ড. ইউনূসের রাজনৈতিক অনভিজ্ঞতাকে অন্তরায় হিসেবে দেখছে দিল্লি, আনন্দবাজারের প্রতিবেদন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

আগস্ট ২৪, ২০২৪, ০১:০৬ পিএম

ড. ইউনূসের রাজনৈতিক অনভিজ্ঞতাকে অন্তরায় হিসেবে দেখছে দিল্লি, আনন্দবাজারের প্রতিবেদন

ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের রাজনৈতিক অনভিজ্ঞতাকে অন্তরায় হিসেবে দেখছে দিল্লি। প্রশাসনিক অনভিজ্ঞতা ও সাংগঠনিক দুর্বলতাই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের এগোনোর পথে প্রতিবন্ধকতা হয়ে উঠছে, আশঙ্কা নয়াদিল্লির কূটনৈতিক শিবিরের।

বৃহস্পতিবার (২২আগস্ট) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেছে।

কূটনৈতিকদের বক্তব্য, উত্তাল ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে যে কোনও দেশের সরকার বদল হতে পারে। কিন্তু সেই ছাত্র আন্দোলনের জেরে সরকারের অর্থনৈতিক রণকৌশল ও প্রশাসন পরিচালনাও যে সফল হবে, তার প্রমাণ ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া কঠিন। এনজিও পরিচালনা ও রাষ্ট্র পরিচালনার মধ্যেও বিস্তর ব্যবধান রয়েছে বলে মনে করছে সরকারি সূত্র। আশঙ্কা, ফের হরতাল ও ধর্মঘটে রাজনীতির পুনরুত্থান ঘটতে পারে ঢাকায়।

এ ছাড়া ভারত মনে করে, তদারকি সরকারের অনভিজ্ঞতা এখনই স্পষ্ট। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের কারণে তা হয়তো নজরে আসছে না। কিন্তু সামনে ড. ইউনূসের বড় চ্যালেঞ্জ।

কূটনৈতিক মহলের মতে, ছাত্র থাকলে বা এনজিও করলে দেশ চালানো যাবে না— এমন ভাবছে না নয়াদিল্লি। কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনায় রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও জনগণের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ জরুরি। এ ক্ষেত্রে সংগঠিত রাজনৈতিক শক্তিকে ক্ষমতার বাইরে রেখে সামরিক শক্তিতে ভর করে সরকার পরিচালনা যে বেশ কঠিন, তা প্রথম থেকেই প্রকট। 

ভারতের সরকারি সূত্রের বক্তব্য, খারাপ হোক বা ভালদ বিএনপি, আওয়ামী লীগ এবং কিছুটা হলেও জাতীয় পার্টি ছাড়া অন্য কেউ দেশকে স্থিতিশীলতা দিতে পারেনি। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ছাড়া রাষ্ট্র সংস্কার কি আদৌ সম্ভব, সেই প্রশ্নও উঠছে।

মনে করা হচ্ছে, বাংলাদেশে অস্থিরতা নিরসনে ব্যর্থ সেনাবাহিনী আপাতত জনমত অনুসরণ করতে চায়। শেখ হাসিনাকে দেশ ছাড়ার অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে সেনাপ্রধানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বহু জঙ্গি জেল থেকে মুক্ত হওয়ায় পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। ছাত্র ও সেনার চাপে প্রধান বিচারপতি থেকে শুরু করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে পরিবর্তন, বিচার ব্যবস্থাকেও অস্থির করে তুলেছে।
বিএনপিকে কোণঠাসা করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কাজে লাগানোর কৌশল নিয়েছে সেনাবাহিনী। রাষ্ট্র পরিচালনার বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণে শিক্ষার্থীরা গুরুত্ব পেলেও দিন-দিন বিএনপি কোণঠাসা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পরে বাংলাদেশে অনেকেরই ধারণা ছিল, বিএনপি-ই ক্ষমতা দখল করবে। কিন্তু তা হয়নি।

এমনকি বিএনপি-র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বার্তাতেও মনে হয়েছিল, তারা ক্ষমতা দখলে প্রস্তুত। কিন্তু সেই পরিস্থিতিতে, বিএনপি-ও মনে করতে শুরু করেছে সেনাবাহিনী ছাত্রদের একটি ‘বাফার’ হিসেবে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হাসিনাকে দেশ থেকে পালাতে বাধ্য করার জন্য ছাত্রদের বিদ্রোহের বর্ণনা তাদের জন্য সর্বব্যাপী জনসমর্থনের একটি চিত্র তৈরি করে।

মনে করা হচ্ছে, মাসখানেক পরেই শুরু হবে বর্তমান সরকারের আসল পরীক্ষা। কিছু দিনের মধ্যেই বিএনপি তাদের কর্মী-সমর্থকদের পুনরায় সক্রিয় করে তুলবে। অন্য রাজনৈতিক শক্তিও নিজেদের পালে হাওয়া টানতে সক্রিয় হবে। তাই কয়েক মাস পরে ফের হরতাল ও ধর্মঘটের রাজনীতির পুনরুত্থানের আশঙ্কা থাকছে।

সব মিলিয়ে নেতিবাচক রাজনীতির ফসল অন্তর্বর্তী সরকার অভিজ্ঞতার অভাব এবং সাংগঠনিক শক্তিহীনতায় কয়েক মাসের মধ্যেই বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে চলেছে।

কেননা আগেই বিএনপি দাবি তুলেছিল, তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ‘দ্রুততম নির্বাচন’ ঘোষণার দাবি তুলেছেন। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার বা সেনা যে এখনই ভোট চায় না, সেই ইঙ্গিত তারা প্রতিনিয়তই দিয়ে চলেছে।

Link copied!