মিয়ানমারে আবারও সেনা হত্যাযজ্ঞ উন্মোচিত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ডিসেম্বর ২০, ২০২১, ০৩:০৭ পিএম

মিয়ানমারে  আবারও সেনা হত্যাযজ্ঞ উন্মোচিত

চলতি বছরের গত জুলাই মাসে মিয়ানমার সেনাবাহিনী বেসামরিক মানুষের ওপর একাধিক হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। তাদের নির্যাতনে অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছেন। সেনা সদস্যরা গ্রামবাসীদের বেঁধে ফেলে নারীদের বাদ দিয়ে শুধু পুরুষদের হত্যা করে। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

বিবিসির ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ এবং ছবিতে নিহতদের বেশিরভাগকে প্রথমে নির্যাতন এবং পরে হত্যা করার দৃশ্য দেখা গেছে।

বিবিসি জানায়, চলতি বছরের  গত জুলাইতে সরকারবিরোধীদের শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলের সাগায়িং জেলার কেনি এলাকায় চারটি আলাদা ঘটনায় এসব হত্যাকাণ্ড ঘটে। এই অঞ্চলের ১১ জন ১১ জন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি এবং মোবাইল ফোন ফুটেজ ও ছবির সঙ্গে তাদের বক্তব্য মিলিয়ে দেখেছে। মিয়ানমারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্ত কাজ করা যুক্তরাজ্যভিত্তিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা মিয়ানমার উইটনেস এসব ভিডিও ও ছবি সংগ্রহ করেছে।  

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, সবচেয়ে বড় হত্যাকাণ্ডটি ঘটে ইন গ্রামে। ওই গ্রামে অন্তত ১৪ পুরুষকে নির্যাতন কিংবা পিটিয়ে হত্যা করার পর তাদের মরদেহ একটি জংলি এলাকায় ফেলে দেওয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বিবিসিকে জানিয়েছেন, এসব পুরুষদের দড়ি দিয়ে বাঁধার পর পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়।

হত্যাকাণ্ডে ভাই, ভাইয়ের ছেলে এবং জামাই হারানো এক নারী বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা দাঁড়িয়ে দেখতে পারছিলাম না, সেকারণে মাথা নিচু করে কাঁদছিলাম’। তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের মারতে নিষেধ করলেও তারা (সেনাবাহিনী) শোনেনি।  সেনাবাহিনী নারীদের জিজ্ঞেস করে, তোমাদের স্বামীরা এদের মধ্যে থাকলে শেষকৃত্য করে নিও।’

হত্যাকাণ্ড থেকে পালাতে সক্ষম হওয়া এক পুরুষ বলেন, “গ্রামবাসীকে হত্যার আগে সেনাবাহিনীর সদস্যরা কয়েক ঘণ্টা ধরে নির্যাতন করেছে। তাদের বেধে রেখে পাথর ও রাইফেলের বাট দিয়ে পেটানো হয়।” তিনি আরও বলেন, “ হত্যাযজ্ঞে অংশগ্রহণকারী সেনাদের বেশ কয়েকজন ১৭-১৮ বছরের তরুণ ছিলেন। বয়স্করাই বেশি ছিলেন। তাদের মধ্যে নারী সেনাও ছিলেন।”

জুলাই মাসের শেষ দিকে জে বিন ডুইন গ্রামে বিভিন্ন অঙ্গ বিচ্ছিন্ন ১২টি লাশ পাওয়া  যায়। পরে এসব মরদেহ একটি গণকবরে পুতে রাখা হয়। এদের মধ্যে এক শিশু এবং এক বিকলাঙ্গ মানুষের মরদেহও ছিল।

বিবিসি জানায়, হত্যাকাণ্ডের আগে কয়েক মাস ধরে ওই এলাকায় বেসামরিক মিলিশিয়া গ্রুপ এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে জোরালো সংঘর্ষ হয়।  জে বিন ডুইন গ্রামের কাছেও বড় ধরণের যুদ্ধ চলে। এসব হামলার সম্মিলিত শাস্তি দিতেই এসব হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে বলে দেখা যাচ্ছে।

তবে যেসব পুরুষদের হত্যা করা হয়েছে তাদের কেউই সেনাবাহিনীর ওপর হামলায় জড়িত ছিলেন না-এমন দাবি করেছে  নিহতদের পরিবারের সদস্যরা। ইন গ্রামে হত্যাযজ্ঞে ভাই হারানো এক নারী বলেন,“তিনি সেনাদের কাছে আকুতি জানিয়ে বলেছিলেন তার ভাই একটা গুলতিও চালাতে পারে না। এক সেনা তাকে জবাব দেয়, ‘কিছু শুনেত চাচ্ছি না। খুবই ক্লান্ত আমরা। কথা বললে  তোমাকেও মেরে ফেলবো।“

এবিষয়ে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের মুখপাত্র জাও মিন তুন বিবিসিকে বলেন, ‘এগুলো ঘটতে পারে। যখন তারা আমাদের শত্রু বিবেচনা করবে, তখন আমাদের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে।’ জাতিসংঘ বর্তমানে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন অভিযোগ তদন্ত করছে।

প্রসঙ্গত, এর আগে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে ২০১৭ সালে দেশটির সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গা বিরোধী অভিযানের সময় বেসামরিক মানুষ হত্যার ঘটনা উন্মোচন করে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স। 

 

Link copied!