ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর এবার মরিচের গুঁড়া ছুড়লেন ইসরায়েলি সেনারা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ২১, ২০২৫, ০১:২৬ পিএম

ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর এবার মরিচের গুঁড়া ছুড়লেন ইসরায়েলি সেনারা

ছবি: সংগৃহীত

গাজায় বিতর্কিত ত্রাণ সংস্থা জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে জড়ো হওয়া ক্ষুধার্ত ও অসহায় ফিলিস্তিনিদের ওপর মরিচের গুঁড়া ছুড়েছেন ইসরায়েলি সেনারা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।

আলজাজিরার ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা সানাদ ২০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেছে। এতে দেখা গেছে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলের রাফা শহরের শাকুশ এলাকায় ইসরায়েলি সেনারা মরিচের গুঁড়ার স্প্রে ব্যবহার করে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করছেন।

মুঠোফোনে ভিডিওটি ১০ জুলাই ধারণ করা হয়। শনিবার রাতে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, তিনজন সশস্ত্র ইসরায়েলি সেনা ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত জিএইচএফের ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে ফিলিস্তিনিদের ওপর মরিচের গুঁড়া ছুড়ছেন।

ভিডিওতে আরও দেখা যায়, পুরুষ, নারী ও শিশুরা চারদিকে ছুটে পালিয়ে যাচ্ছেন। কারও মুখ কাপড় দিয়ে ঢাকা। কেউ আবার পিঠে ময়দার বস্তা তুলে নিয়ে আতঙ্কে ছুটে যাচ্ছেন।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার বলেছে, মে মাসের শেষ দিকে জিএইচএফ গাজায় কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৮৯১ জন খাবারের খোঁজে গিয়ে নিহত হয়েছেন।

১৫ জুলাই জাতিসংঘ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৬৭৪ জনেরই মৃত্যু হয়েছে জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্রগুলোর আশপাশে।

গাজায় ইসরায়েলের দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা পূর্ণ অবরোধ কিছুটা শিথিল করার পর উপত্যকায় জিএইচএফের ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়। কার্যত জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন বিশাল ত্রাণ সরবরাহ নেটওয়ার্ককে পাশ কাটিয়ে বিতর্কিত এ কার্যক্রম চলছে।

গতকাল রোববার গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৮৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৭৩ জনই ত্রাণ সংগ্রহের জন্য জড়ো হওয়া সাধারণ মানুষ।

এর আগে গত শনিবার গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলি হামলায় ১১৬ ফিলিস্তিনি নিহত হন। এর মধ্যে অন্তত ৩৮ জন ছিলেন ত্রাণপ্রত্যাশী।

গাজার বাসিন্দা মাহমুদ মোকাইমার বলেন, তিনিও অন্য মানুষদের সঙ্গে জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্রের দিকে যাচ্ছিলেন। ইসরায়েলি সেনারা প্রথমে সতর্কতামূলক গুলি ছোড়েন। এরপর সরাসরি গুলি চালান।

বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে মোকাইমার বলেন, ‘দখলদার বাহিনী আমাদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালায়।’

মোকাইমার বলেন, তিনি অন্তত তিনজনের নিথর দেহ মাটিতে পড়ে থাকতে ও আহত বহু মানুষকে দৌড়ে পালাতে দেখেছেন।

গাজার দেইর আল-বালাহ শহর থেকে আলজাজিরার প্রতিবেদক হিন্দ খোদারি বলেন, ইসরায়েল যদি গাজায় আর কোনো খাবার ঢুকতে না দেয়, তাহলে ফিলিস্তিনিদের সামনে খাবারের জন্য জীবন ঝুঁকিতে ফেলা ছাড়া আর কোনো পথ থাকবে না।

হিন্দ খোদারি আরও বলেন, মাবাবারা জানেন, জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্রে গেলে গুলিতে মারা পড়তে পারেন, তবুও যান। কারণ, না গেলে তাঁদের শিশুদের না খেয়ে থাকতে হয়। বাজারে কিছুই কেনার মতো অবস্থা নেই, সবকিছুর দাম খুব বেশি।

গাজার অনেক জায়গায় শিশু, এমনকি নবজাতকেরাও না খেয়ে মারা যাচ্ছে।

রোববার গাজা নগরীর আল-আকসা মারটায়ার হাসপাতালের একটি সূত্র আলজাজিরাকে বলেছেন, রাজান আবু জাহের নামের চার বছর বয়সী এক শিশু অপুষ্টি ও অনাহারের কারণে মারা গেছে।

শনিবার আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক বলেছেন, সেখানে দুজন ফিলিস্তিনি অনাহারে প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৩৫ দিন বয়সী এক শিশুও আছে।

Link copied!