কে এই কিয়ার স্টারমার?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

জুলাই ৬, ২০২৪, ০৯:০০ এএম

কে এই কিয়ার স্টারমার?

কিয়ার স্টারমার

ছিলেন মানবাধিকার বিষয়ক একজন আইনজীবী। সেখান থেকে বনে যান রাষ্ট্রীয় কৌঁসুলি। জীবনের লক্ষ্য অর্জনে একটু একটু করে যুক্তরজ্যের প্রধানমন্ত্রী পদাধিকার করেন কিয়ার স্টারমার (৬১)।

যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির প্রতিষ্ঠাতা কিয়াস হার্ডির নামের সঙ্গে সাদৃশ্য থাকা এই শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রচারণায় বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছিল, কিয়ার স্টারমার লন্ডনে বেড়ে ওঠা এক অভিজাত ঘরের সন্তান। তবে বারবারই বিরোধীদের এই অভিযোগের দাঁতভাঙা জবাব দিয়ে গেছেন স্টারমার। বলে গেছেন, ‍“আমার বাবা, এক বাদ্যযন্ত্রকার ও মা এক সেবিকা (নার্স)।”

নির্বাচনের পুরোটা সময় জুড়ে ‘অনুপ্রেরণাহীন’ ও ‘সুযোগসন্ধানী’ হিসেবে আখ্যায়িত হলেও সমর্থকদের কাছে বাস্তববাদী ব্যবস্থাপক হিসেবেই সম্যক পরিচিত হয়েছেন স্টারমার। সমর্থকরা আশায় ছিলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিতের পরেও অক্লান্ত তার আইন পেশায় যেভাবে কাজ করেছেন, সেভাবে কাজ করে যাবেন তিনি।

কিয়ার স্টারমারের পরিচয়
কিয়ার স্টারমারের জন্ম ১৯৬২ সালে ২ সেপ্টেম্বর, লন্ডনের উপকণ্ঠে। তার মা জোসেফাইন বেকার স্টারমার, বাবা রড স্টারমার। মায়ের অসুস্থতার কারণে আবেগের বশে বাবা রড স্টারমার তাদের প্রতি দূরত্ব রেখে চলতেন। স্টারমারের মা-বাবা পশু পছন্দ করতেন। এজন্য কখনও কখনও তিনি কৌতুকচ্ছলে বলতেন, “আমরা বাড়ি ছাড়লে আমাদের মা-বাবা গাধা দিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করতেন।”

রহস্যময় ব্যক্তিত্ব কিয়ার স্টারমার
কপালের ওপর থেকে নেমে আসা চুলের গোছা ও কালো ফ্রেমের চশমা পরা কিয়ার স্টারমার অনেকের কাছে বেশ রহস্যময় ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তিনি মনে করেন, রাজনীতি হওয়া উচিত জনসেবার জন্য। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার আগে বিভিন্ন নির্বাচনী সমাবেশেও তিনি একই কথা বলে এসেছেন। এ ছাড়া ‘দেশ আগে, পরে দল’ এই কথাগুলোও সাম্প্রতিক প্রচারণায় বলে এসেছেন তিনি। পাঁচজন আলাদা প্রধানমন্ত্রীর অধীনে কনজারভেটিভ পার্টির ১৪ বছরের শাসনাবসানে তিনিই দিয়েছিলেন ‘পরিবর্তনের’ ডাক। ভোটে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েও তিনি বলে ওঠেন, “এখন সময় পরিবর্তনের।”

তবে বাকিংহাম প্রাসাদে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হয়ে প্রথম ভাষণে তিনি বলেন, “এই পরিবর্তনের জন্য সময় লাগতে পারে। কোনও দেশকে পরিবর্তন করা সুইচ টেপার মতো বিষয় নয়। এজন্য সময়ের প্রয়োজন। তবে খুব দ্রুতই কাজ শুরু হবে।”

শুক্রবার সন্ধ্যার পর কাজ করবেন না কিয়ার স্টারমার
গণমুখী রাজনীতিতে বিশ্বাসী কিয়ার স্টারমার নেতা হিসেবে নিজের ‘বিরক্তিকর’ ইমেজ রক্ষয়ও বেশ তৎপর। তার স্ত্রী ভিক্টোরিয়া জানান, ব্যক্তিগত জীবনে কিয়ার স্টারমার বেশ হাসিখুশি ও বিনয়ী।

যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য বিভাগে পেশাদার থেরাপিস্ট হিসেবে কাজ করা ভিক্টোরিয়া ও কিয়ার স্টারমারের সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। যারা দুজনেই বর্তমানে কিশোর-কিশোরী। আগে থেকেই কিয়ার স্টারমার জানিয়ে দিয়েছেন, শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টার পর তিনি আর কোনও কাজ করবেন না। কারণ এই সময়টা তিনি পরিবারের জন্য বরাদ্দ রেখেছেন।

রাজনীতিকের বাইরে সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে সুনাম রয়েছে তার। স্কুল জীবন থেকেই ভায়োলিন বাজাতে পারতেন। লিডস ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনশাস্ত্রে অধ্যয়ন শেষে ঝুঁকে পড়েন বাম রাজনীতিতে। ২০০৩ সালে বন্ধু ও সহকর্মীদের অবাক করে দিয়ে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড পুলিশ যাতে মানবাধিকার প্রয়োগ করে সেটা নিশ্চিতে একটি চাকরি শুরু করেন তিনি। ৫ বছর পর তখনকার লেবার পার্টির প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনের শাসনামলে তিনি ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের প্রসিকিউশন বিভাগের পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হন।

রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছ থেকে ‘নাইট’ উপাধি গ্রহণ করেন কিয়ার স্টারমার। তবে তিনি ‘স্যার’ হিসেবে নিজের পরিচয় খুব অল্পই দিতেন। ২০১৫ সালে কিয়ার স্টারমার নর্থ লন্ডন থেকে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। এই নির্বাচনে জয়ের কয়েকদিন আগে বিরল রোগে তার শয্যাশায়ী মায়ের মৃত্যু হয়।

নির্বাচনী প্রচারে বাংলাদেশিদের নিয়ে অযাচিত মন্তব্য
নির্বাচনকালীন এক প্রচারে বাংলাদেশি প্রবাসীদের নিয়ে অযাচিত মন্তব্য করে সমালোচিত হন। ২৪ জুন দ্য সানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, “ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো থেকে আসা যাদের বৈধ কাগজপত্র নেই, তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।”

এর প্রতিবাদস্বরূপ পদত্যাগ করেন পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে লেবার পার্টির ডেপুটি লিডার সাবিনা আক্তার। পদত্যাগের সময় তিনি বলেন, “দলের নেতা যখন আমার সম্প্রদায়কে একঘরে করে, আমার বাংলাদেশি পরিচয়কে অপমান করে, তখন আমি আর দল নিয়ে গর্ব করতে পারি না।”

আরও পড়ুন: বাংলাদেশি প্রবাসীদের নিয়ে কটাক্ষকারী স্টারমার সুর পাল্টালেন

তবে ২৯ জুন সুর পাল্টে ব্রিটিশ গণমাধ্যম আইটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদের মনে আঘাত দেওয়া বা কোনও উদ্বেগ সৃষ্টি করতে চাইনি।”

সূত্র: বিবিসি

Link copied!