যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে এবার বাংলাদেশি ৪ বংশোদ্ভুত নারী প্রার্থী বাজিমাত করেছেন। লন্ডনের হ্যামস্টেড ও হাইগেট আসন থেকে টানা চতুর্থবারের মতো বিপুল ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্রী টিউলিপ সিদ্দিক। অন্যদিকে টাওয়ার হ্যামলেটসের বেথনাল গ্রিন ও স্টেপনি আসন থেকে রোশনারা আলী টানা পঞ্চমবার, পপলার অ্যান্ড লাইম হাউজ আসন থেকে আপসানা বেগম দ্বিতীয়বার এবং লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল ও একটন আসনে ড. রূপা হক টানা চতুর্থবার জয়ী হয়েছেন। তারা সবাই লেবার পার্টির প্রার্থী ছিলেন।
টিউলিপ সিদ্দিক
হ্যামস্টেড ও হাইগেট আসনে মোট ২৩ হাজার ৪৩২টি ভোট পেয়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক। এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির ডন উইলিয়ামস মাত্র ৮ হাজার ৪৬২ ভোট পেয়েছেন।
টিউলিপকে (৪১) লেবার পার্টির অভ্যন্তরে নতুন প্রজন্মের তুমুল সম্ভাবনাময় রাজনীতিবিদ হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। ২০১৫ সালের নির্বাচনে লেবার পার্টির নিরাপদ বা ‘সেফ সিট’ নয় এমন আসনে মনোনয়ন পেয়ে প্রথমবারই বাজিমাত করেন টিউলিপ।
দুইবার পার্টির ছায়া মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পান তিনি। লেবার পার্টি যুক্তরাজ্যের ক্ষমতায় আসায় এবার মন্ত্রিসভায়ও ঠাঁই পেতে পারেন।
রোশনারা আলী
১৫ হাজার ৮৯৬টি ভোট পেয়ে টানা পঞ্চমবারের মতো জয় পেয়েছেন রোশনারা আলী। স্বতন্ত্র প্রার্থী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আজমল মাশরুর পেয়েছেন ১৪ হাজার ২০৭টি ভোট। এছাড়া ৪ হাজার ৭৭৭ ভোটে তৃতীয় হয়েছেন লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী রাবিনা খান।
এই আসনের অন্য দুই স্বতন্ত্র বাংলাদেশি প্রার্থী স্যাম উদ্দীন ৩২৫ ও মো. সুমন আহমদ ৩১৫টি ভোট পেয়েছেন।
আপসানা বেগম
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার বিজয়ী হয়েছেন লেবার পার্টির আপসানা বেগম। তিনি পেয়েছেন ১৮ হাজার ৫৩৫টি ভোট।
আপসানার প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রিন পার্টির নাথালি বেইনফিট ৫ হাজার ৯৭৫, কনজারভেটিভ পার্টির ফ্রেডি ডউনিং ৪ হাজার ৭৩৮, স্বতন্ত্র প্রার্থী আপসানার প্রাক্তন স্বামী এহতেশামুল হক ৪ হাজার ৫৫৪ ভোট পেয়েছেন।
পূর্ব লন্ডানের অন্য আসনে গতবার লেবার পার্টির বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের বিরোধিতার মুখেই লেবারের মনোনয়ন পান এবং নির্বাচনে জয়ী হন আপসানা বেগম।
টাওয়ার হ্যামলেটসের শ্যাডওয়েলে তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। বাংলাদেশে তার বাবার বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে। আপসানার বাবা মনির উদ্দিন টাওয়ার হ্যামলেটসের কাউন্সিলর ছিলেন। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত চার এমপির মধ্যে আপসানাই বাংলাদেশি কমিউনিটির বিভিন্ন সভা সমাবেশে সবচেয়ে বেশি সময় দেন।
ড. রূপা হক
লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল ও একটন আসনে লেবার পার্টির মনোনয়নে ২২ হাজার ৩৪০ ভোট পেয়েছেন ড. রূপা হক। তার প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির জেমস উইন্ডসর ক্লাইভ পেয়েছেন ৮ হাজার ৩৪৫ ভোট।
১৯৭০ সালে বাংলাদেশ থেকে ব্রিটেনে আসা মোহাম্মদ হক ও রওশন আরা হক দম্পতির তিন কন্যার মধ্যে বড় রুপা হক। তার বাবার বাড়ি পাবনা শহরের কুঠিপাড়ায়। সাদামাটা জীবনযাপন ও বিনয়ী ব্যবহারের জন্য সবার প্রিয় তিনি।
হারলেন যারা
লেবার পার্টি থেকে প্রথমবার মনোনয়ন পেয়ে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা সত্ত্বেও অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন দুই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী রুফিয়া আশরাফ ও রুমী চৌধুরী। যেসব আসনে তারা হেরেছেন, সেগুলো কনজারভেটিভের দুর্গ ও ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত।
সাবেক মেয়র রুফিয়া আশরাফ সাউথ নর্থামটনশায়ার আসনে ১৫ হাজার ৫০৪টি ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন। এই আসনে ১৯ হাজার ১৯১টি ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন কনজারভেটিভ পার্টির সারাহ বুল।
উইথাম আসনে কনজারভেটিভের তারকা প্রার্থী প্রীতি প্যাটেল ১৮ হাজার ৮২৭টি ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। এই আসনে ১৩ হাজার ৬৮২টি ভোট পেয়েছেন কাউন্সিলর রুমী চৌধুরী।
উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যের এই নির্বাচনে লড়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ৩৪ প্রার্থী।