়নি, বিষয়টি এখন সিটির অসংখ্য কর্মীর রুটিরুজি ওপর আঘাত হিসেবে আসতে শুরু করেছে।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের অনেক শহরে তীব্র বিরোধিতার মুখে ভ্যাকসিন দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থেকে সংশ্লিষ্ট সিটি প্রশাসনগুলো পিছু হটলেও এর ব্যতিক্রম ছিল নিউ ইয়র্ক প্রশাসন। সিটি মেয়র চাপের মুখেও ভ্যাকসিন নেওয়ার বাধ্যবাধকতার ওপর অটল থেকে কর্মী ছাঁটাইয়ের মত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পিছু হটেননি।
অরিগন স্টেটের সবচেয়ে বড় শহর পোর্টল্যান্ডে সেখানকার পুলিশ ইউনিয়ন ভ্যাকসিন নেওয়ার বাধ্যবাধকতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার ফলে পুলিশ প্রশাসনকে শেষ পর্যন্ত ম্যান্ডেট বাস্তবায়ন না করে ভ্যাকসিন নেওয়া সংশ্লিষ্টদের ঐচ্ছিক ব্যাপার বলে ঘোষণা করতে বাধ্য হয়।
লাস ভেগাসে ভ্যাকসিন নেওয়ার বাধ্যবাধকতার বিরুদ্ধে চাপে মুখে গত জানুয়ারি মাসে সেখানে ভ্যাকসিন ম্যান্ডেট তুলে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।
সূত্র: আলজাজিরা, এবিসিনিউজ