তিন দেশে যাচ্ছে রাশিয়ার নিষিদ্ধ স্বর্ণের হাজারো চালান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মে ২৬, ২০২৩, ১০:০৮ পিএম

তিন দেশে যাচ্ছে রাশিয়ার নিষিদ্ধ স্বর্ণের হাজারো চালান

বছরে প্রায় ৩২৫ টন উৎপাদন করে রাশিয়া। কিন্তু সেই স্বর্ণ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল পশ্চিমা দেশ। কারণ ইউক্রেনের ওপর হামলা। এই বিপুল স্বর্ণ নিয়ে বড় বিপদে পড়ে রাশিয়া। কেন না এই বিশাল পরিমাণ স্বর্ণ রপ্তানি করা না গেলে রাশিয়ার অর্থনীতিতে বিপর্যয় ঘটতো। তারপর সুকৌশলে বিপদ এড়িয়েছে রাশিয়া। স্বর্ণ বিক্রয় করছে সংযুক্ত আমিরাত, চীন ও তুরস্কের কাছে।

রাশিয়ার স্বর্ণের সবচেয়ে বড় ক্রেতা এখন সংযুক্ত আরব আমিরাত। তার ঠিক পরেই রয়েছে চীন ও তুরস্ক। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ৩ মার্চ পর্যন্ত এ দুটি দেশে ২০ টন করে স্বর্ণ রপ্তানি করেছে রাশিয়া।

রাশিয়ার কাস্টমস বিভাগের নথিভুক্ত তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশটি নিষেধাজ্ঞা শুরুর পর থেকে যে পরিমাণ স্বর্ণ রপ্তানি করেছে, তার ৯৯ দশমিক ৮ শতাংশই গেছে এই তিন দেশ, অর্থাৎ সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন ও তুরস্কে।

রাশিয়ার আবগারি বিভাগের তথ্য বলছে, পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা নেমে আসার পর সে দেশ থেকে প্রায় ১ হাজার স্বর্ণের চালান গেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। এই সময়ে সেখানে রুশ স্বর্ণের আমদানি না কমে বরং বেড়েছে। নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগের বছর, অর্থাৎ ২০২১ সালে ৭৪ দশমিক ৩ টন স্বর্ণ রাশিয়া থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে গিয়েছিল, ২০২২ সালে সেখানে আমদানি করা স্বর্ণ ১ দশমিক ৩ টন বেড়ে হয়ে গেছে ৭৫ দশমিক ৭ টন।

রাশিয়ার স্বর্ণ সবচেয়ে বেশি যেত ব্রিটেনে। কিন্তু ইউক্রেনে হামলা চালানোয় পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর বিশ্বের অনেক বহুজাতিক ব্যাংক, ধাতু পরিশোধন ও ক্রয়-বিক্রয় প্রতিষ্ঠান মস্কোর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ২০২২ সালের ৭ মার্চ লন্ডন বুলিয়ন মার্কেট অ্যাসোসিয়েশনও রাশিয়া থেকে স্বর্ণের বার আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করে। ২০২২ সালের আগস্টের মধ্যে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং জাপানও রাশিয়ার সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেয়।

নিষেধাজ্ঞা শুরুর পরপরই যেসব দেশ নিষেধাজ্ঞা দেয়নি তাদের কাছে বেশি হারে স্বর্ণ রপ্তানির চেষ্টা শুরু করেন রুশ উৎপাদনকারীরা। ক্রেতাদের প্রকৃত বাজারমূল্যের চেয়ে ১ শতাংশ কমে ক্রয়ের সুযোগ দেন তারা। এই কৌশল ব্যর্থ করার অনেক চেষ্টা করে অকার্যকর করতে পারেনি পশ্চিমা দেশগুলো।

অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের স্বর্ণবিষয়ক বিশেষজ্ঞ লুইস ম্যারেচাল মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের তখন বড় দুর্ভাবনা ছিল, রাশিয়া থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন ও তুরস্কে যাওয়া স্বর্ণ গলিয়ে নতুন চেহারায় বাইডেনের দেশেও পাঠানো হতে পারে!

তবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের গোল্ড বুলিয়ন কমিটি জানিয়েছে, তারা সব সময় এক রত্তি অবৈধ স্বর্ণও যেন আমদানি বা রপ্তানি না হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখে। 

এক বিবৃতিতে তারা আরও জানায়, ‘ইউএই খোলামেলাভাবে এবং সৎভাবে জাতিসংঘের ঘোষণা করা নিয়ম মেনে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে ব্যবসার এ ধারা অব্যাহত রাখবে।’

তবে তিন দেশে রপ্তানি অব্যাহত রাখতে পারলেও উৎপাদিত সব স্বর্ণ যে রাশিয়া বিক্রি করতে পারছে, ব্যাপারটা সেরকম নয়। ২০২২ সালে মোট ৩২৫ টন স্বর্ণ উৎপাদন করেছে রাশিয়া। সেখান থেকে এ পর্যন্ত রপ্তানি হয়েছে মাত্র ১১৬ দশমিক ৩ টন।

Link copied!