নিখোঁজ ইন্দোনেশীয় সাবমেরিন ‘কেআরআই নাঙ্গালা ৪০২’ এর আরোহীদের মৃত্যুর আশঙ্কা করছে উদ্ধারকারীরা। তাদের ধারণা, আরোহীদের কেউ আর হয়তো বেঁচে নেই। শনিবার (২৪ এপ্রিল) মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগনের পক্ষ থেকেও একই রকম আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে।
সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে ইন্দোনেশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন। পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, সাবমেরিনটি সাগরের যে অংশে ডুবেছে বলে ধারণা করা হয়েছিল, সেখানে তেল ভাসতে দেখা গেছে। তেলের ট্যাংক ছিদ্র হয়ে যাওয়ার ফলেই সেটি আর এগোতে পারেনি এবং আরোহীদের সবার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সাবমেরিনটির নাবিক ও তাদের পরিবারের সদ্যদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন পেন্টাগনের এই মুখপাত্র।
বুধবার ভোরে কেআরআই নাংগালা-৪০২ সাবমেরিনটি ৫৩ জন আরোহীসহ নিখোঁজ হয়। কর্মকর্তারা বলছেন, সাবমেরিনটি অক্ষত থাকলেও শনিবার সকালের মধ্যেই এর অক্সিজেন নিঃশেষ হয়ে যাবে।
জার্মানির তৈরি সাবমেরিনটি বালি উপকূল থেকে প্রায় ৬০ মাইল দূরের পানিতে নিখোঁজ হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাবমেরিনের সন্ধানে ছয়টি যুদ্ধজাহাজ, একটি হেলিকপ্টার এবং চারশ' ডুবুরি অভিযান চালাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া, ভারত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর এবং যুক্তরাষ্ট্র উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়ার জন্য বিশেষ জাহাজ ও বিমান পাঠিয়েছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, এটি ১৯৭০-এর দশকের শেষের দিকে তৈরি করা হয়েছিল। মাঝখানে মেরামতের জন্য এটিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। দুই বছর পর ২০১২ সালে এটির মেরামত কাজ শেষ হয়। কেআরআই নাংগালা-৪০২ ইন্দোনেশিয়ার পাঁচটি সাবমেরিনের মধ্যে একটি।
ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনী জানিয়েছে, সাবমেরিনটি একটি প্রশিক্ষণ মহড়ায় অংশ নিয়েছিল। কিন্তু এরপর থেকে সেটিকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
ফার্স্ট অ্যাডমিরাল জুলিয়াস উইদজোজনো ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, নৌবাহিনী সাবমেরিনটি খুঁজছে। এই অঞ্চলটি আমাদের পরিচিত, তবে এটি বেশ গভীর। কয়েকটি সূত্র বলেছে, সাবমেরিনটি গভীর পানিতে ডুব দেওয়ার পরই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো বলেছেন, ৫৩ জন আরোহীকে নিরাপদে উদ্ধার করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনী এরইমধ্যে কীভাবে সাবমেরিনটি ডুব দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর বিদ্যুৎ চলে গিয়েছিল এবং কেন জরুরি ব্যবস্থা কাজ করেনি তা জানতে তদন্ত শুরু করেছে।
নৌবাহিনীর প্রধান ইয়োদো মার্গোনো জানিয়েছেন, সাবমেরিনটি সবশেষ যে জায়গায় ছিল, সেখানে বিভিন্ন জায়গায় ছড়ানো তেল দেখা গেছে।
সাবমেরিনের আরোহীদের জন্য আশঙ্কায় সময় কাটছে স্বজনদের। একজন ক্রু সদস্যের স্ত্রী বের্দা আসমারা কামনা করছেন সাবমেরিনের সব আরোহী যেন বেঁচে থাকেন। তিনি জানান, সাবমেরিনে যাওয়ার আগে স্বামীর সঙ্গে শেষ ভিডিও কলে কথা হয়েছিল তার৷ তাকে স্বামী বলেছিলেন, তারা সমুদ্রে যাচ্ছেন, তিনি যেন দোয়া করেন।
সূত্র: রয়টার্স।