২০২১ সালে মিয়ানমারে যখন সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে, তখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করে। সেনা অভ্যুত্থানের পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোসহ বেশ কিছু দেশ জান্তানিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কিংবা অন্য কোনো আর্থিক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে।
সর্বশেষ ১ ফেব্রুয়ারি ছিল সামরিক বাহিনীর অভ্যুত্থানের তৃতীয় বার্ষিকী। ওই দিন যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। যুক্তরাষ্ট্র এমন এক সময়ে এই নতুন নিষেধাজ্ঞা দিল, যখন জাতিগত সংখ্যালঘু সশস্ত্র গ্রুপগুলোর সঙ্গে সেনাবাহিনীর গৃহযুদ্ধ তুমুল আকার ধারণ করেছে।
কিন্তু এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের এসব নিষেধাজ্ঞা জান্তা সরকারকে গণতন্ত্রের পথে ফেরাতে পারেনি।
২০২৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারিতে স্বাক্ষরিত নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ধরন দেখলে বোঝা যাবে, যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ধরনে পরিবর্তন এনেছে। ওই নিষেধাজ্ঞায় বাইডেন প্রশাসন স্পষ্টতই আর্থিকভাবে সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে মিয়ানমারের জেনারেলদের নিশানা করেছে।
মিয়ানমারে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক মনোভঙ্গি না নিয়ে সহযোগিতামূলকভাবে কাজ করাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। এই সমন্বয়ের প্রমাণ মেলে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর। ওই দিন যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ইইউর সঙ্গে এক হয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের একটি প্যাকেজ ঘোষণা করে। যেমন ইইউ এই প্যাকেজের আওতায় মিয়ানমারে সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানি ওপর বিধিনিষেধ, জান্তা কর্মকর্তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা, ভিসা ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং টেলিযোগাযোগ যন্ত্রপাতি রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ আরোপসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়।
এসব নিষেধাজ্ঞা এমন কোনো চাপ তৈরি করতে পারেনি যা জান্তাকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে বাধ্য করবে।
এর একটি বড় কারণ হলো, আগে মিয়ানমারের তৈরি পোশাক ও বস্ত্রের মতো এমন অর্থনৈতিক খাতকে নিশানা করে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল, যার সঙ্গে জান্তা সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল না। ওই নিষেধাজ্ঞা দেশটির বেসরকারি খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করলেও জান্তার কিছুই হয়নি।
সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞাগুলো সামরিক মালিকানাধীন বা সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন উদ্যোগগুলোকে নিশানা করে আরোপ করা হয়েছে। অবশ্য ২০২১ সালের আগের নিষেধাজ্ঞাগুলো যে সমস্যায় পড়েছিল, ২০২১-পরবর্তী নিষেধাজ্ঞাগুলোও সেই একই সমস্যায় পড়েছে। যেমন নতুন এই নিষেধাজ্ঞাগুলো জাতিসংঘের সম্মতির বাইরে রয়ে গেছে; কারণ জাতিসংঘ এখনো মিয়ানমারের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। ফলে উত্তর কোরিয়া এবং ইরানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে মিয়ানমারের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার একটি বড় পার্থক্য রয়ে গেছে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদও মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেবে বলে মনে হয় না; কারণ এই পরিষদের স্থায়ী সদস্য চীন ও রাশিয়া মিয়ানমারের জান্তা সরকারের নিন্দা করতে রাজি হয়নি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ ইস্যুতে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে আছে।
পশ্চিমারা জান্তা সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ করলেও পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব দেশগুলো ঠিকই বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে এই নিষেধাজ্ঞা কাজে আসছে না।