ডিসেম্বর ২৫, ২০২৪, ০৪:৪২ পিএম
জাতিসংঘ জানিয়েছে, তারা যে অর্থ জোগাড় করতে পারবে, তাতে ২০২৫ সালে ৩০ কোটি ৭০ লাখ অভুক্ত মানুষের মধ্যে ১১ কোটি ৭০ লাখ মানুষের কাছে খাবার পৌঁছানো যাবে না।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযাযী, ২০২৪ সালে তারা মানবিক সাহায্যের জন্য চার হাজার ৯৬০ কোটি টাকা তুলতে চেয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা ৪৬ শতাংশ অর্থ তুলতে পেরেছে। এই নিয়ে পরপর দ্বিতীয় বছর প্রয়োজনীয় অর্থের অর্ধেকও জোগাড় করতে পারলো না জাতিসংঘ। এর ফলে কষ্টকর হলেও তাদেরও কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তারা ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে কম খাবার পৌঁছাতে পেরেছে। বেশ কিছু মানুষের কাছে সাহায্য পৌঁছে দিতে পারেনি। খবর ডিডিব্লিউ বাংলা অনলাইন।
এর ফল কী হতে পারে তা সিরিয়ার মতো অনেক দেশের মানুষ টের পেয়েছেন। জাতিসংঘের সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম(ডাব্লিউএফপি) সিরিয়ায় ৬০ লাখ মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দেয়। এই বছরের পরিস্থিতি দেখে তারা জানিয়েছে, ১০ লাখ মানুষের কাছে তারা খাবার পৌঁছে দিতে পারবে বলে আশা করছে। গত মার্চে দাগেশ-কামারা একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, গত মার্চে তিনি সিরিয়ায় ডাব্লিউএফপি কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তারা জানিয়েছিলেন, ক্ষুধার্ত মানুষকে খাবার না দিয়ে তারা অনাহারে থাকা মানুষদেরই শুধু খাবার দিচ্ছেন।
কেন অনুদান কমছে?
বিশ্বের বিবিন্ন জায়গায় সংঘাত, চরম আবহাওয়া এবং ভয়ংকর মুদ্রাস্ফীতির কারণে আরো বেশি করে মানুষের কাছে মানবিক সাহায্য পৌঁছানো দরকার হয়ে পড়েছে। কিন্তু জাতিসংঘের তহবিলে যে দেশগুলি অর্থ দেয়, তাদের দেয়া অর্থের পরিমাণ কমছে।
ধনী দেশগুলিও বর্তমান পরিস্থিতিতে আর্থিক দিক থেকে চাপের মধ্যে আছে। তাছাড়া ঘরোয়া রাজনীতির কারণেও কিছু ধনী দেশ তাদের সিদ্ধান্তে বদল আনছে। জাতিসংঘকে যে দেশগুলি প্রচুর অর্থসাহায্য করে তার মধ্যে জার্মানি অন্যতম। কিন্তু ২০২৩-এর তুলনায় ২০২৪ সালে তারা ৫০ কোটি ডলার কম দিয়েছে। তাদের মন্ত্রিসভার সুপারিশ, ২০২৫ সালে একশ কোটি ডলার সাহায্য কম করা হবে। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের পর নতুন পার্লামেন্ট এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
২০ জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডোন্ট হিসাবে দায়িত্ব নেবেন ডনাল্ড ট্রাম্প। তিনি আর্থিক অনুদান নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেন, সেদিকে তাকিয়ে মানবিক সংগঠনগুলি।
ট্রাম্পের পরামর্শদাতারা এবার এই বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। কিন্তু ট্রাম্প যখন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন তারা অর্থ কম দেয়ার সুপারিশ করেছিলেন। এবার তিনি যে পরামর্শদাতাদের নিয়োগ করেছেন, তাদের মত হলো, বিদেশি সাহায্যের পরিমাণ ছাঁটাই করার সুযোগ আছে।
বিশ্বে ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র গত পাঁচ বছরে ছয় হাজার ৪৫০ কোটি ডলার দিয়েছে। জাতিসংঘের তহবিলের ৩৮ শতাংশ আসে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে।
যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইউরোপীয় কমিশন মিলে জাতিসংঘের তহবিলের ৫৮ শতাংশ অর্থসাহায্য করে। আর চীন, রাশিয়া ও ভারত মিলে করে মাত্র এক শতাংশ অর্থসাহায্য।
সাহায্য বাড়ানোর দাবি
চীন হলো বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। অথচ, ২০২৩ সালে তারা জাতিসংঘের মানবিক তহবিলে এক কোটি ১৫ লাখ ডলার দিয়েছে। তারা সাহায্যকারী দেশগুলির তালিকায় ৩২ নম্বরে আছে।
বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ভারত আছে ৩৫ নম্বর স্থানে। ২০২৩ সালে তারা জাতিসংঘের মানবিক তহবিলে ৬৫ লাখ ডলার দিয়েছে।
২০০০ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত জাতিসংঘের মানবিক ত্রাণ বিষয়ক প্রধান ছিলেন জ্যান ইগল্যান্ড। তিনি বলেছেন, চীন অলিম্পিকের আয়োজন করতে পারে, ভারত সাত কোটি ৫০ লাখ ডলার দিয়ে চন্দ্রাভিযান করতে পারে, অথচ, বিশ্বের ক্ষুধার্ত মানুষদের জন্য তারা আরেকটু অর্থ দিতে পারে না?
আরো সমস্যা
সমস্যা আরো আছে। অনেক সময় সাহায্য দেরিতে পৌঁছায়, তাতে আবার অনেক বিধিনিষেধের কথা থাকে। ফলে যাদের জরুরি প্রয়োজন তাদের কাছে মানবিক সাহায্য পৌঁছাতে দেরি হয়।