ভারতের নির্বাচন

মূল লড়াই এনডিএ-ইন্ডিয়ায়, কে জিতবে এবার?

হাসনাত আসিফ কুশল

এপ্রিল ২১, ২০২৪, ০৯:৩৫ পিএম

মূল লড়াই এনডিএ-ইন্ডিয়ায়, কে জিতবে এবার?

১৯ এপ্রিল ভারতের লোকসভা নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এদিন ভারতীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত একটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ১০২টি আসনে অনুষ্ঠিত ভোটগ্রহণে ৫৯ দশমিক ৭১ শতাংশ ভোট পড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ভোট পশ্চিমবঙ্গে পড়েছে বলে দেশটির নির্বাচন কমিশনের কাছে আছে।

লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় রেকর্ডসংখ্যক ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। ভারতীয় সময় বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সবগুলো আসন মিলিয়ে ভোট পড়েছে ৫৯ দশমিক ৭১ শতাংশ। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও ভোট হয়েছে তামিলনাড়ু, উত্তরাখণ্ড, অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয়, আন্দামান-নিকোবর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, পুদুচেরি, সিকিম, লাক্ষাদ্বীপসহ মোট ২১টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে।

এদিকে ১৮তম লোকসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী মোদির নেতৃত্বে জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের ডাক দিয়েছে। আর পর পর ‘১৪ ও ‘১৯ সালের নির্বাচনে হেরেও এবার জয়ের স্বপ্ন দেখছে বিরোধী ভারত ব্লকের অংশীদাররা।

শুক্রবারের ভোটে উত্তর প্রদেশে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৫৮ শতাংশ। রাজ্যের আটটি আসনে ভোট হয়েছে। রাজ্যটির প্রধান নির্বাচনি কর্মকর্তা নবদ্বীপ রিনওয়া বলেন, ‘ভারতীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে বেশির ভাগ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়েছে। ভোটার উপস্থিতির নির্দিষ্ট তথ্য শনিবার জানানো হবে।’

পশ্চিমবঙ্গে বিচ্ছিন্ন সহিংসতার মধ্যে ভোটার উপস্থিতি ছিল সর্বোচ্চ। প্রথম ধাপে রাজ্যে তিনটি আসনে ভোট হয়েছে। রাজ্যে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৭৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

ভোট শেষে সংবাদ সম্মেলনে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনি কর্মকর্তা আরিজ আফতাব বলেন, ‘দুই-একটা বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া তিনটি আসনে শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে।’

পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার লোকসভা আসনে মোট ৫ হাজার ৮১৪টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়। তিনটি আসনে মোট ভোটারের সংখ্যা ছিল ৫৬ লাখ ২৬ হাজার ১০৮ জন। ভোটের কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ২৭ হাজার ৯০৭ জন ভোট কর্মী। পুলিশ অবজারভার, বিশেষ অবজারভারের পাশাপাশি ৫৮১ জন মাইক্রো অবজারভার ছিলেন।

পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ভোটকে কেন্দ্র করে মোট ৫৫৬টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে কোচবিহারে ২৬৯টি, আলিপুরদুয়ারে ১৬২টি ও জলপাইগুড়িতে ১২৫টি অভিযোগ জমা পড়েছে।

সিকিমে একটি লোকসভা আসনে ভোট হয়েছে। রাজ্যের আসনটিতে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬৮ শতাংশ। অরুণাচলে ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬৮ দশমিক ৩ শতাংশ। তামিলনাড়ুতে ৬২ দশমিক ৩ শতাংশ, আসামে ৭১ দশমকি ৩ শতাংশ, মেঘালয়ে ৭০ দশমিক ২ শতাংশ, মণিপুরে ৬৮ দশমিক ৬ শতাংশ ও ত্রিপুরায় ৭৯ দশমিক ৯ শতাংশ।

এক বিবৃতিতে ভারতের নির্বাচন কমিশন জাানয়, মসৃণ, স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনি প্রক্রিয়া নিশ্চিতে কঠোরভাবে কাজ করছে কমিশন।

কে জিতবে: নির্বাচনে ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোটের মধ্যে মূল লড়াই হতে যাচ্ছে। জোটগতভাবে ৪০০ আসন জয়ের স্বপ্ন দেখছে ক্ষমতাসীন জোট এনডিএ। আর এককভাবে ৩৭০ আসনের টার্গেট নিয়ে এগোচ্ছে জোটটির মূল দল বিজেপি।

২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচন সাতটি ধাপে মোট ৯৬ কোটি ৯০ লাখ ভোটার ভোট দেবেন। ভোটারের এই সংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১০ ভাগেরও বেশি।

দ্বিতীয় ধাপের ভোট হবে আগামী ২৬ এপ্রিল। পরবর্তী ধাপগুলোর ভোট যথাক্রমে ৭ মে, ১৩ মে, ২০ মে, ২৫ মে ও ১ জুন অনুষ্ঠিত হবে। আর ৪ জুন নির্বাচনের ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষণা করা হবে।

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনের মধ্যে তৃণমূল জয় পায় ২২টিতে। বাকি ২২টি আসনের মধ্যে বিজেপি পায় ১৮টি ও কংগ্রেস পায় দুটি। আর পুরো ভারতের ৫৪৩ আসনের মধ্যে বিজেপি জিতেছিল ৩০৩টি। ৫২টি পেয়েছিল কংগ্রেস। এছাড়া তৃণমূল ২২টি, সমাজবাদী পার্টি ৫, বহুজন সমাজ পার্টি ১০, ডিএমকে ২৩, ওয়াইএসআর কংগ্রেস ২২ ও টিডিপি দুটি আসনে বিজয়ী হয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের জয়-পরাজয়ে বেশ কয়েকটি রাজ্য ও অঞ্চল মুখ্য ভূমিকা রাখবে। এগুলো হলো তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্রের নাগপুর, মণিপুর ও উত্তর প্রদেশের মুজাফফরনগর। ২০১৯ সালের নির্বাচনে তামিলনাড়ুর ৩৯টি আসনের একটিতেও জয় পায়নি বিজেপি।

Link copied!