আফগানিস্তানে তালেবানদের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি প্রস্তাব সরকারের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

আগস্ট ১৩, ২০২১, ০৪:৩৪ পিএম

আফগানিস্তানে তালেবানদের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি প্রস্তাব সরকারের

আফগানিস্তানে তালেবানদের কাছে প্রায় হার মেনে নিয়েছে দেশটির সরকার। সম্প্রতি তালেবান গোষ্ঠীর সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রস্তাব দিয়েছে আফগান সরকার। কাতারের মাধ্যমে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানায় আল-জাজিরা। আফগান সরকারের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়, এই মুহূর্তে পুরো আফগানিস্তান দখলে তড়িৎ গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে তালেবানরা। একের পর এক শহর দখল করছে। সর্বশেষ গজনি প্রদেশের রাজধানী গজনিসহ ১০টি প্রাদেশিক রাজধানী নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। কোণঠাসা হয়ে পড়েছে প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির সরকার। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রস্তাব প্রদান করা হয়েছে।

আল-জাজিরা তথ্যানুসারে, বৃহস্পতিবার গজনি প্রদেশের রাজধানী দখল করে তালেবান। শহরটি আফগান রাজধানী কাবুল থেকে মাত্র ১৩০ কিলোমিটার দূরে। কাবুল ও কান্দাহার মহাসড়কের মাঝে অবস্থিত শহরটির পতন নিশ্চিত করেছেন আফগান সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তীব্র লড়াই চলছে হেলমান্দ প্রদেশের রাজধানী ও আফগানিস্তানের অন্যতম বৃহত্তম শহর লস্করগাহেও। ইতোমধ্যে এখানকার আঞ্চলিক পুলিশ সদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তালেবান। তীব্র আক্রমণের মুখে তালেবানের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন লস্করগাহের একদল পুলিশ কর্মকর্তা। বাকিরা আশ্রয় নিয়েছেন সরকারি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা গভর্নর অফিসে। লড়াইয়ে সরকারি বাহিনীর অনেক সদস্য হতাহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কান্দাহার কারাগারে তাণ্ডব চালিয়েছে তালেবান।

স্থানীয় সূত্রের বরাতে আল-জাজিরা জানিয়েছে, বিদ্রোহীদের একটি দল কান্দাহার কেন্দ্রীয় কারাগারে ঢুকে কয়েকশ’ বন্দিকে ছেড়ে দিয়েছে। কারাগারটিতে এর আগেও হানা দিয়েছিল তালেবান। তখনও অসংখ্য বন্দি পালানোর ঘটনা ঘটেছিল। উত্তরাঞ্চলের বলখ প্রদেশের রাজধানী ও আফগানিস্তানের চতুর্থ বৃহত্তম শহর মাজার-ই-শরিফ দখলেও অভিযান চালাচ্ছে তালেবান যোদ্ধারা। চলতি সপ্তাহেই এর নিকটবর্তী প্রাদেশিক রাজধানী শেবেরগানের পতন হয়েছে। এখন কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর মাজার-ই-শরিফের পতন হলে আফগান সরকারের পতন আরও ত্বরান্বিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এজন্য শহরটির রক্ষায় সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে সরকার। তালেবানের মোকাবিলায় আফগান সেনাবাহিনীর পাশাপাশি সৈন্য-সামন্ত নিয়ে মাঠে নেমেছেন যুদ্ধবাজ নেতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল রশিদ দোস্তাম।

এদিকে আফগানিস্তানে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে কাতারের রাজধানী দোহায় যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কিছু দেশের প্রতিনিধিরা দুপক্ষকে আলোচনায় বসানোর শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আফগান শান্তি আলোচনা বিষয়ক মার্কিন দূত জালমাই খলিলজাদে এখন কাতারের দোহায় অবস্থান করছেন। শান্তি আলোচনায় মধ্যস্থতার জন্য পাকিস্তান যাতে তালেবানের ওপর প্রভাব খাটায় সেজন্য ইসলামাবাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে ওয়াশিংটন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন, আশরাফ ঘানি প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় আফগান সরকারের সঙ্গে কোন আলোচনায় বসবে না তালেবান। তিনি আরও বলেন, ২০ বছর ধরে সামরিক সমাধান খোঁজার পর তা না পেয়ে তাদের ফেলে যাওয়া জঞ্জালের নিষ্পত্তি করতেই এখন পাকিস্তানকে খোঁজা হচ্ছে। তালেবানরা আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানিকে যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত পুতুল সরকার মনে করে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতার লক্ষ্যে তালেবানের প্রধান নেতার সঙ্গে সাক্ষাতের ইঙ্গিত দিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান।

এদিকে জার্মানি জানিয়েছে, তালেবান ক্ষমতায় এলে আফগানিস্তানকে সব ধরনের আর্থিক সহায়তা বন্ধ করে দেবে তারা।

দীর্ঘ ২০ বছরের ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের’ পর আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। আগামী ৩১ আগস্টেই সব সেনা সরিয়ে নেবে দেশটি। ইতোমধ্যে সেনা প্রত্যাহার সম্পন্ন করেছে ন্যাটো দেশগুলো। তবে ন্যাটোর অংশ হিসাবে আফগানিস্তানে তুরস্কের সেনা রয়েছে। আগস্টে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর তুর্কি সেনাদের কাবুল বিমানবন্দর রক্ষণাবেক্ষণ করার কথা রয়েছে। চলতি বছরের মে মাসে বিদেশি সেনা প্রত্যাহার ঘোষণার পরপরই আফগান বাহিনীর বিরুদ্ধে হামলা জোরদার করে তালেবান। এরপর গত দুমাসের মধ্যে দেশের প্রায় অর্ধেকের বেশি জেলার দখল নিয়ে নিয়েছে যোদ্ধারা।

Link copied!