লোকসভায় পাস হলো কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

নভেম্বর ২৯, ২০২১, ০৪:০৭ পিএম

লোকসভায় পাস হলো কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল

ভারতের পার্লামেন্টের লোকসভায় পাস হয়েছে বহুল আলোচিত-সমালোচিত কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল। শীতকালীন অধিবেশন শুরুর চার মিনিটের মধ্যেই কণ্ঠভোটে পাস হয় বিলটি।

এদিন  বিরোধীদের হই হট্টগোলের মধ্যেই কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল পাস হয়।  সকালে মুলতুবি হওয়ার পর ফের অধিবেশন শুরু হয় বেলা ১২টায়। ১২টা বেজে ৬ মিনিট নাগাদ টেবিলে আসে কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল। ১২টা বেজে ১০ মিনিটে পাস হয়ে যায় সেই বিল।

সোমবার অধিবেশনের শুরুতেই সরকারের তরফে স্পষ্ট করে হয়, কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল নিয়ে লোকসভায় আর কোনও আলোচনা চাইছে না সরকার। এই নিয়ে শুরু হয়ে যায় তুমুল হইচই। একদিকে বিরোধীদের দাবি ছিল আইন প্রত্যাহার করার আগে আলোচনার সময় বরাদ্দ হোক।

অন্যদিকে, সরকারের বক্তব্য, কৃষি আইন নিয়ে আগেই ক্ষমা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা আইন প্রত্যাহারের সম্মতিও দিয়েছে। তাই আলোচনার প্রয়োজন নেই। বিরোধীদের বক্তব্য ছিল সংসদে যে কোনও বিল পেশ হলে তা আলোচনার পরেই পাস করার নিয়ম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ধ্বনিভোটে পাস হয় কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল।

এদিন অধিবেশন শুরু পর থেকেই কৃষি বিল প্রত্যাহার ইস্যুতে উত্তাল হয়ে ওঠে সংসদ। বিরোধীদের হই হট্টোগোলের মধ্যে পড়ে বেলা ১২টা পর্যন্ত মুলতুবি হয়ে যায় সংসদের অধিবেশন। কৃষি আইন নিয়ে বিরোধীদের আলোচনা কার্যত এড়িয়ে গিয়েই পদক্ষেপ গ্রহণ করল কেন্দ্র। যদিও ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিয়ে এদিন কোনও আলোচনাই হয়নি সংসদে। যা এই কৃষক আন্দোলনের অন্যতম মূল বিষয় ছিল। বিল পেশ করেন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর।

এর আগেই আন্দোলনের জেরে মৃত কৃষকদের তালিকা তৈরি ও মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিতে লোকসভায় আলোচনা চেয়ে মুলতুবি প্রস্তাব আনে কংগ্রেস। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিচার করে বিজেপি ও কংগ্রেসের তরফে হুইপ জারি করে লোকসভা ও রাজ্যসভার সাংসদদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছিল।

ভারতের পার্লামেন্টবিষয়ক মন্ত্রী জানিয়েছেন, সোমবারই তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল রাজ্যসভায় পেশ করা হবে।

এদিকে দিল্লি সীমান্তে এখনও অবস্থান করছেন কৃষকরা।তাদের সাফ বক্তব্য, বিতর্কিত ওই আইন পার্লামেন্টে আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল না হওয়া পর্যন্ত তাদের অবস্থান কর্মসূচি থাকবে।

তিন কৃষি আইনে কী ছিল

ফারমার্স প্রোডিউস ট্রেড অ্যান্ড কমার্স (প্রোমোশন অ্যান্ড ফেসিলিটেশন) অ্যাক্ট, ২০২০, ফারমার্স (এমপাওয়ারমেন্ট অ্যান্ড প্রটেকশন) এগ্রিমেন্ট অব প্রাইস অ্যাসিওরান্স অ্যান্ড ফার্ম সার্ভিসেস অ্যাক্ট, ২০২০, এসেনশিয়াল কমোডিটিজ (সংশোধিত) বা অত্যাবশ্যক পণ্য আইন । 

সরকারের দাবি ছিল, এই কৃষি আইনে বড় ব্যবসায়ীদের মনোপলি বন্ধ হবে।  কৃষকরা যেখানে খুশি এবং যাকে খুশি শস্য বিক্রি করতে পারবেন। কৃষকরা বাজারের সর্বোচ্চ মূল্য পাবেন। এই আইনে আন্তঃরাজ্য বাণিজ্যের ওপর জোর দেওয়া হয়। পরিবহণ খরচ কমানোর প্রস্তাবও করা হয়। সর্বোপরি উদ্দেশ্য ছিল—কৃষকদের কৃষি-বাণিজ্য সংস্থা এবং খুচরা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত করা।

কৃষকদের অভিযোগ ছিল, এই আইন বাস্তবায়িত হলে সরকার ধীরে ধীরে ন্যূনতম সহায়তা মূল্যে বাজার থেকে ফসল কেনা বন্ধ করে দেবে। বাজার থেকে সরকারি নিয়ন্ত্রণ সরে যাবে। কৃষকদের পুঁজিপতিদের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। ব্যবসায়ীরা কৃষকদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করবে।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে তিনটি কৃষি বিলে সংশোধন করে আইনে পরিণত করে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এরপর থেকেই দিল্লিসহ দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে তুমুল প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু হয়। কৃষকদের অভিযোগ, নতুন আইনের ফলে লোকসানের মুখে পড়বেন কৃষকরা।

গত এক বছর ধরে বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছেন হাজার হাজার কৃষক। বেশ কয়েকটি কৃষক সংগঠন এমএসপি আইনের দাবি তুলেছে৷ এই আবহে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী লোকসভায় পাশ হল কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল। এরপর রাজ্যসভায় বিলটি পাশ হলে তা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে সইয়ের জন্য। তখনই আইনত বাতিল হবে বিতর্কিত তিন কৃষি আইন। তবে সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগেই এমএসপি নিয়ে চাপ দেওয়ার কৌশল অবলম্বন করেছে বিরোধীরা।

Link copied!