আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়েছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

অক্টোবর ৮, ২০২৩, ০৭:৫৫ পিএম

আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়েছে

ছবি: সংগৃহীত

গতকাল শনিবার স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় আফগানিস্তানের হেরাত প্রদেশের রাজধানী থেকে ৩০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। পরে আরও আটটি শক্তিশালী পরাঘাত হয়।

আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলে একের পর এক ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছে ৯ হাজারের বেশি। আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে অনেক বাড়িঘর ধসে পড়েছে। রয়টার্সের খবরে তালেবান সরকারের বরাতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। 

 প্রাদেশিক সরকারের উপমুখপাত্র বিলাল করিমি আজ সকালের দিকে  বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘মৃত্যুর সংখ্যা এক হাজারের বেশি। চূড়ান্ত সংখ্যা কত হবে, তা দেখার জন্য আমরা অপেক্ষা করছি।’

তালেবান সরকারের দুর্যোগ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোল্লা জানান সায়েক রয়টার্সকে বলেছেন, ভূমিকম্পে ২ হাজার ৫৩ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছে ৯ হাজার ২৪০ জন। আর ১ হাজার ৩২৯ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।

এএফপির খবর বলছে, ভূমিকম্পে অনেক গ্রাম মাটির সাথে মিশে গেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেক মানুষ আটকে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আটকে থাকা লোকজনকে উদ্ধারে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন উদ্ধারকারীরা। কয়েক বছরের মধ্যে এই ভূমিকম্পকে ভয়ঙ্কর হিসেবে ধরা হচ্ছে।

এএফপির খবর বলছে, ভূমিকম্পে প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকার বাড়িঘর ধসে পড়ে। শহুরে এলাকায় আতঙ্ক ছড়ায়। আতঙ্কিত লোকজন সড়কে নেমে আসেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, হেরাত প্রদেশের অন্তত ১২ গ্রামে ৬০০টির বেশি বাড়ি ধ্বংস বা আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার ২০০ জন।

গতকাল গভীর রাতে ডব্লিউএইচও অবশ্য বলেছিল, তল্লাশি-উদ্ধার অভিযান চলমান থাকায় নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এফপির একজন প্রতিবেদক ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছে ধ্বংস হয়ে যাওয়া অনেক ঘরবাড়ি দেখেছেন।

স্থানীয় ৪২ বছর বয়সী বশির আহমেদ নামের এক ব্যক্তি বলেন, ভূমিকম্পের প্রথম ঝাঁকুনিতেই সব ঘরবাড়ি ধসে যায়। যাঁরা ঘরের ভেতরে ছিলেন, তাঁরা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছেন। এমন অনেক পরিবার আছে, যাদের অবস্থা সম্পর্কে কোনো তথ্য তাঁদের কাছে নেই।

নেক মোহাম্মদ নামের এক যুবক এএফপিকে বলেন, বেলা ১১টার দিকে প্রথম ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। সে সময় তিনি কর্মস্থলে ছিলেন। পরে তিনি বাড়িতে ফেরেন। দেখতে পান, ঘরবাড়ির কিছুই আর টিকে নেই। সবকিছু বালির সঙ্গে মিশে গেছে। তাঁর বাড়ি যে এলাকায়, সেখান থেকে প্রায় ৩০টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

প্রথম ভূমিকম্পটি অনুভূত হলে হেরাত শহরের অনেক বাসিন্দা বাড়িঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন। স্কুল, হাসপাতাল ও অফিস খালি হয়ে যায়। ভূমিকম্পে মেট্রোপলিটন এলাকায় হতাহতের কিছু খবর পাওয়া গেছে।

২০২১ সালে তালেবান দেশটির ক্ষমতায় ফেরে। তালেবানের ক্ষমতায় ফেরার পর দেশটিতে বিদেশি সাহায্য ব্যাপকভাবে প্রত্যাহার করা হয়। এতে আফগানিস্তান একটি ভয়াবহ মানবিক সংকটে পড়ে। এর মধ্যে এখন দেশটিতে ভূমিকম্পে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হলো।

ইরানের সীমান্তবর্তী হেরাত প্রদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৯ লাখ। এলাকাটি এমনিতেই খরার শিকার। এই খরা ইতিমধ্যে প্রদেশটির কৃষিনির্ভর সম্প্রদায়কে পঙ্গু করে দিয়েছে।

আফগানিস্তানে প্রায়ই ভূমিকম্প হয়। গত বছরের জুনে দেশটিতে ৫ দশমিক ৯ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়। এতে ১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়। কয়েক হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে।
 

Link copied!