প্রিয়তমের বিদায়ে আজ বাঁধ মানছে না ‘লিলিবেট’ এর চোখের জল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

এপ্রিল ১৭, ২০২১, ০৬:০৫ পিএম

প্রিয়তমের বিদায়ে আজ বাঁধ মানছে না ‘লিলিবেট’ এর চোখের জল

ডিউক অব এডিনবরা প্রিন্স ফিলিপের শেষকৃত্য আজ শনিবার (১৭ এপ্রিল) ২০২১ অনুষ্ঠিত হবে উইন্ডসরে ব্রিটিশ স্থানীয় সময় বিকাল ৩টায় অনুষ্ঠিত হবে।

প্রিন্স ফিলিপের শেষকৃত্য রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে হবে না, ‘রাজপরিবারের আনুষ্ঠানিক রীতি অনুযায়ী রাজকীয় অন্ত্যেষ্টি’ সম্পন্ন হবে— এই তথ্য জানিয়ে বাকিংহাম প্রাসাদের মুখপাত্র বলেছেন, ‘ডিউকের শেষকৃত্য হবে তাঁর শেষ ইচ্ছা মেনে।’

 

এই অনুষ্ঠানে প্রিন্স ফিলিপের বর্ণময় দীর্ঘ জীবনের নানা দিক প্রতিফলিত হবে। মহামারির নিয়মবিধি মেনে প্রিন্স ফিলিপের শেষকৃত্যানুষ্ঠান সীমিত আকারে করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ এই অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন।

উইন্ডসর ক্যাসেলের নিজস্ব চ্যাপেল সেন্ট জর্জেস চ্যাপেলে ডিউক অফ এডিনবরার মরদেহ শায়িত রাখা হয়েছে। প্রাসাদ থেকে জানানো হয়েছে, প্রিন্স ফিলিপের কফিন ঢাকা আছে তাঁর ব্যক্তিগত পরিচিতি বহনকারী কাপড়ে ও পুষ্পস্তবকে।

প্রিন্স ফিলিপের মরদেহ জনসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শায়িত রাখা হবে না। প্রিন্স ফিলিপের কফিন উইন্ডসর ক্যাসেলের প্রবেশদ্বার থেকে গাড়িতে তোলা হবে।

প্রাসাদ থেকে বলা হয়েছে, প্রিন্স অব ওয়েলস, প্রিন্স চালর্সসহ রাজপরিবারের সদস্যেরা ডিউক অফ এডিনবরার কফিনের পেছনে পায়ে হেঁটে চ্যাপেলে যাবেন। তবে, রানি যাবেন আলাদাভাবে।

সেই কবে  কমলা রঙের বাক্সে লুকিয়ে জার্মানি থেকে ইংল্যান্ডে এসেছিলেন। সম্বল ছিল না কিছুই। গ্রিস এবং ডেনমার্কের প্রিন্স অ্যান্ড্রু ও লুইস আলেকজান্দার মাউন্টব্যাটেনের পুত্র ফিলিপ ১৯৪৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ রাজপরিবারের শরণাপন্ন হন।

ছেলেবেলায় পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন স্কটল্যান্ডের গর্ডনস্টন স্কুল থেকে শৃঙ্খলার পাঠ নিয়েছিলেন। পরে রয়্যাল নেভি কলেজে পড়াশোনা সেরে যোগ দেন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রয়্যাল নেভিতে নিজেকে প্রমাণ করেই তাঁর পরিবারের উপর থেকে নাৎসি দাগ মুছেছিলেন।

এরপর পেলেন ‘লিলিবেট’ এর সঙ্গ। এলিজাবেথ ব্রিটেনের রানির আসনে বসার আগে পর্যন্ত রয়্যাল নেভিকেই নেতৃত্ব দিয়েছেন কমান্ডার হিসেবে। বিয়ের আগের দিন, অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের ২০ নভেম্বর পেয়েছিলেন 'ডিউক অফ এডিনবরা' শিরোপা। গ্রিসের রাজপুত্র হয়ে উঠলেন ইংল্যান্ডের ফার্স্ট ম্যান।

ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায়, রাজা ষষ্ঠ জর্জ শিকার অভিযানের ফাঁকে তাঁকে বলেছিলেন, 'ইউ মাস্ট সাপোর্ট হার। বি হার শ্যাডো।' শ্বশুরমশাইয়ের উপদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে ৯৯ বছর বয়স পর্যন্ত আমৃত্যু ছায়াসঙ্গী হিসেবেই পাশে ছিলেন প্রিয় লিলিবেটের।

ক্ল্যারেন্স হাউজকে নতুন করে সাজানোর স্বপ্ন অধরা থাকলেও, তিনি বাকিংহামের 'রেনেসাঁ ম্যান'। তাঁর পরামর্শেই প্রথম ইংল্যান্ডের রানির রাজ্যাভিষেক বেতারে সম্প্রচারিত হয়। তাঁর জেদেই ১৯৫৭ সালে প্রথমবার বাকিংহাম প্যালেসের জামাতা পেয়েছিলেন 'প্রিন্স' উপাধি। এ ভাবেই ১৯৬০ সালে মাউন্টব্যাটেন পদবির সঙ্গে জুড়ল উইন্ডসর তকমা।

১৯৬১ সালে প্রথমবার মুখোমুখি সাক্ষাতে ধরা দিয়েছিলেন তিনি। সেই প্রথম ব্রিটিশ রাজপরিবারের কোনও সদস্য টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দেন। নানা ভাবে ইতিহাস গড়ার ক্ষেত্রে তিনি সমর্থন করেছেন স্ত্রী এবং 'কুইন এলিজাবেথ দ্য সেকেন্ড'কে। হয়ে উঠেছিলেন চার্লস, অ্যানি, অ্যান্ড্রু এবং এডওয়ার্ডের আদর্শ 'পাপা'।


পাশাপাশি নিরন্তর চালিয়ে গিয়েছেন বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজ। ১৯৮১ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল অবধি 'ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড'-এর চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। ছয় মিলিয়ন তরুণ তরুণীর শিক্ষার দায়িত্ব নিয়েছিলেন স্বেচ্ছায়। তাঁদের আদর্শ নেতা হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন ফিলিপ।

যদিও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে নিজে চরম দক্ষিণপন্থী ছিলেন। এর ফলে মাঝেমধ্যেই বিতর্কে জড়িয়ে পড়তেন।

তাঁর মৃত্যুর শোকে কালো চাদরে ঢাকা পড়েছে আপামর ব্রিটেন। আর বাকিংহামের কোনও নিভৃত কক্ষে প্রিয়তমের জন্য অশ্রুধারা বাঁধ মানছে না লিলিবেটের চোখেও।


 

Link copied!